তোমরা যারা বোর্ডের পরীক্ষা দিয়েছ, তারা এবার স্কুলের গন্ডি ছাড়িয়ে আরও অনেক বড় জগতে প্রবেশ করবে। যেখানে আরও অনেক বেশি কম্পিটিশনের সম্মুখীন হতে হবে। এর জন্য অবশ্যই লড়াকু মন হওয়া দরকার। আর এই লড়াকু মনের অধিকারী হতে গেলে শারীরিক ভাবে স্ট্রং এবং ফিট হতেই হবে। এই উদ্দেশ্যে আমি তোমাদের কিছু ব্যায়াম উপস্থাপনা করছি। যেগুলো মোটামুটি ভাবে তিরিশ মিনিট করলে তোমরা অবশ্যই উপকৃত হবে।
ওয়ার্ম আপ এক্সারসাইজ
যে কোনও শারীরিক কসরৎ করার আগে ওয়ার্ম আপ অর্থাৎ শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রক্ত সঞ্চালন করা প্রয়োজন। তা না হলে ইনজুরি হওয়ার চান্স থাকে। তোমরা ভিডিওটা খুব ভাল করে দেখে প্রত্যেকটি আইটেম প্রথমে ১০ বার করে করো। তাড়াহুড়ো করার কোনও প্রয়োজন নেই। যেহেতু কোনও সরকৎ শুরু করার আগে মাসলগুলো আড়ষ্ট হয়ে থাকে, তাই শুরুতে ব্যায়ামগুলো আস্তে আস্তে করা প্রয়োজন।
পেটের ব্যায়াম
কোন ছেলে বা মেয়ে না চায়, যে তার পেটের গড়ন আকর্ষণীয় হয়ে উঠুক। অবশ্যই ছেলেদের সিক্স প্যাক্স অ্যাব!! ভিডিওটা খুব মন দিয়ে দেখো—
ক) ফ্লোর সিট আপ: এই প্রথম ব্যায়ামে দুটো হাত মাটিতে রেখে শ্বাস ছেড়ে পেটটাকে স্কুইজ করতে হবে, যাতে করে পেটের উপরে যথেষ্ট চাপ উপলব্ধি করতে পারো। বেশ কয়েকদিন প্র্যাকটিস করার পরে হাত দুটো ভিডিওর মতো মাথার পিছনে রেখে অভ্যাস করতে হবে। প্রথম প্রথম দশ বার করে করতে হবে, পরে কুড়ি বার করা যেতে পারে। এই ব্যায়ামের ফলে আপার অ্যাবস টোনিং হয়।
খ) লেগ ব্রাঞ্চ ১ অ্যান্ড ২: ভিডিওর মতো মাথা আর দুটো পা একসঙ্গে শ্বাস ছেডে় তুলতে হবে। এই ব্যায়ামে মিডল এবং লোয়ার অ্যাবস সুগঠিত হয়। প্রথম গিকে দুটো হাত মাটিতে সাপোর্ট দিতে পারো, পরবর্তীকালে দুটো হাত উঠিয়ে রাখবে। প্রথম দিকে দশবার ও পরে কুড়ি বার করা যেতে পারে। শরীর নামানোর সময় মাথা ও পা ফ্লোর থেকে ৪ ইঞ্চি উপরে থাকবে। শ্বাস ছেড়ে মাথা সমেত দেহের উপরের অংশ এবং দুটো পা ভাঁজ করে একসঙ্গে পেটের কাছে আনতে হবে। আবার শ্বাস নিয়ে ভিডিওর মতো দুটো পা ও মাথা ফ্লোর থেকে ৪ ইঞ্চি উপরে রাখতে হবে। এই ব্যায়ামটি প্রথম দিকে ১০ বার ও পরের দিকে ২০ বার করা যেতে পারে।
গ) লেগ রেস: ভিডিওর মতো দুটো পা ফ্লোর থেকে ৪ ইঞ্চি তুলতে হবে। এইবার শ্বাস নিয়ে দুটো পা আস্তে আস্তে করে ৪৫ ডিগ্রি থেকে ৬০ ডিগ্রি উপরে তুলতে হবে। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আস্তে করে দুটো পা ফ্লোর থেকে ৪ ইঞ্চি উপরে রাখতে হবে এবং তলপেটে চাপ অনুভব করতে হবে। লোয়ার অ্যাবস-এর জন্য এটা দারুণ। প্রথম দিকে ফ্লোরে দুটো পা একসঙ্গে ওঠাতে আর নামাতে হবে। কিছুদিন অভ্যাসের পর দুটো পা ফ্লোর থেকে ৪ ইঞ্চি উপরে রাখতে হবে।
উপরে উল্লিখিত যে পেটের ব্যায়ামের আলোচনা করলাম, যারা ব্যাকপেইনে ভোগে, তাদের জন্য এই ব্যায়ামগুলি একেবারেই নিষিদ্ধ। তোমরা আমার পরবর্তী ব্লগগুলোতে চোখ রাখলে, এই সব সমস্যার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
জেনারেল এক্সারসাইজ
ক) হাফ স্কোয়াট: ভিডিওর মতো কোমর সোজা রেখে অর্ধেক বসে আবার দাঁড়াতে হবে। দাঁড়ানোর সময় সামনের দিকে উরুর পেশিটা এক সেকেন্ডের জন্য কনট্রাকশন করতে হবে— অর্থাৎ উরুর পেশিগুলো ধরে থাকতে হবে ১ সেকেন্ডের জন্য। প্রথম দিকে ২ বার পরের দিকে ২০X২ অর্থাৎ ৪০ বার করা যেতে পারে। এই ব্যায়ামে উরুর মাংসপেশি সুগঠিত এবং টোনিং হয়।
খ) টিপ টো হিল ওয়াক: ভিডিওটা দেখে পায়ের দুটো টো-এর জেরে শরীরকে অল্প তুলতে হবে এবং অনুভব করতে হবে যে দুটো পায়ের ডিমে (কাফ মাসল) চাপ অনুভূত হচ্ছে কি না। এইবার আস্তে আস্তে দুটো হিল জমিতে টাচ করে দুটো টো মাটি থেকে উপরের দিকে যতটা সম্ভব তুলে হিলের উপরে দুটো পা টাইট করে দাঁড়াতে হবে। দুটো কাফ মাসল-এ স্ট্রেচ অনুভব করতে হবে। এই ব্যায়ামে কাফ মাসল সুগঠিত হয় এবং হাঁটু ও পায়ের অ্যাঙ্কলে জোর বাড়ে। এই ব্যায়ামটি ১৫X২ বার অর্থাৎ ৩০ বার করতে হবে।
গ) বটল রোয়িং: ভিডিওর মতো শ্বাস নিয়ে হাতে ১ লিটারের বোতল ধরে, ঠিক ভিডিওর মতো বগলের কিছুটা উপর অবধি তুলতে হবে আবার স্ট্রেচ করে ছাড়তে হবে যাতে করে পিঠের সাইডের মাসল সুগঠিত হয় এবং ভি শেপ হয়। এই ব্যায়ামটি ১০X২ অর্থাৎ ২০ বার করতে হবে।
ঘ) বোথ আর্ম বটল রেস: ভিডিওর মতো দুটো হাতে বোতল ধরে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে তুলতে হবে এবং কাঁধের সামনের দিকের পেশিতে চাপ অনুভবর করতে হবে। আবার শ্বাস নিতে নিতে নীচে নামাতে হবে। এইভাবে ১০X২ অর্থাৎ ২০ বার করতে হবে। এই ব্যায়ামে কাঁধের সামনের দিকের পেশি সুগঠিত হয়।
ঙ) বোথ আর্ম বটল সাইড ল্যাটারাল: ভিডিওর মতো শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে দুটো হাত সাইডে কাঁধ বরাবর তুলতে হবে এবং কাঁধের মাঝের মাংসপেশিতে চাপ অনুভব করতে হবে। আবার শ্বাস নিতে নিতে দুটো হাত নামাতে হবে। এইভাবে ১০X২ অর্থাৎ ২০ বার করতে হবে। এই ব্যায়ামে দুটো কাঁধ চওড়া হয়।
চ) স্টিক ব্যাক প্রেস: ভিডিওর মতো শ্বাস নিতে নিতে একটা লাঠি নিয়ে যতটা সম্ভব পিছন দিকে নামিয়ে পিঠের মাসলে চাপ অনুভব করতে হবে। শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে উপর দিকে তুলে স্ট্রেচ অনুভব করতে হবে। এই ব্যায়ামটি ১০X২ অর্থাৎ ২০ বার করতে হবে। এই ব্যায়ামে কাঁধের পিছন দিকের পেশি, পুরো পিঠের পেশি সুগঠিত হয় এবং কুঁজো ভাব কেটে গিয়ে শরীরটা টান টান হয়।
ছ) ফ্লোর ডিপস: ভিডিওর মতো দুটো হাতের মাঝে দেড় ফুট গ্যাপ রেখে কোমর আর পিঠ সোজা রেখে শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটো ভাঁজ করে নীচের দিকে নামতে হবে। আর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বুক এবং কাঁধের জোরে হাত দুটো সোজা করে উঠতে হবে। এইভাবে ১০X২ অর্থাৎ ২০ বার করতে হবে। এই ব্যায়ামে বুক, কাঁধ এবং হাতের মাংসপেশি সুগঠিত এবং টোনড হয়।
জ) স্ট্যান্ডিং বটল ফ্লাইং: ভিডিওর মতো দুটো বোতল সামনের দিকে সোজা করে ধরতে হবে। তার পর শ্বাস নিতে নিতে দুটো হাত সাইডে যতটা সম্ভব স্ট্রেচ করতে হবে। শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আবার দুটো হাত সামনের দিতে আনতে হবে এবং বুকের পেশিতে চাপ অনুভব করতে হবে। এইভাবে ১০X২ অর্থাৎ ২০ বার করতে হবে। এই ব্যায়ামে বুকের থলথলে ভাব কেটে গিয়ে বুক সুগঠিত, শেপিং এবং টোনিং হয়।
ঝ) ব্যাক পুশ আপ: ভিডিওর মতো কোনও চেয়ার বা টুল নিয়ে এই ব্যায়ামটি করতে হবে। দুটো হাত পিছন দিকে সোজা করে রাখতে হবে আর পা দুটোও একই ভাবে একসঙ্গে শ্বাস নিয়ে ভিডিওর মতো দুটো হাত ও পা নীচের দিকে নামাতে হবে। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ভিডিওর মতো স্টার্টিং পয়েন্টে ফিরে যেতে হবে। এবং দুটো হাতের পিছনের মাংসপেশিতে (ট্রাইসেপস মাসল) চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এই ব্যায়াম মেয়েদের জন্য বিশেষ উপকারী। এই ব্যায়ামে হাতের থলথলে ভাব একেবারে নির্মূল হয়ে গিয়ে শেপিং এবং টোনিং হয়। হাতের জোর বাড়াতেও সাহায্য করে।
ঞ) পুশ আপ: ভিডিওর মতো দুটো হাত একফুট মতো গ্যাপ নিয়ে পজিশন নিতে হবে। এবার বগলের সঙ্গে দুটো হাত চেপে শ্বাস নিয়ে কোমর ও পিঠ সোজা রেখে নীচে নামতে হবে। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাতের পিছনের পেশি এবং কাঁধের জোরে শরীরটাকে উপর দিকে তুলে ট্রাইসেপস মাসল টাইট করতে হবে। এইভাবে ১৫X২ অর্থাৎ ৩০ বার করতে হবে। এই ব্যায়ামটি ছেলেদের জন্য খুবই উপকারী ব্যায়াম কারণ এই ব্যায়ামে হাতের সাইজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতের ও কাঁধের জোর বাড়ে। ব্যাক পুশ আপস কিছুদিন ভাল ভাবে রপ্ত করার পরেই পুশ আপস করতে হবে।
ট) ডবল বটল কার্ল: ভিডিওর মতো দুহাতে দুটো বোতল নিয়ে যতটা সম্ভব ভাঁজ করতে হবে এবং হাতের সামনের দিকের মাংসপেশি অর্থাৎ বাইসেপস মাসলে চাপ অনুভব করতে হবে। এই ব্যায়াম হাতের বাইসেপস মাসল সুগঠিত করে হাতে সাইজ বাড়াতে সাহায্য করে। এই ব্যায়ামটি ১০X৩ অর্থাৎ ৩০ বার করতে হবে।
ঠ) অল্টারনেট বটল কার্ল: ভিডিওর মতো দুটো হাত অল্টারনেট ভাবে ভাঁজ করে বাইসেপসে চাপ অনুভব করতে হবে। এইভাবে ১০x৩ অর্থাৎ ৩০ বার করতে হবে। বাইসেপস-এর সাইজ বাড়ানোর এটি একটি উৎকৃষ্ট ব্যায়াম।
ড) রিস্ট ড্রিল: ১) ভিডিওর মতে একটা লাঠি নিয়ে হাঁটু থেকে দুটো কব্জি যতটা সম্ভব নীচের দিকে নামাতে হবে আবার উপর দিকে ভাঁজ করে কব্জি দুটোকে ঘোরাতে হবে। ২) ভিডিওর মতো কব্জি দুটোকে প্রথমে উপরের দিকে ঘোরাতে হবে তার পরে নীচের দিকে নামাতে হবে। এই ব্যায়ামে হাতের কব্জি চওড়া হয় এবং কব্জির উপরের মাংসপেশি অর্থাৎ ফোরআর্মস মাসল সুগঠিত হয়। এইভাবে দুটো ব্যায়ামই ১৫X২ অর্থাৎ ৩০ বার করে করতে হবে।
কুল ডাউন রিল্যাক্স
ব্যায়াম শুরু করার আগে যেমনি ওয়ার্ম আপ করা প্রয়োজন ঠিক তেমনি ব্যায়ামের পরে পুরো মাসল কুল ডাউন করে রিল্যাক্স করা প্রয়োজন। ভিডিওটা দেখে ৪ থেকে ৫ বার করে দুটো আইটেমই অভ্যাস করবে। তার পর চিৎ হয়ে শুয়ে সারা শরীরটাকে অবশ করার চেষ্টা করবে। এই অবস্থায় অন্ততপক্ষে ৫ মিনিট রিল্যাক্স করতে হবে।
এই ব্যায়ামগুলি যথাযথ অভ্যাস করলে একমাসের মধ্যেই তোমাদের ফিটনেস লেভেল অনেকটাই বাড়বে। এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। প্রথম প্রথম সবক’টি ব্যায়াম অল্পমাত্রায় শুরু করবে। তার পরে আস্তে আস্তে কাউন্টিং বাড়াবে। কোনও অসুবিধা হলে আমি তোমাদের পাশে আছি। আমার ফেসবুক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে (৯৮৩৬০৮৮৯৯৮) নিঃসঙ্কোচে যোগাযোগ করতে পারো।