‘মিলনতিথি’ ধারাবাহিকে যেদিন থেকে শুরু হয়েছে আদিত্য ও মীরার ট্র্যাক, সেদিন থেকেই দর্শকদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে একটাই প্রশ্ন— অহনা কি শেষমেশ আদিত্যকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেবে, নাকি সে ফিরে যাবে অর্জুনের কাছে? এখনও কিন্তু সেই কৌতূহল জিইয়ে রেখেছে ধারাবাহিক। ওদিকে বহ্নি হঠাৎ ভাল হয়ে গিয়েছে অথচ অর্জুন মনপ্রাণ দিয়ে অহনাকেই ফিরে পেতে চাইছে। আবার আদিত্য এবং তার পরিবারও মীরারূপী অহনাকে ছাড়তে রাজি নয়। এখনও ভারতীয় সমাজ দ্বিতীয় বিয়েকে ভাল চোখে দেখে না। আদিত্যর সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে কি মেনে নেবে বাংলা টেলিভিশনের দর্শক? অহনা চরিত্রের অভিনেত্রী ঊষসী রায় এই প্রসঙ্গে ঠিক কী ভাবেন?
সেকেন্ড ম্যারেজ বিষয়টা তুমি ঠিক কী চোখে দেখো?
ঊষসী: আমি তো একেবারেই খারাপ চোখে দেখি না। মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। একটা ভুল করেছি বলে সারাজীবনটা সেই ভুল নিয়ে থেকে যাব, এমনটা যেমন হতে পারে না, তাছাড়া সামাজিক কিছু বিষয়ও থেকে যায়। যেমন ‘মিলনতিথি’-তে দেখানো হয়েছে যে, স্কুলে ভরতির জন্য বাচ্চার বাবার পরিচয়টা দিতেই হবে। আমার মনে হয় এগুলো সোশ্যাল ট্যাবু। সেকেন্ড ম্যারেজ হোক বা একজন সিঙ্গল মাদার, তাঁকে তার সন্তান-সমেত অ্যাকসেপ্ট না করা, এগুলোর কোনও মানে হয় না।
‘মিলনতিথি’ ধারাবাহিকের একটি দৃশ্য। ছবি সৌজন্য: অ্যাক্রোপলিস
‘মিলনতিথি’-তে এই যে দ্বিতীয় বিয়ের প্রসঙ্গটা চলছে, তোমার কি মনে হয় সমাজে এর একটা পজিটিভ ইমপ্যাক্ট হবে?
ঊষসী: হ্যাঁ ডেফিনিটলি। এখন যখন দেখানো হচ্ছে যে, অর্জুনের প্রতি আর অহনার সেই আগের মতো ভালবাসা নেই। আমি খেয়াল করলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর মানুষ মেসেজ করছেন যে বিয়েটা যেন অর্জুনের সঙ্গেই হয়। আমি বুঝতে পারি না মানুষের কী ভাবনা। অর্জুন এমন একজন মানুষ, যাকে অহনা প্রথম থেকেই নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবেসে এসেছে অথচ অর্জুন তাকে ঠকিয়ে এসেছে প্রথমদিন থেকে। তার পরে অহনার উপর দিয়ে যা যা ঝড় বয়ে গিয়েছে, কখনওই অর্জুনকে অহনা পাশে পায়নি। বাবা-মাকে হারিয়ে সে যখন অর্জুনের কাছে এসেছে, তখনও সে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। এতটা লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করার পরে অহনা কেন, কোনও মেয়ের কি সেই মানুষটার কাছে ফিরে যাওয়া উচিত?
অর্জুন আর আদিত্য, এদের দু’জনের মধ্যে অহনার কাকে বেশি পছন্দ?
ঊষসী: আমি প্রথম থেকে বলেছিলাম, অহনা যে ক্যাটেগরির মেয়ে, ওর দ্বারা ঘর-সংসার হবে না। ও মৌনীগ্রামে থাকুক, বাচ্চাকাচ্চা পড়াক। অহনাকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট উওম্যান হিসেবেই ভাল লাগে। মাঝখানে তেমনটা কিন্তু হয়েও ছিল গল্পে। একটা মেয়ে মানেই কারও সঙ্গে তার বিয়ে দিলে তবে কমপ্লিট হবে তার চরিত্রটা, এটা আমার ঠিক ভাল লাগে না। আমার মনে হয়, অহনার জীবনে শুধুই ‘রাধাগোবিন্দ’ থাকলেই ভাল... হা হা হা... আর কেউ না।
ছবি: ঊষসীর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে
অহনাকে কি তুমি ভালবাসো?
ঊষসী: এই রে, খুব বিতর্কিত প্রশ্ন। সত্যি কথা বলতে, আমি কিছুটা অহনার মতোই। প্রথমদিকে চরিত্রটা যেমন ছিল আর কী, প্রচণ্ড সহজ-সরল, বোকা, বাবা-মাকে ভালবাসে, বন্ধুদের ভালবাসে এবং বন্ধুর কথা ভেবে এমন কিছু একটা করে ফেলে যাতে আলটিমেট ক্ষতিটা নিজের হয়। আমার কোনও ক্ষতি হয়নি কখনও কিন্তু আমি বন্ধুদের একটু বেশি প্রায়োরিটি দিয়েছি। তাই চরিত্রটার সঙ্গে প্রথম থেকেই খুব রিলেট করতে পারতাম। তবে সিরিয়ালে যেটা দেখায়, এতটা নিঃস্বার্থ ভাবে বন্ধুকে ভালবাসা, অতটা হয়তো আমি নই।
অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে ছিল প্রথম থেকে?
ঊষসী: হ্যাঁ, আসলে আমি থিয়েটার করি ছোট থেকে। প্রথমে ‘চেতলা কৃষ্টি সংসদ’-এ তার পরে ‘স্বপ্নসন্ধানী’-তে থিয়েটার করতাম। ওদের একটা প্রোডাকশন হতো ‘ভাল রাক্ষসের গল্প’। সেখানে ঋদ্ধি হতো ভাল রাক্ষস আর আমি হতাম বসন্তবৌরী পাখি। সেই থেকে স্টেজ অ্যাক্টিংয়ের উপরে একটা ভীষণ ভাললাগা জন্মায়। তার পরে ক্লাস নাইনে উঠে থিয়েটারটা বন্ধ হয়ে গেল। গ্র্যাজুয়েশনের পরে মাস্টার্স করব বলে যখন ঠিক করছি, তখনই হঠাৎ করে আমাকে অডিশনে ডাকল আর আমি সিলেক্টও হয়ে গেলাম। তার পর তো চলছে এই ‘মিলনতিথি’।
‘মিলনতিথি’ ধারাবাহিকের সেটে চিকু ও বহ্নির সঙ্গে। ছবি: ঊষসীর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে
‘মিলনতিথি’ ইউনিটে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে?
ঊষসী: এই রে, এটা খুব ডিফিকাল্ট একটা প্রশ্ন। দ্যাখো কাজের প্রয়োজনেই আমাদের ১৪-১৫ ঘণ্টা থাকতে হয় একসাথে। কখনও কখনও কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়, আবার কখনও নাও হতে পারে। ওইভাবে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ওখানে কেউই নেই। তবে একটা জিনিসে আমি খুব ব্লেসড যে ওখানে আমার কোঅ্যাক্টর-অ্যাক্ট্রেস যারা আছে, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক। অন্যান্য অনেক প্রজেক্টের কথাই তো শুনি যে ঠিকঠাক জেলিং হয় না, কাজ করতে সমস্যা হয়। কিন্তু, এখানে আমার সিনিয়ররা হোক বা সমবয়সিরা হোক, প্রত্যেকের সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক, তার জন্য আমি ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞ।
‘মিলনতিথি’-র সেটে ৫০০তম এপিসোডের সেলিব্রেশন, দেখুন ভিডিও নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে—