‘মিলনতিথি’ শেষ হতেই প্ল্যানটা করে নিয়েছিলেন চটপট। খুব অ্যাডভেঞ্চার ভালবাসেন অভিনেত্রী অলিভিয়া সরকার। তাই প্রথমেই মাথায় এসেছিল ভারতের মোস্ট হন্টেড প্লেসগুলির অন্যতম, ভূতুড়ে ভানগড় ফোর্টে যাওয়ার কথা। রাজস্থানের জয়পুর শহর থেকে গাড়িতে সময় লাগে মাত্র দেড় ঘণ্টা। গত ৩১ অগস্ট জয়পুরে পৌঁছন অলিভিয়া। দ্রষ্টব্য তালিকায় ভানগড়ের আগে ছিল নাহারগড় ফোর্ট। এই ফোর্ট সংলগ্ন বাউড়িতেই শ্যুটিং হয়েছিল ‘রং দে বাসন্তী’ ছবির।
নাহারগড় ফোর্টের সেই বাউড়ি। ছবি সৌজন্য: অলিভিয়া
ভানগড় যাওয়ার প্ল্যানটা ছিল গতকাল অর্থাৎ ৩ সেপ্টেম্বর। ওটাই মূল আকর্ষণ কি না, তাই শেষপাতে রেখেছিলেন বলা যায়। অষ্টাদশ শতকে তৈরি হয় এই দুর্গ। জমজমাট শহরও তৈরি হয় এই দুর্গকে কেন্দ্র করে। কিন্তু স্থানীয় মানুষদের কথায়, ভূতুড়ে উপদ্রবের কারণেই একটা সময় পর থেকে বসতি সরে যায় দূরে। ভানগড় দুর্গের ‘হন্টেড’ ট্যাগটি এতটাই ভয়ঙ্কর যে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া থেকেও নোটিস জারি করে সূর্যাস্তের পরে দুর্গের আশেপাশে কাউকে যেতে নিষেধ করা রয়েছে, সে পর্যটক হোক বা স্থানীয় মানুষ।
নাহারগড় ফোর্ট। ছবি সৌজন্য: অলিভিয়া
তাই অভিজ্ঞতাটা বেশ গা ছমছমে হবে বলে গতকাল সকাল থেকেই এক্সাইটেড ছিলেন টেলি-নায়িকা। কিন্তু তার পরে যেটা ঘটল, সেটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। ওঁর নিজের মুখ থেকেই শোনা যাক, ‘‘থুব এক্সাইটমেন্ট নিয়েল গেছিলাম যে কী আছে যে এটা হন্টেড। যদিও সানসেটের পরে অ্যালাউ করে না কিন্তু কিছু থাকলে তার একটু হলেও ফিল তো পাব, ওই আশায় যাওয়া। কিন্তু এত ডিজাপয়েন্টিং... একটা হন্টেড প্লেসে হাজার হাজার লোক। ফোর্টের ঢোকার একটু আগেই একটা রিসর্ট... মানে আমার বক্তব্য হল যদি সত্যিই ভূতের উপদ্রব থাকে তবে সেখানে লোকে থাকে কী করে। ওখানে পৌঁছে মনে হল যেন পিকনিক স্পটে এসেছি। হাজার হাজার লোক, দে আর হ্যাভিং ফান! ফোর্টের ভিতরে চারিদিকে জলের বোতল ছড়ানো, লোকে নোংরা করে রেখেছে ভিতরটা... যেখানে এত বড় একটা ঐতিহাসিক জায়গা!’’
ভানগড় ফোর্টের সামনে। ছবি: অলিভিয়ার ফেসবুক পেজ থেকে
তবে কি ভূতের দেখা বা তার উপস্থিতি একটুও টের পাননি নায়িকা? সেটা কিন্তু নয়, হাজার হাজার লোক ভিড় করলেও একটা গা ছমছমে ব্যাপার ঘটেছে অলিভিয়ার সঙ্গে। সেটাও শেয়ার করেছেন তিনি কিন্তু আগে একটু দেখে নেওয়া যাক রানি রত্নাবতীর গল্প। কেউ কেউ আবার রাজকুমারীও বলে থাকে। এই অপূর্ব সুন্দরীর বাস ছিল ভানগড় দুর্গ। শোনা যায় স্থানীয় কোনও কালো জাদুকর তার প্রেমে পড়ে। বশীকরণ করতে মন্ত্রপূঃত প্রসাধনী পাঠায় সে রত্নাবতীর কাছে। কিন্তু বুদ্ধিমতী রত্নাবতী সেটা বুঝতে পেরে প্রসাধনীটি ফেলে দেয় একটি পাথরের গায়ে আর সেই পাথর চাপা পড়েই মারা যায় জাদুকর। মারা যেতে যেতে সে অভিশাপ দিয়ে যায় যে এই গোটা এলাকার কোনও মানুষ কোনওদিন শান্তিতে বাঁচতে পারবে না।
প্রচলিত ধারণা, সেই কারণেই আজ অভিশপ্ত ভানগড় ফোর্ট। সেই রানি রত্নাবতীর মহলে যেতেই যেন গা ছমছম করে উঠেছিল অলিভিয়ার, ‘‘অদ্ভুত একটা ঠান্ডা ফিল হল আর খুব বিকট একটা গন্ধ, আমি জানি না ওটা কী ছিল!’’ শেষমেশ ভূতের ফোর্টে সামান্য হলেও ভূতুড়ে ফিল তো এল। আরও একটি ঘটনা ঘটে যার কোনও ব্যাখ্যা নেই সেভাবে এবং আদৌ কোনও ভূতুড়ে যোগসূ্ত্র আছে কি না, সেটাও ঠিক বলা যাচ্ছে না। কিন্তু সেন্স অফ হিউমর যাদের ভাল, তারা বিষয়টাতে মজা পাবেন।
অলিভিয়া জানালেন, ‘‘আমি আর একটু অ্যাডভেঞ্চারের জন্য একটা প্ল্যান করলাম। ভানগড় ফোর্টের পাশে একটা পাহাড় আছে যেখানে একটা ছোট মন্দির রয়েছে। গল্পে শোনা গেছে যে ওখানে ওই কালো জাদুকর থাকত। আমি ওই পাহাড়ে ওঠা শুরু করলাম যেটা খুব কঠিন একটা কাজ কারণ খুব আলগা পাথর রয়েছে। আমি দু’বার স্লিপ করেছি। অনেকটা এগিয়েও রাস্তার কারণেই একেবারে উপর পর্যন্ত উঠতে পারলাম না। হয়তো ওই জাদুকর চায়নি আমরা যাই, ওর পর্দাফাঁস হয়ে যেত। ভূত আছে কি না অ্যাম নট সিওর কারণ শুনেছি ওখানে একটা টানেল রয়েছে যেখানে জল পাস হয় আর সেই গন্ধটাও নাকি খুব রহস্যজনক। কিন্তু এখানকার স্থানীয় লোকজনদের থেকে খবর পেলাম, ওখানে রাতে অনেক রকম আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। তাই রাতে যাওয়াটা ডিউ রইল!’’
ভানগড় ফোর্টের পাশের সেই পাহাড়ে ওঠার সময় তোলা। ছবি সৌজন্য: অলিভিয়া