কলকাতায় আছেন আপাতত। যেখানে তাঁর অ্যাজেন্ডা— খাবার! নেহাত অভিনয়টা পেশা বলে শ্যুটিং করছেন ‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’র।
কলকাতায় কাটছে কেমন?
এই দিনটা উন্মাদের মতো কেটেছে! ‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’ ছবিতে আমার বেশ কয়েকটা লুক রয়েছে। ফলে বার বার হেয়ার-মেকআপ পাল্টাতে হচ্ছে। ঝামেলাও হচ্ছে সেটা নিয়ে। তারপর বৃষ্টি নেমে তো শিডিউলের বারোটা! অনেকটা সময় বেরিয়ে গিয়েছে। এত ঝামেলার মধ্যেও আমরা কিন্তু আছি বিন্দাস! সেটা কলকাতার জন্যই। এখানকার মানুষ খুবই আন্তরিক।
এত বছর বাদে ক্যামেরার সামনে এলেন...। আপনাকে কিন্তু ‘মিস্’ করছিলেন দর্শক!
দ্যাট্স গুড টু নো (হাসি)। আসলে কী জানেন তো, দু’বছর কোনও কাজই না করার জন্য একটু জড়তা ছিলই। ফের যে অভিনয় করছি, সেটা অনেকটা কেঁচে গণ্ডুষই বলতে পারেন। তবে অনুভূতিটা সেরা! মনে হচ্ছে, আমি নিজে যেন অন্য একটা মানুষ। এখন তো চেহারাও অনেক পাল্টে ফেলেছি। ফলে স্ক্রিনে নিজেকে দেখে বেশ মজাই লাগছে! ভালও লাগছে...।
আপনার শেষ মুক্তি ছিল ‘কিল দিল’। দু’বছর নিজেকে সময় দেওয়ার পিছনে কি টেবিলটাকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা ছিল?
ঠিক দু’বছরের গ্যাপ কিন্তু নয়, জানেন তো! ‘কিল দিল’ রিলিজ করেছিল ২০১৪ সালে। তা-ও নভেম্বরে। সেদিক থেকে দেখলে দেড় বছরের অবসর। এমনিতেই ‘কিল দিল’এর ঠিক পরে যদি কোনও ছবির কাজ করতাম, তাহলেও ছ’মাস লেগেই যেত তার কাজ শেষ হতে। তারপর তো রিলিজ। তো সেভাবে ভাবলে পার্থক্যটা ছ’মাসের (হাসি)! তবে এই সময়টায় অনেক কিছু করছিলাম। আই নিডেড সাম টাইম অফ। পর পর চারটে ছবিতে কাজ করার পর একটা ছুটি নিতেই হতো। কারণ ওই সময়টায় শারীরিক-মানসিকভাবে ক্লান্তও হয়ে পড়ছিলাম। আই ওয়াজ কমপ্লিটলি স্পেন্ট! তাছাড়া নিজের নতুন একটা বাড়ি কিনেছি। তার কাজও করার ছিল। প্রায় ন’মাস লেগে গিয়েছিল বাড়িটা সাজাতে। তারপর ওয়ার্ক-আউট করা, ওজন কমিয়ে শেপ’এ আসা— এই কাজগুলোও করছিলাম। অনেক স্ক্রিপ্টও পড়েছি ওই সময়টায়। নিজের চিন্তাভাবনা গুছিয়ে নেওয়ার জন্য যতটা সময় লাগত, ততটাই নিয়েছি। আর এটার দরকারও ছিল। তার সঙ্গে নিজেকে তৈরি করাটাও। এখন সেট’এ যে ধরনের ইনপুট দিতে পারি, আগে ততটা পারতাম না।
পরিণীতি চোপড়া।
এই শহরের অভিজ্ঞতা কেমন?
কলকাতায় এর আগে এসেছি বেশ কয়েকবার। প্রমোশনের কারণেই। শ্যুটের জন্য এই প্রথম যদিও। দু’টো তা-ও আলাদা। প্রমোশনের জন্য তো সকালে এসে রাতে ফিরে যাই। শ্যুট পড়েছে বলেই থাকতে পারছি। তবে এখানে আমার আসার একটাই অ্যাজেন্ডা— খাবার! আরও এক সপ্তাহ আছি। মানে, আরও খাব! এই এক্ষুণিই পিৎজা খেতে বড় সাধ হচ্ছে!
তার চেয়ে কলকাতার বিরিয়ানি চেখে দেখুন না!
সানন্দে! কোথাকার বিরিয়ানি খাই বলুন তো? আরসালান?
আপনি জানেন?
(জোর হাসি) জানব না! (বলেই পাশে সহকারীর উদ্দেশে বলে দিলেন বিরিয়ানি আনিয়ে রাখতে। তারপর মুচকি হেসে বললেন) এখান থেকে বেরিয়েই গাড়িতে বসে খেয়ে নেব!
বিরিয়ানি খাবেন বলছেন, ‘শেপ’এর তো দফারফা তার মানে! বলিউডে যাকে এত জরুরি বলে মানা হয়!
আমি কিন্তু সবই খাই। পাশাপাশি কীভাবে ব্যালান্স করতে হয়, সেটাও জানি। এই মুহূর্তে কয়েকটা পেস্ট্রি খেয়ে নিলাম মানে, আগামী কিছুদিন নিজেকে কতটা কড়া শাসনে রাখতে হবে— সেটা আমার জানা। আমাকে ওজন কমাতেই হতো। প্রথমদিকে আমার ডায়েট-ওয়ার্ক আউটের নিয়মগুলো সবই উল্টোপাল্টা ছিল। দিনে চার-পাঁচটা মিল খেতাম আগে। তার কোনওটাই সুষম নয়। ফলে চারঘণ্টা শ্যুট করেই ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। আর হয় খুব ঘুমোতাম, না হয় সারা রাত জাগা! আমার ত্বকে কোনও ঔজ্জ্বল্য ছিল না। চুলটা রুক্ষ্ম হয়ে যাচ্ছিল। নিজের ফিটনেসের স্বার্থেই মূলত ওজনটা কমিয়েছি। মানে ফিটনেস বাড়াতে হতোই, তার ফলেই ওজন যা কমার কমেছে! তবে খাই সবই।
বিন্দু চরিত্রটা নিয়ে কিছু বলুন...।
বিন্দু অভিমন্যুর প্রতিবেশী। অভিমন্যু লেখক। আসলে অভিমন্যুর দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বিন্দুর গল্পটা বলা। সেই কারণেই ছবির নাম ‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’। এই দুই চরিত্রের জার্নিটাই ছবির মূল গল্প। কীভাবে তারা জীবনটা বাঁচে আর কী! বিন্দু গায়ক হতে চায়। শি ইজ কোয়াইট আউট দেয়ার। আর অভিমন্যুর মেয়েটাকে খুব পছন্দ। বিন্দু কিন্তু তামিলিয়ান। কলকাতায় বড় হয়েছে যদিও। আর অভিমন্যু পুরোপুরি বাঙালি। গল্পটা বেশ কুল, মন ভাল করে দেওয়া। তার উপর সেটিংটা কলকাতা। খুবই উপভোগ করছি আমরা গোটা প্রসেসটা!
কলকাতায় নতুন কোথাও গেলেন?
প্রথমদিন এসে তো কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলাম। শপিংয়েও গিয়েছিলাম তারপর— কোয়েস্ট মল’এ। মল-টল’এ তো শপিং করাই হয় না আমাদের। মুম্বইয়ে ভাবতেও পারি না। এখানে সঙ্গে অনেক লোক ছিল। প্ল্যান করে-টরে তারপর যাওয়া। তবে ওখানেও ভিড় হয়ে গিয়েছিল। অনেকের সঙ্গে নতুন আলাপ হল। আর চুটিয়ে শপিং করেছি। ইট্স আ লাভলি মল!
পার্ক স্ট্রিট ফ্লুরিজ’এ আয়ুষ্মান এবং পরিণীতি। ছবি: সুতীর্থ চট্টোপাধ্যায়
ম্যাচ দেখতে গিয়ে তো আব্রামের সঙ্গে খেলেই কাটালেন দেখা গেল!
(হেসে ফেলে) ওর সঙ্গে দেখা হলেই আমরা খেলতে লেগে যাই! দ্যাট চাইল্ড ইজ অ্যান এঞ্জেল! মুম্বইতে যখনই কোথাও শাহরুখের আসার কথা থাকে, আর আমিও নিমন্ত্রিত হই— আমি সঙ্গে সঙ্গে শাহরুখকে বলে দিই, আব্রামকে সঙ্গে এনো কিন্তু! শাহরুখও ছেলের ছবি পাঠায় আমায়। পুঁচকেটা আর আমি খুব বন্ধু হয়ে গিয়েছি! এই নিয়ে এক বছর হল। ওই দিনও শাহরুখকে বলেছিলাম, আব্রাম আসছে তো? শাহরুখ মুচকি হেসে আমায় বলল, ‘ইয়া, হি ইজ কামিং, রিল্যাক্স’! তারপর আব্রাম আসা মাত্র ম্যাচ-ট্যাচ ভুলে ওর সঙ্গে খেলতে লেগে গিয়েছিলাম!
আব্রাম কী বলে ডাকে আপনাকে?
পরি বলে ডাকে। ‘পরি কাম হিয়ার, গো দেয়ার’— সব সময় এই করে বেড়ায়! আমি ওকে ডাকি মার্শমেলো বলে।
দিদি প্রিয়ঙ্কা কী বলছেন আপনার ক্যামেরার সামনে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে?
সেভাবে নির্দিষ্ট করে কোনও কথা হয়নি আমার সঙ্গে। কিন্তু যখনই কথা হয়, প্রিয়ঙ্কার সাফল্য দেখে ওর প্রতি শ্রদ্ধা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বোন হিসেবে প্রচণ্ড গর্ববোধ করা ছাড়া আর কীভাবে আবেগ প্রকাশ করব বুঝতে পারি না। ওর অভিনয়-ক্ষমতা আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। মনে হয়, ওর মতো অভিনয়টা যদি করতে পারতাম। কিন্তু তার পরেও ওর অধ্যবসায় দেখুন! দেশে তো ও অলরেডি সুপারস্টার। মানে, ‘বলিউ়ড সুপারস্টার’ বলতে যা বোঝায়। কিন্তু তার পরেও যেভাবে আন্তর্জাতিক স্তরে ও নিজেকে পৌঁছে দিতে পেরেছে, সেটা কিন্তু সাধারণ মাপের কোনও অ্যাচিভমেন্ট নয়!
‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’তে আপনি প্লেব্যাক করছেন। এটা কি দিদিকে দেখে অনুপ্রেরণা?
আমাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা সকলেই জানেন আমি গাইতে পারি। প্রতিটা ছবি করার সময়েই এক-দু’বার ভেবেছি, এবার গাইব! সেটা শেষ পর্যন্ত আর হয়নি। কিন্তু এই ছবিতে বিন্দু নিজে যেহেতু গায়ক হতে চায়, সেই কারণেই ব্যাপারটা হচ্ছে। ছোটবেলায় প্রায় ছ’বছর ক্লাসিক্যাল গানের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ফলে গাইতে চাওয়াটা আমার পক্ষে স্বাভাবিক। থ্যাঙ্কফুলি, এই ছবিতে অনেকগুলো গান গাইছিও। স্টুডিওয় ঢুকে রেকর্ড করার প্রসেসটাও বেশ লাগছে!
আয়ুষ্মানের সঙ্গে গানের জুটিটা জমেছে তাহলে?
এখনও পর্যন্ত মোটে তিনদিন হল আমরা একই সেট’এ আছি। কোনও দুর্ঘটনা হয়নি সে রকম (হাসি)! কিন্তু গানের জুটিটা আমি অন্তত খুবই উপভোগ করছি। আমাদের বেড়ে ওঠা -প্রায় এক। ও চণ্ডীগড়ের ছেলে। আমি অম্বালার মেয়ে। প্রায় পাশাপাশি দু’টো জায়গা। ফলে ব্যাকগ্রাউন্ড-ইনফ্লুয়েন্স সবই এক। তাছাড়া গান নিয়ে আমাদের পাগলামিটাও এক! গানের বন্ডিংটা বেশ জমেছে সে অর্থে। কোনও জিজ্ঞাসা থাকলে আমরা সব সময় একে অপরের কাছ থেকে যাচিয়ে নিতে পারি।
দিনকয়েক আগে আপনার একজন ভক্ত আপনার ছোটবেলার একটি ভিডিও আপলোড করেন। যেখানে স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে আপনি গাইছেন...এগুলো কি স্মৃতি ফিরিয়ে আনে?
ওটা স্কুলের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের একটা অনুষ্ঠান। লাইভ অনুষ্ঠান ছিল। দূরদর্শনে দেখানোও হয় সেটা। তখনও জানি না, পরদায় তার পরেও আমাকে দেখা যাবে! হা হা!
হলিউড যেতে চাইবেন? দিদির মতো?
অফকোর্স! প্রিয়ঙ্কা যেটা করেছে, সেটা বিশাল বড় ব্যাপার। আমি যদি সুযোগ পেয়েও না যাই, সেটা তো বোকামি হবে!
একটা সময় মনে করতেন, ফিল্মে অভিনয় করা মানে প্রচুর মেকআপ লাগানোর অজুহাত! সেখান থেকে এখন বলিউডের নায়িকা— কতটা পাল্টেছে ধারণা?
এখনও অল্প অল্প মনে হয় বটে, যে মেকআপ লাগানোর ছুতো হল ছবি করা! কিন্তু নাহ্, ফিল্ম কালচারে বড় হইনি ঠিকই। ছোটবেলা থেকে সব সময় শুনেছি, পড়াশোনা কত গুরুত্বপূর্ণ। ফিল্ম দেখা কত খারাপ! তবে এখন অভিনয়টাই করে যেতে চাই। পারলে সারা জীবন! কাজটা কিন্তু সোজা নয়।
‘যশ রাজ ফিল্মস’এর বাইরে আর যাবেন না তাহলে?
রাইট নাউ দে আর মাই ফেভারিট! আমার আলমা মাতে ‘ওয়াই আর এফ’। ওখানে মণীশ শর্মা আমার মেন্টর, আদিত্য চোপড়া আমার মেন্টর। কাজকর্মের ব্যাপারে ওরা ভীষণ প্যাশনেট। আই লাভ দেম! ওদের প্রোডাকশন হাউসেই তো প্রথম কাজ করা শুরু করি পি আর হিসেবে। এখন অভিনয়টাও করছি। ইট্স ডেস্টিনি। আমার বাবা-মা নাম রেখেছিলেন পরিণীতি। প্রকাশ ঝায়ের ‘পরিণীতি’ ছবিটা দেখে! আমার নামের মানেই ডেস্টিনি কিন্তু!
নতুন চেহারায় নিজের নতুন স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করতে পারলেন?
আপাতত এই গরমে কমফর্ট-টাই স্টেটমেন্ট। তবে সব ডিজাইনারের পোশাকই ট্রাই করছি— হাই স্ট্রিট ব্র্যান্ড, ইন্ডিয়ান কুতুয়র, ওয়েস্টার্ন কুতুয়র— অপশন তো অনেক!