• অনেকদিন পর কলকাতা এলেন। আইটেনারিতে প্রচার ছাড়া আর কী রয়েছে?
অনেক কাজ থাকে। দিদার সঙ্গে দেখা করা থেকে শুরু করে বাড়ির জন্য বড়ি কেনা। আসার আগে কেনাকাটার একটা লম্বা তালিকা আমার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাজা মশলা, রাঁধুনি মশলা আর বেশ কী কী যেন রয়েছে সেটায়। তা ছাড়াও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার থাকে। এবার যেমন খুব পুরনো এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করব। প্রায় ২০ বছর পর!
• ‘সোনি এনটারটেনমেন্ট’এর ‘সুপার ডান্সার’এর বিচারকের আসনে বসছেন। বাচ্চাদের বিচার করা তো বেশ কঠিন...।
এটা ঠিকই বলেছেন। এর আগেও তো আমি বাচ্চাদের শো জাজ করেছি। শুরুতে আমি সকলের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, যে এটা আসলে একটা খেলা। এখান থেকে চলে যেতে হলেও সেটা এমন কোনও ব্যাপার নয়। কিন্তু এলিমিনেশনের সময় গোটা পরিস্থিতিটা এমন হয়ে যায় যে বাচ্চারা দুঃখ পায়ই। সেই জায়গায় কোনও রকম জ্ঞান না দিয়ে, ওদের বুঝিয়ে বলাটাই খুব জরুরি হয়ে পড়ে।
• বিচার করার সময় কোন দিকগুলোয় বেশি গুরুত্ব দেবেন?
রিয়্যালিটি শো’গুলোয় যারা আসে, তারা বড্ড অন্যদের অনুকরণ করে। খেয়াল রাখব বাচ্চাগুলো যেন নিজস্বতা নিয়ে আসে। তার চেয়েও বড় কথা, বাচ্চাদের সারল্যটা যেন থাকে। আমি ঠিক করেছি, যতই ভাল নাচুক, খুব বেশি পাকা বাচ্চা হলে আমি মোটেই তাকে সুযোগ দেব না।
• রিয়্যালিটি শো’এ বাচ্চাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্যুটিং করতে হয়। তাহলে আর তারা নিজের মতো থাকবে কী করে?
এটা সত্যিই খুব খারাপ দিক। আসলে কী হয় বলুন তো, আমাদের বিচারকদের অনেক টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু টেকনিশিয়ানদের কেউ অত টাকা দিতে রাজি নয়। তাই দু’দিনের কাজ একদিনে শেষ করার একটা মানসিকতা থাকে। একবার একটা শো’এ বিচারকেরা খুব কড়াভাবে বলেছিলাম, টানা এতক্ষণ শ্যুটিং করা যাবে না। এখানেও আশা করছি, বাচ্চাদের কষ্ট হবে না। শিল্পা (শেট্টি, সহ-বিচারক) নিজেও একজন মা। আমারও তিন সন্তান। বাচ্চাদের ক্ষতি হোক, আমরা চাইব না।
• আপনার ছেলেমেয়ে কখনও রিয়্যালিটি শো’এ অংশ নেওয়ার বায়না ধরেছে?
(হাঁফ ছেড়ে) নাহ্! আমি ওদের খুব একটা রিয়্যালিটি শো দেখতেও দিই না। এই শো’টা করার আগে ভাল করে জিগ্যেস করে নিয়েছিলাম, এটা বাচ্চাদের দেখানো যাবে কি না। অনেক শো এমন হয়, যে বাচ্চাদের দেখানোই যায় না। অবশ্য সব সময় সবকিছু তো আমাদের হাতেও থাকে না। বাট উই হ্যাভ টু টেক দ্য লিপ অফ ফেথ।
• টেলিভিশন একটা বড় কমিটমেন্ট। ‘জগ্গা জাসুস’এর কাজ কি একদম শেষ?
হ্যাঁ (নিশ্চিন্ত হাসি)! সব শেষ করে ফেলেছি।
• তাহলে কবে মুক্তি পাচ্ছে?
(কাঁচুমাচু মুখ করে) কে জানে, সত্যিই বলতে পারছি না। এটা আসলে আমার হাতে নেই। রণবীরের (কপূর) বাকি ছবিগুলো কবে মুক্তি পাচ্ছে সে সব দেখে, ছক কষে একটা দিন বার করা হবে বোধহয়।
• ছবির শ্যুটিং শেষ হতে তো অনেক দেরি হল। ‘বরফি’র পর বেশ লম্বা বিরতি হয়ে গেল...।
ব্রেকটা আমি ইচ্ছে করেই নিয়েছিলাম। সেই ২১ বছর বয়স থেকে কাজ করছি। প্রথমে ছোট পরদায়, তারপর সিনেমায়। কয়েকটা হিট ছবি করলেও, আমি কিন্তু জীবনে তেমনভাবে টাকার মুখ দেখিনি। ‘বরফি’র পর প্রথমবার দেখলাম ব্যাঙ্ক ব্যালান্সটা বেশ দেখার মতো হয়েছে। তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম এবার একটু নিঃশ্বাস নিতে পারি। আই থিঙ্ক আই ডিজার্ভড দ্যাট ব্রেক। রণবীরের সঙ্গেও সেভাবেই কথা হয়েছিল। ‘বম্বে ভেলভেট’ করার ফাঁকে ফাঁকে ‘জগ্গা..’ করবে। সেই মতো শিডিউল তৈরি হয়েছিল।
• নানা কারণে অনেকবার শ্যুটিং পিছনো হয়েছে। তার মধ্যে একটা কারণ কি ক্যাটরিনা কাইফ?
এ মা না না! ও বেচারি কী করবে! ওর জন্য হবে কেন? আমি নিজেও তো ব্যক্তিগত কারণে দু’বার শ্যুটিং পিছিয়ে দিয়েছিলাম।
• একটা ছবির শ্যুটিং বার বার আটকে গেলে পরিচালকের কাছে সেটা নিশ্চয়ই খুব হতাশাজনক?
যখন এমন কোনও কারণে শ্যুটিং আটকে যায়, যেটা পরিচালকের হাতের বাইরে, তখন হতাশ লাগে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমন কিছুই হয়নি। ছবির সব শিডিউল আগে থেকেই এভাবে প্ল্যান করা ছিল। ঘটনাচক্রে রণবীর-ক্যাটরিনার ব্রেকআপটা এর মধ্যে হয়ে গেল। তাই বোধহয় সকলে ভাবছে দেরি হওয়ার পিছনে ওটাই বড় কারণ। কিন্তু আমার মনে আছে, জানুয়ারিতে ছবির প্রথম শ্যুটিং ছিল। সে সময় জানতে পারলাম, ওদের ব্রেকআপ হয়েছে। তখন কিন্তু আর কেউ জানত না, শুধু আমি জেনেছিলাম। মিডিয়া তো অনেক পরে খবর পেয়েছে। তখন একবার আমারও মনে হয়েছিল যে এরা তো আলাদা হয়ে গেল, এবার তাহলে আমার শ্যুটিংটা কীভাবে হবে! কিন্তু সত্যি বলছি, ওদের কারণে কোনও রকম দেরি হয়নি।
• ছবির প্রচারে দু’জনে একসঙ্গে থাকবেন?
খবরে পড়লাম, ওরা নাকি একসঙ্গে প্রচার করবে না। আমায় কিন্তু ওরা কেউ এখনও এমন কথা বলেনি (হাসি)! আসলে কী বলুন তো, দু’জন মানুষ সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে গেলে তারা একসঙ্গে কিছু করবে না, আমরা সেটাই ধরে নিই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভাবনাটা না-ও মিলতে পারে। দেখা যাক!
• ‘জগ্গা...’য় নাকি রণবীর টিনএজার? চেহারার দিক থেকে সেটা কীভাবে সম্ভব হল?
মেকআপ আর কস্টিউমের জোরে হয়ে গিয়েছে ব্যাপারটা! আমরা অনেকভাবে লুক টেস্ট করেছি। প্রচুর লোককে জিগ্যেস করেছি। আমার বাচ্চাদের রণবীরের লুক দেখিয়ে জিগ্যেস করেছি। শেষে যখন প্রায় সকলেই বলল, ওকে একটা বারো ক্লাসের ছাত্রের মতো দেখাচ্ছে, তখন লুক চূড়ান্ত করেছি।
• এই ছবির কিছু অংশের শ্যুটিংও তো দার্জিলিংয়ে করেছেন?
‘বরফি’র সময় ওখানকার লোকেদের কথা দিয়ে ফেলেছিলাম, যে ফের আসব। সেটা কিছুতেই ফেলতে পারলাম না। হয়তো এই ছবির শ্যুটিং ওখানে না করলেও চলত। কিন্তু ওই যে একটা টান রয়ে গিয়েছে। ওখানকার পর্যটনের জন্য কিছু করব, ঠিকই করে ফেলেছি। ওদের জন্য একটা শর্ট ফিল্মও করে দিচ্ছি। সরকার থেকে যে এমন কোনও অনুরোধ এসেছে তা নয়। নিজেই করছি।
‘জগ্গা জাসুস’এ রণবীর-ক্যাটরিনা।
• কী মনে হয়, ‘বরফি’র ম্যাজিকটা ফের তৈরি হবে?
ম্যাজিক যে কীভাবে হয়, সেটাই তো জানি না! ‘বরফি’ যখন করেছিলাম, সেটা যে এত ভাল চলবে, নিজেরাও বুঝিনি। এবারও কী হবে, জানি না।
• রণবীরের বেশ কিছু ছবি চলেনি। সে নিয়ে ভয় আছে?
না, ও সব নিয়ে আবার কীসের ভয়! ভয়টা আরও করে না, কারণ রণবীর নিজেও এ সব নিয়ে চিন্তিত নয়। ও নিজের কাজটা ঠিকমতো করে। ছবি চলল কি চলল না, তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। বলিউডে নায়কেরা এমন জায়গায় বসে আছে যে লোকে ভাবে, ওরাই সবকিছু করে। একটা ছবি চলবে কি চলবে না, তা নিয়ে অভিনেতার কিন্তু তেমন কিছুই করার নেই। সে তো রোজ সেট’এ গিয়ে শট দিয়ে আসে। বাকি কাজটা আরও অনেকের। আমার ছবি না চললে সেটা সম্পূর্ণ আমার দোষ। এতে অভিনেতার কোনও হাত নেই।
• ‘জগ্গা...’য় আরও বেশ কয়েকজন বাঙালিকে নিয়েছেন। সায়নী গুপ্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে অন্যতম...।
সায়নীর মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। বয়সের তুলনায় ওকে অনেকটা ছোট লাগে। তাছাড়াও ওকে একটা মিনি ডায়নামাইট বলা যেতে পারে! খুব এনার্জি। অপুদা’র সঙ্গে বহুদিন ধরে কাজ করার ইচ্ছে ছিল।
• চরিত্রটা চোখে পড়ার মতো? নাকি ‘বরফি’র যিশু সেনগুপ্তের মতো ছোটখাটো?
হুম্! যিশুর চরিত্রটা একটু বেশিই ছোট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অপুদা’র চরিত্রটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রণবীরের পর ছবিতে অপুদা-ই ইমপর্ট্যান্ট। আমি তো বলব, ক্যাটরিনার চেয়েও বেশি!
• বাঙালিদের নিয়ে কাজ করছেন। বাংলায় কোনও কাজ করতে ইচ্ছে হয় না? সুজিত সরকার তো বেশ প্রযোজনা শুরু করেছেন।
(হাসি) সুজিত বেশ এন্টারপ্রাইজিং। ও অনেক কাজ একসঙ্গে করতে পারে। (একটু থেমে) আমি কখনও করব কিনা জানি না! যতবার বাংলা চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করা শুরু করেছি, মনে হয়েছে এটা তো হিন্দিতেও করা যাবে। এটার একটাই কারণ। কলকাতার লোকে হয়তো উত্তরটা পছন্দ করবেন না। হিন্দিতে কাজ করলে বৃহত্তর দর্শক ধরা যায়। তাছাড়া টাকাও বেশি। তাই আরও ভাল করে ছবিটা বানানো যায়। এখানকার দর্শকও তো আমার ছবি দেখছেন। এমন তো নয়, তাঁদের আমি হারিয়ে ফেলছি।
• কিশোর কুমারের বায়োপিকটা কি হচ্ছে?
(হাসি) ২০১৭’র শেষে শুরু করব কাজটা। তার আগে ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’র সিক্যুয়েলের কাজটা করছি। ওটায় ইরফান (খান) বাদে বাকি সব কাস্ট বদল হচ্ছে। তারপর ‘কিশোর’ করব। আসলে আমি ব্রেক নিচ্ছিলাম বলেই ‘কিশোর’টা ধরিনি। ওই ছবিটা বেশ কঠিন। সে তুলনায় ‘জগ্গা..’ বেশ সহজ ছবি ছিল। তাই এটাই করলাম আগে।