রিহানা
জুনের শেষদিকে ডাবলিনে কনসার্ট ছিল রিহানার। তাঁর ‘অ্যান্টি ট্যুর’এরই অংশ সেটা। টিকিট তো বিক্রি হয়েছে হুড়মুড়িয়ে। আসনও সব ভর্তি! কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে রিহানার আর দেখা নেই! উদ্যোক্তাদের মাথায় হাত। চলল ফোনের পর ফোন। শেষমেশ ১টি ঘণ্টা দেরি করে রিহানা পৌঁছলেন কনসার্টে। এসেই সোজা স্টেজে। বেশ হাসছিলেন, গল্প করছিলেন। কনসার্ট শুরুতেই হুল্লোড় পড়ে গেল রীতিমতো। তারপর রিহানা গাইলেন ‘লাভ দ্য ওয়ে ইউ লাই’...কিন্তু শুরু করে কিছুক্ষণের মধ্যেই নিঝুম তিনি। কেন? প্রিয় শিল্পী মাথা নিচু করে আছেন দেখে ভক্তেরাও দুশ্চিন্তায়। ভাঙা-ভাঙা গলায় আরেকবার গাওয়ার চেষ্টাও যেন করলেন রিহানা। কিন্তু পারলেন না। চোখ বেয়ে জল উপচে পড়ছে। খানিক পরেই অবশ্য সামলে নিলেন নিজেকে। ‘শো-গার্ল’ তো তিনি আদ্যন্ত! হয়তো পুরনো কথা মনে প়়ড়েছিল। কিংবা নতুন ক্ষতই কোনও...। কিন্তু ভক্তদের উদ্বেগ কাটতে চাইলে তো! অনেকেই রিহানাকে কাঁদতে দেখে নিজেদের সামলাতে পারেননি— কেঁদে ফেলেছেন। অনেকে আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখতে লাগলেন চুটিয়ে— ‘কী হয়েছে রিহানার? ওঁকে আলিঙ্গন।’ কিংবা ‘রিহানা চিন্তা কোরো না, আমরা সঙ্গে আছি’। ‘কেন যে এত দেরি করে এল, আর কেনই বা কাঁদল— কেউ জানো’? রিহানাও অবশ্য বিষয়টা নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেননি। শুধু ইনস্টাগ্রামে ছবি দিয়ে এক লাইন লিখেছেন— ‘দারুণ রাত! এত আবেগপূর্ণ শো অনেকদিন করিনি’।
সেলিন ডিওন
পর পর দু’বার। একই কনসার্টে। সেলিন ডিওনের স্বামী এবং ম্যানেজার রেনে অ্যাঞ্জেলিন এ বছরেরই জানুয়ারি মাসে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ফেব্রুয়ারিতে লাস ভেগাসের একটি কনসার্টে তাঁকেই ট্রিবিউট জানাতে গিয়ে প্রথমে কেঁদে ফেলেন সেলিন। তারপর শুরু করেন তাঁর সেই বিখ্যাত গান— ‘অল বাই মাইসেল্ফ’। গাইতে গাইতেই গলা বুজে আসে তাঁর। আবার হাজার দর্শক-শ্রোতা এবং লাইভ ক্যামেরার সামনে ভেঙে পড়লেন তিনি। রেনে মারা যাওয়ার পর সেটাই ছিল তাঁর প্রথম কনসার্ট। গানটা শুরু হওয়ার আগে পরিবার-সহ সেলিনের একটি ভিডিও মন্তাজও দেখানো হয় স্টেজে। ৪৭ বছরের সেলিন স্বামীর সঙ্গে কাটানো কয়েকটি বিশেষ মুহূর্তের কথাও বলেন সেই কনসার্টে— ‘আমার গোটা জীবন জুড়ে এতগুলো পারফরম্যান্সের প্রতিটায় একজন মানুষের দিকেই বার বার চোখ চলে যেত। রেনে। ও সামনে বসে থাকত। আর আমার মনে হতো, এটাই বুঝি জীবন। এভাবেই কেটে যাবে আমাদের...’। স্বাভাবিকভাবেই এই তীব্র আবেগের সামনে দর্শকের পক্ষেও চোখের জল ধরে রাখা মুশকিল! সেলিন এ-ও বলেন, ‘রেনে এমন একজন মানুষ ছিল, যার জন্য আমার কেরিয়ারটা সম্ভব হয়েছে। অথচ সেই মানুষটাই এমন করত, যেন প্রতিবারই আমরা প্রথম ডেট’এ বেরোচ্ছি!’
জাস্টিন বিবার
ইনি যে কখন কী করেন এবং কেন— নিজেও বোধকরি জানেন না। আপাতত জাস্টিন বিবার সম্পর্ক পাতিয়েছেন ঈশ্বরের সঙ্গে! নিজের নতুন অ্যালবাম ‘পারপাস’এর একটি গান গাইতে গাইতে ফিলাডেলফিয়ার একটা কনসার্টে কেঁদে ভাসালেন বিবার! দুঃখটা অনেকটা এই রকম— এত নামযশ, ভক্ত থাকা সত্ত্বেও কী পেলেন তিনি জীবনে (বয়স যদিও মোটে ২২)! তিনি তো নিজেই একজন ভক্ত— ঈশ্বরের। ঈশ্বর কি তাঁর ডাক শুনছেন? বিবারের ভক্তরা অবশ্য মাটির মানুষই। তাঁরা দিব্যি শো’য়ের মাঝেই তারকাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন— ‘ভগবান নেই তো কী, আমরা আছি তো’— এইসব বলে। গত বছর এমটিভি ভিএমএ অ্যাওয়ার্ডের শো’এও কেঁদে ফেলেছিলেন বিবার। বক্তব্য, গানের মাঝে আবেগে ভেসে গিয়েছিলেন। যদিও লোকে বলে, সেলেনা গোমেজের সঙ্গে বিচ্ছেদ এবং তাঁর জন্য মন কেমনেরই একটা প্রকাশ ছিল সেই কান্না!
সেলেনা গোমেজ
গত মে মাসে স্টেজে কাঁদলেন সেলেনা গোমেজও। তাঁর কারণটাও অবশ্য ‘পাবলিক’! মূলত ভক্তদের জন্যেই কেঁদে ফেলেছিলেন সেলেনা। মন্ট্রিয়েলে তাঁর একটা কনসার্ট ছিল। সেখানে ‘হু সেজ’ গানটা গাইতে গাইতে মাঝপথে থেমে যান সেলেনা। ঠিক যেখানে তিনি থামলেন, সেখান থেকে ভক্তরাও অমনি পাকড়ে নিলেন গানের বাকি অংশ! তাঁর গান যে ভক্তরা এভাবে মনে রেখেছেন এবং কোনও লিরিক সামনে না থাকা সত্ত্বেও গেয়ে দিলেন অনায়াসে— এই ব্যাপারটাই সেলেনার মনে ভরে দিয়েছিল আবেগ। তিনিও নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে কেঁদে ফেলেছিলেন সেই দিন। পরে বলেছিলেন, ‘‘এত ভালবাসা দেখে কী যে বলব, ঠিক বুঝতে পারছি না। ধন্যবাদ ছা়ড়া আমি আর কী-ই বা বলতে পারি। আমি এত নগণ্য অথচ...!’’ নিজেকে নগণ্য বলছেন ঠিকই, কিন্তু সেলেনাও জানেন তাঁর জন্য ভক্তরা অশ্রুপাত তো বটেই, নিজ শরীরের রক্তপাতও ঘটাতে প্রস্তুত!
ম্যাডোনা
নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে এ বছরেরই মার্চে একটা কনসার্ট ছিল ম্যাডোনার। সে সময় প্রাক্তন স্বামী গাই রিচির সঙ্গে ছেলে রকো’র হেফাজত নিয়ে প্রবল ঝামেলা চলছে ম্যাডোনার। প্রায় হারতেই বসেছেন তিনি। তার উপর রকো’ও বলছে, সে মায়ের সঙ্গে থাকতে চায় না! ম্যাডোনার প্রায় ভারসাম্য হারানোর দশা। তার মধ্যেও কনসার্ট করতে রাজি হয়েছিলেন পপ-সম্রাজ্ঞী। কিন্তু মনের রেডারটাই যে ঠিক নেই! ছেলেকে উৎসর্গ করলেন একটি গান— ‘লা ভিয়ে এন রোজ’। গাওয়ার আগে বললেন, ‘‘পৃথিবীতে একজন মায়ের তার সন্তানের প্রতি ভালবাসার চেয়ে আর কোনও অনুভূতিই যথেষ্ট জোরাল নয়।’’ আবেগ প্রবেশ করল পারফরম্যান্সেও। কেঁদে ফেললেন ম্যা়ডোনা। সেই সময় গাইয়ের সঙ্গে লন্ডনে রয়েছে রকো। হেফাজত নিয়ে লড়াইয়ের সিদ্ধান্তে বিচারক ঘোষণা করেছিলেন, ম্যাডোনা চাইলে রকো’কে দেখতে যেতে পারেন। কিন্তু ১৫ বছরের ছেলেকে যেন কেউ জোর না করে মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য। শেষটায় ভক্তরাই মনের জোর জুগিয়েছিলেন ম্যাডোনাকে। সত্যিই, তাঁরা না থাকলে এঁরা যে কী করতেন!
নিজের বয়ানে
রূপম
আমি তো সব সময়ই ইমোশনাল থাকি। প্রায় প্রত্যেকদিনই কেঁদে ফেলি। তবে শো বন্ধ করতে হয়নি। হাউহাউ করে কান্নাও কেরিয়ারে আসেনি। রেগে গিয়ে প্রচুর গালাগালি দেওয়া অবশ্য রয়েছে! অভিনেতাদের কাজই হচ্ছে কেঁদে ফেলা। তাঁদের তো সেই ইমোশনটা তৈরি করতে হয় নিজের মধ্যে। আমি যখন গান গাইছি, নিজের লেখা চরিত্রে অভিনয় করছি। চরিত্রটা তো সেই মুহূর্তে বাস্তব নয়। সেটা অতীত। সেই চরিত্রে যখন ফিরে যেতে হচ্ছে, চোখে জল আসবেই। গানের কথা যদি চোখের জলের কথা বলে, তাহলে বাস্তবে তা আসবে না কেন? যদি না আসে, তাহলে তো বলতে হবে গায়ক মন দিয়ে গাইছেন না। যে কোনও সত্যিকারের পারফর্মারই কাঁদেন। না কাঁদলে তাঁদের প্লাস্টিক পারফর্মার মনে হতে পারে!
সুরজিৎ
মা চলে যাওয়ার পর ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম স্টেজে গাইতে গাইতে। আগের বছর একটা অনুষ্ঠানে। লোকে অবশ্য বুঝতে পারেনি। আমার গলা চোক্ড হয়ে যাওয়ার জোগাড়! অনেক কাণ্ড করে লুকিয়ে-চুরিয়ে গেয়েছি। ‘কান্দে শুধু মন’ গানটার সময়। এই তো সেদিন দূরদর্শনের একটা অনুষ্ঠানে হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, চোখের কোণায় জল। অন্য চ্যানেল হলে ধরা পড়ে যেত! মনে আছে, ‘ভ্রমর কইও গিয়া’ গাইতে গিয়ে রেকর্ডিংয়ে খুব কষ্ট হয়েছিল।
নচিকেতা
আরে, আমরাও তো মানুষ! জল আসবে না কেন চোখে? বহুবার এসেছে। কিছু গান যখন প্রথম লিখে, তৈরি করে গাইতে গিয়েছি এ রকম হয়েছে। কখনও আবার অনেক চেনা গানও অন্য রকম লাগে। হয়তো কোনওদিন গাইতে গিয়ে মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। তখন হয়তো ‘একা একা পথ চলা’ গাইছি। ‘এ মন ব্যাকুল যখন তখন’ গানটার কথা জানেন বোধহয়। মা মারা যাওয়ার পরের দিন লিখেছিলাম। স্বাভাবিক, এই গানটা গাইলে অন্য রকম একটা ব্যাপার হবেই। খুব ইমোশনাল হয়ে পড়ি।