ইন্ডাস্ট্রিতে ১৪ বছর হয়ে গেল আপনার। সাফল্য আর ব্যর্থতার মানেটা কি এখন পাল্টে গিয়েছে?
অনেকটা। প্রথমদিকে বাচ্চারা যেমন লজেন্স পেলে খুশি হয়, কিংবা মার খেলে কাঁদে— সাফল্য এলে বা না-এলে আমারও প্রতিক্রিয়া সেরকম হতো। কোনও ছবি ভাল করলে ভাবতাম, ইয়ে! পার্টি অল নাইট! এখন বরং অনেক ব্যালান্সড ভাবনাচিন্তা করতে পারি (হাসি)। কেরিয়ারের প্রথমদিকে অবশ্য আমার ছবি খুব একটা ফ্লপ হতো না। কিন্তু দু’বছর আগে ‘ফিতুর’ আর তারপর ‘বার বার দেখো’ আমাকে একটু হতাশ করে দিয়েছিল বটে। তারপর ভেবে দেখলাম, এগুলো নিজেদের হাতে নেই। দর্শক প্রথম থেকে আমাকে খুব সাপোর্ট করেছেন, ভালবেসেছেন। ব্যাক টু ব্যাক হিট দিতে পেরেছি সেই জন্য। কিন্তু এটা একবার না একবার তো ভাঙতই। সবার ক্ষেত্রেই ভেঙেছে। ল অফ নেচার! ভাঙলে তখন খারাপ লেগেছে। কিন্তু ওইটুকুই...।
আপনার ছবি ফ্লপ করলেও আপনি কিন্তু স্টারের স্টেটাস দিব্যি ধরে রেখেছেন। এর জন্য কি আরও পরিশ্রম করছেন?
আমি যতটা পরিশ্রম করি একেকটা চরিত্রের জন্য, তার বেশি আর করাও যায় না কিন্তু! মানে, মাঝে মাঝে আমাকে নিজেকে মনে করাতে হয়, যে এতটা করার দরকার নেই। একটা মিটিং ক্যানসেল করো। আই ওয়ার্ক মাইসেল্ফ টু হার্ড। তবে আমার মধ্যে অসীম কৃতজ্ঞতাবোধ রয়েছে। এই ইন্ডাস্ট্রির প্রতি। এখনও কত ট্যালেন্টেড অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। কত বড় ব়ড় পরিচালকরা কাজ করতে চাইছেন আমার সঙ্গে। আসলে নিজের ভ্যালু তো খালি সাফল্য আর ব্যর্থতার উপর নির্ভর করে না। কাজটাই আসল।
‘জগ্গা জাসুস’ অ্যাডভেঞ্চার মিউজিক্যাল। মিউজিক্যাল কি আপনার পছন্দের জঁর?
বলতে পারেন। ছোটবেলায় ‘সাউন্ড অফ মিউজিক’, ‘মেরি পপিন্স’, ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’ বা ‘মাই ফেয়ার লেডি’ আমার খুব পছন্দের ছবি ছিল। ‘লেডি অ্যান্ড দ্য ট্র্যাম্প’এর মতো কার্টুনও দেখতাম। আরেকটা ছবিও দেখেছি রিসেন্টলি...‘অ্যাক্রস দি ইউনিভার্স’। এই ছবিটা অবশ্য বক্স অফিসে খুব ভাল করেনি। বাট দি আইডিয়া বিহাইন্ড দিজ ফিল্মস মুভ মি আ লট। দাদা (অনুরাগ বসু) যখন এই ছবির আইডিয়াটা নিয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন, আমার মাথা ঘুরে গিয়েছিল! একদিকে মিউজিক্যালের রোম্যান্স, আরেকদিকে অ্যাডভেঞ্চারের ইউনিভার্সাল অ্যাপিল— দু’টোকে কী দারুণ মিলিয়েছিলেন উনি। প্রথম থেকেই জানতাম, এই ছবিটা বানাতে সময় লাগবে। ছবিটা এই লেভেলে বানাতে গেলে হিউজ এফর্ট দিতে হবে।
রণবীর কপূর একবার ভেবেছিলেন, ছবির প্রোডাকশন বন্ধ করে দেবেন। আপনারও কি এরকম কিছু মনে হয়েছিল যখন অনেকদিন পরেও ছবি রিলিজ হচ্ছিল না?
গত বছর জানুয়ারিতে একবার মনে হয়েছিল, যে ছবিটা সত্যিই বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা খুবই অল্প সময়ের জন্য। তার আগে আর পরে আমার স্থির বিশ্বাস ছিল, যে ছবিটা হবে। এবং আমরা কাজটা শেষ করতে পারব।
ওই সময়টা আপনার আর রণবীরের ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক ঝড় যাচ্ছিল। তখন একবার বলেছিলেন, কাজে নিজের একশো শতাংশ দিতে পারছিলেন না। গত বছর জানুয়ারির পর কি সেই ফেজটা কেটে গিয়েছিল?
আমাদের শি়ডিউলে জানুয়ারির আগে আর জানুয়ারির পরে, এরকম কোনও ভাগ ছিল না কিন্তু। ছবির বেশির ভাগটাই শ্যুট হল গত দেড় বছরে। আসল কথা হল, আমি বা রণবীর দু’জনেই ছবিটার ব্যাপারে খুব প্যাশনেট ছিলাম। ‘জগ্গা...’র ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ কমে যাওয়ার কোনও ব্যাপারই ছিল না। কারণ দাদা যে ম্যাজিক বানাতে চলেছেন, সেটা আমরা খুব ভাল বুঝতে পেরেছিলাম। আর আমার কথা যদি বলেন, ওই সময়টায় আমি নিজেকে ভীষণভাবে মোটিভেট করেছিলাম, যে এটাই আমার কাজ। একেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত আমার। ইট’স মাই ফিল্ম, ইট’স মাই লাইভলিহুড। তাছাড়া ওই সময় হাতে অন্য কোনও ছবিও ছিল না। নিজের কাছে খুব পরিষ্কার ছিলাম, যে আমাকে খুব তাড়াতাড়ি শান্তিপূর্ণ একটা মেন্টাল সেট-আপে ফিরে যেতে হবে। অ্যান্ড নাথিং কুড স্টপ মি।
আপনার সহ-অভিনেতারা সব সময় বলেন, যে সেট’এ আপনার থেকেই সবাই পজিটিভ এনার্জি পান। ব্রেকআপের পর অফ-ক্যামেরায় কতটা পজিটিভ থাকতে পারতেন?
দেখুন, তখন যা হয়েছিল, যে মানসিক অবস্থায় ছিলাম, সেটা শুধু আমিই জানি। আর চাই, আমার মধ্যেই থাকুক সেটা। আমি তো দাদার সঙ্গেও কথা বলিনি ব্যাপারটা নিয়ে। সেট’এ অন্য কারও কথা তো ছেড়েই দিন! আমার মনে হয় না, ওই সময়টা নিয়ে আমি কথা বলতে চাইব কোনওদিন। এখনও অন্তত সেই সময়টা আসেনি।
কিন্তু রণবীর তো নিজের ভার্সনটা বলেছেন। আপনারটাই কেউ জানে না। নিজেকে প্রতারিত মনে হয় আপনার?
গত বছর একটাই জিনিস শিখেছি। অন্য কারও উপর কখনওই নিজের ধ্যানধারণা চাপানো উচিত না। সেই অন্য কেউ আমার মা হতে পারে, বোন হতে পারে, বর কিংবা বয়ফ্রেন্ড হতে পারে। কিন্তু যে-ই হোক, তারা প্রত্যেকেই আলাদা একেকজন মানুষ। তাদের চাওয়াগুলো সব আলাদা। আমার মনে হতেই পারে, সেই মানুষটা যা করছে সেটা ভুল। কিন্তু শুধু আমার মনে হচ্ছে বলেই, সে যা করতে চায় সেটা তাকে করতে দেব না— এটা ভ্রান্ত ধারণা। আমার সেটা পছন্দ না-ই হতে পারে। কষ্ট হতে পারে। কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে বলে অন্য মানুষটা তার জীবন বাঁচবে না, এটা হতে পারে না। একজন ইন্ডিভিজুয়ালের কখনওই অন্য ইন্ডিভিজুয়ালের ইচ্ছেগুলোকে কন্ট্রোল করা উচিত নয়।
আপনি বলেছিলেন, রণবীরের সঙ্গে আর কাজ করবেন না। ‘জগ্গা...’ দেখে তো মনে হচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজি তৈরি হবে। আপনি না করলে কী করে হবে?
অনেস্টলি বলছি, এই ব্যাপারটা নিয়ে জাস্ট ভাবছি না। কেউই না। আমি লিখেও দিতে পারি আপনি বললে! আমার সামনে বেশ কয়েকটা ছবি রয়েছে। রণবীরেরও। এক্ষুনি ফ্র্যাঞ্চাইজির প্ল্যান কারও নেই।
কিন্তু প্রথমে তো শোনা গিয়েছিল, তিনটে পার্ট নিয়ে একটা গোটা সিরিজ হবে। সেকেন্ড পার্ট’টা নাকি এই ছবিটা যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে শুরু হবে। তাহলে?
অনেক ফিল্মই তো এভাবে ডিজাইন হয়। এটাও তাই। কিন্তু প্রথমে সকলেই দেখে নিতে চাই, এই ছবিটা কেমন ফল করে। দাদা তো ভেবেই ছিলেন যে থ্রি পার্ট সিরিজ হবে। কিন্তু এখন অপেক্ষাই ভরসা।