নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘পোস্ত’তে তিনি ওয়ার্কিং মাদার। আপাতত একটু সিরিয়াস ছবিতেই মন দিতে চান মিমি চক্রবর্তী। তা বলে কমার্শিয়ালকে কখনওই ‘বাই বাই’ বলবেন না! গল্প করলেন ‘ওবেলা’র সঙ্গে।
মিমি নাকি ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর থেকে বেশি ডাকাবুকো হয়েছেন? আগে তিনি বেশ শান্তশিষ্ট, ভদ্রলোক গোছের ছিলেন!
(হাসি) আগের মিমিও এরকমই ছিল। ইন্ডাস্ট্রিতে আসার আগে যখন কলেজে পড়তাম, তখন সেভাবে লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করতাম না। কলেজে তো যেতামও না তেমন! তাই হয়তো লোকের মনে হতো, আমি খুব শান্তশিষ্ট। কিন্তু তখনও লোকজনকে রীতিমতো মারধর করতাম। গুন্ডাগিরি করে বেড়াতাম! এগুলো আমি সারাজীবন করে এসেছি, এখনও করি!
সেই গুন্ডাগিরি তো ‘পোস্ত’তে দেখাতে পারলেন না! সেখানে একেবারে রাশভারী ওয়ার্কিং মাদার!
আমি ভীষণ এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম রোলটা পেয়ে। প্রথমে একটু মনে হচ্ছিল, কেরিয়ারের এই জায়গায় এসে মায়ের রোল করা ঠিক হবে কিনা। বিজ্ঞাপনের জন্য আমাকে এক-দু’বার অ্যাপ্রোচ করা হয়েছিল, যেখানে মায়ের রোল করতে হতো। ওগুলো করিনি আমি। কিন্তু এইবার অনেক ভেবেছিলাম। তারপর দেখলাম, অ্যাজ সাচ তো কোনও সমস্যা নেই! এমনিতে কিন্তু স্ক্রিপ্ট পড়ে যে খুব বসে বসে ভাবি, তা নয়। একটা ইনস্ট্যান্ট ক্লিক দরকার হয় আমার। ‘পোস্ত’র সময় সেটা পেয়েছিলাম।
কিন্তু আপনি নাকি বাচ্চাদের সঙ্গে তেমন স্বচ্ছন্দ নন?
শিবুদাকে তো বলেই দিয়েছিলাম, আমার কিন্তু বাচ্চাদের সঙ্গে পটে না একদম। শিবুদা তো গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসে গিয়েছিল! আসলে ওদের কীভাবে হ্যান্ডল করব বুঝতে পারি না। তবে আমাদের পরিবারে যত বাচ্চাকাচ্চা আছে, তারা কিন্তু আমাকে ছেড়ে নড়তেই চায় না! ওরা আমার সঙ্গেই থাকে, খায়, ঘুমোয়। আমি যে ফ্ল্যাটে এখন থাকি, সেখানকার বাচ্চারাও বিকেলে খেলতে যাওয়ার সময় আমাকে একবার ডাক দেয়! ফ্রি থাকলে বা চিকু-ম্যাক্সকে (মিমির পোষা ল্যাব্রাডর আর হাস্কি) নিয়ে বেরোলে একটু হয়তো খেলি ওদের সঙ্গে। কিন্তু আমার একেবারেই মনে হয় না, বাচ্চাদের আমি সামলাতে পারি-টারি বলে!
অর্ঘ্যর সঙ্গে তো খুব জমে গিয়েছিল আপনার!
হি ইজ আ সুইটহার্ট! সারাক্ষণ মিমিদিদি-মিমিদিদি করে বেড়াত আর শট’এর আগে বা পরে ওর সঙ্গে আমাকে লুডো খেলতে হতো! লুডো খেলতে খুব ভালবাসে অর্ঘ্য। অতটুকু একটা বাচ্চা, কিন্তু কোনও ট্যানট্রাম নেই। টানা অতক্ষণ আমাদের সঙ্গে শ্যুট করত। একটুও বায়না ছাড়া। হি ইজ ভেরি ওয়েল ব্রট আপ।
কমার্শিয়াল ছবির দিকেই আপনার বেশি আগ্রহ...সেটা কি ‘পোস্ত’র পর বদলাবে?
আই লাভ ডুয়িং কমার্শিয়াল ফিল্মস। গান-নাচ, অ্যাকশন, রোম্যান্স সব থাকবে এমন ছবি। ওতে একটা রাশ পাই আমি...যখন-তখন সিন চেঞ্জ, শ্যুটিং শুরু, ১০০টা লোকের দৌড়ে বেড়ানো! যখনই একটা জায়গায় স্থির হয়ে খুব শান্তভাবে কাজ করতে হয়, অস্বস্তি শুরু হয় আমার!
‘গানের ওপারে’র সময় তো ওই শান্ত-গম্ভীর পরিবেশেই কাজ করতে হতো...!
‘গানের ওপারে’ যখন করতাম, সকাল ৬টায় সেট’এ যেতাম আর সারাদিন সূর্য দেখতাম না! বেরোতাম যখন, ভোর চারটে বাজে। পুপের রোলটা করছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমি নিজে তো পুপে নই! অফ ক্যামেরা যা হইচই করার ঠিকই করে নিতাম! ঋতুদা’র সামনে অবশ্য একটু কম করতাম। তবে করতাম!
কোন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে সবচেয়ে বেশি এনজয় করেছেন?
ওভাবে কোনও একজনের নাম বললে ঠিক হবে না। রিসেন্টলি অরিন্দমদার (শীল) সঙ্গে কাজ করলাম। দারুণ লেগেছে কাজ করে! আসলে সকলের সঙ্গে কাজ করেই খুব মজা পাই...বিরসা...রাজ।
বিরসার সঙ্গে কাজ করার পর পরই রাজের সঙ্গে আপনার সম্পর্কে বিচ্ছেদ...।
এটা নিয়ে গত এক বছর ধরে এত লেখা হয়েছে, কথা হয়েছে যে আর বলার এনার্জিই আমার নেই। সকলে তো সবই জানে!
তাহলে এখন কাকে ডেট করছেন?
নোওয়ান! ডেটিং মাইসেলফ, অ্যান্ড দ্যাট’স দ্য বেস্ট ফেজ অফ লাইফ।
আপনার মি-টাইমের পুরোটাই কি পোষ্যদের জন্য বরাদ্দ তাহলে?
বলতে পারেন। যখন হাতে কিছুটা সময় থাকে, চিকু আর ম্যাক্সকেই সময় দিই। বাড়িতে থাকলে ওরা প্রায় সারাক্ষণই আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকে। আমি ঘুম থেকে ওঠার পর বাথরুমের সামনে বসে পড়ে দু’জন। ওদের দাঁতে টুথপেস্ট লাগিয়ে দেব, ব্রাশ করিয়ে দেব, তারপর বাকি সব হবে! বাই দ্য ওয়ে, ওরা দু’জন কিন্তু টুথব্রাশ শেয়ার করে (হাসি)!
রাজের সঙ্গে ছবি নিয়ে কথা-টথা হচ্ছে?
ছবি নিয়ে এক্ষুনি কোনও কথা হচ্ছে না...।
এমনি কথা হয়?
দেখা হলে কথা হয়।
মিমি চক্রবর্তীর অনুশোচনা হয় কিছুতে?
নাহ্। সামথিং হুইচ ইজ ডান ক্যান নট বি আনডান। ফলে পিছনে তাকিয়ে আফশোস করাটা সময় নষ্ট বলে মনে হয়। আগামী দিনে তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখি।
আপনার এই মুহূর্তের অ্যাম্বিশন কী?
খুব পরিশ্রম করা আর দারুণ সব কাজ করা।
নর্থ বেঙ্গল থেকে কলকাতায় আসার সময় কি নিজেকে টলিউডের নায়িকাই ভাবতেন, নাকি স্বপ্নটা আরও বড় ছিল?
ওরকম কোনও স্পেসিফিকেশন ছিল না, যে টলিউড হিরোইন হব। কিন্তু হিরোইন হব যে, এই স্বপ্নটা ছিল। তখন মনে হতো, একদিন মুম্বই পালাব! কিন্তু এখানে কাজ শুরু করার পর দেখলাম, বেশ ভালই লাগছে। লোকজন, কাজকর্ম সবটা মিলিয়ে। মুম্বই যেতে হবে, হিন্দি ছবি করতে হবে— ওরকমভাবে ভাবি না আসলে। মুম্বইয়ে গিয়ে একটা ছবি করে দীপিকা পাড়ুকোন তো হয়ে যাব না! এখানে ভাল কাজ করছি, সেটা ভালই লাগছে।
ইদানীং নাকি আপনার মধ্যে তারকাসুলভ হাবভাব এসেছে...?
আমার সেটা মনে হয় না। আমি একেবারেই ওই ভাবনাটা মাথায় বসতে দিতে চাই না। লোকে যেমন ৯টা-৫টার চাকরি করে, আমিও সেরকম একটা কাজ করছি। তফাতটা হল, আমি মেকআপ নিয়ে কাজে যাই আর আমাকে পরদায় দেখা যায়। এখনও বাড়ি ফিরে নিজের বিছানাটা নিজেই পরিষ্কার করি। কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও। বাড়ি শিফ্ট করব বলে মা আমার সঙ্গেই থাকছেন এখন। আর মা ভীষণ কড়া ধাতের মানুষ। মাটিতে কিছু ফেলে-টেলে দিলে সেটা আমাকেই পরিষ্কার করতে হয়।
বড় ব্যানারেই স্টিক করবেন সব সময়? ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি করার কথা ভাবেন?
আমার কাছে, ব্যানার ম্যাটার্স। ভাল ছবি বানানোটা এক নম্বর শর্ত। কিন্তু ব্যানার বড় হলে প্রচারের সবটা অনায়াসে হয়ে যায়। আর প্রোমোশন ব্যাপারটা বিরাট। একটা ছবি যে আসছে, সেটা লোকের জানা দরকার। না জানতে পারলে তো ছবিটা আর চলবে না! টিভিতে দেখে লোকে বলবে, ‘খুব ভাল ছবি হয়েছিল...টিভিতে দেখলাম’! এটা চাই না।
ছবি: সুপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়
মেকআপ: বীথিকা বেনিয়া
হেয়ার: সীমা
পোশাক: বাচী
স্টাইলিং: চিকি গোয়েন্কা
লোকেশন সৌজন্য: দি অ্যাস্টর