কলটাইম ছিল সকাল আটটা। টালিগঞ্জের টেকনিসিয়ানস স্টুডিওর সামনে। ওই সময়েই ‘জগজ্জননী মা সারদা’ ইউনিটের কলাকুশলীরা রওনা হন বারুইপুরের সেটের উদ্দেশে। অভিনেতা বন্ধুরা পই পই করে বলে দিয়েছিলেন, ‘দেখবেন আটটা মানে কিন্তু আটটা। এখানে কেউ দেরি করে না। দেরি করলে আপনাকে একা যেতে হবে।’ যদিও সকাল ন’টায় আর একটি দল অর্থাৎ ইউনিটের টেকনিসিয়ানরা রওনা হন তবু প্রথম দফাতেই সেটে পৌঁছনোর তাড়া ছিল। নাহলে মেকআপ পর্বটাই তো মিস।
কাঁটায় কাঁটায় রওনা দিল গাড়ি। শ্রীরামকৃষ্ণ অভিনেতা সুমন কুণ্ডু যেতে যেতেই জানালেন যে বারুইপুরের সেট ছাড়াও ধারাবাহিকের শ্যুটিং হয় বারুইপুর রাজবাড়িতে। এছাড়া জয়েনপুরে রয়েছে মায়ের বাড়ির সেট, কামারপুকুরের সেট। তা বাদে আউটডোর শ্যুটিং হয় সোদপুরে বারো শিবমন্দিরের ঘাটে।
টালিগঞ্জ থেকে সেটে পৌঁছতে সময় লাগল আধঘণ্টার একটু বেশি। ৯টা নাগাদ শুরু হল মেকআপ পর্ব। প্রীতম কয়াল অত্যন্ত নিপুণ মেকআপ শিল্পী। প্রথমে শ্রীঠাকুর, তার পরে মা সারদার মেকআপ, বাকি অভিনেতাদের সাজসজ্জা সামলে নিলেন চটপট। তবে স্বামীজি চরিত্রের অভিনেতা দেবাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় নিজেই মেকআপ করেন। শুধু উইগ পরতে একটু সাহায্য লাগে আর কী!
বাঁদিক থেকে দেবাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, সুমন কুণ্ডু ও অর্পিতা মণ্ডল। ছবি: নিজস্ব চিত্র
মেকআপ রুমে টুকিটাকি গল্পের মধ্যেই জানা গেল, প্রতিদিন মা কালীর পুজো করে তবেই শুরু হয় শ্যুটিং। পুজো করেন মা সারদা চরিত্রের অভিনেত্রী অর্পিতা মণ্ডল নিজে। আর এই পুজোর জন্য যা যা প্রয়োজন, ফুল-মালা-ধূপ, দায়িত্ব নিয়ে তার জোগাড় করেন প্রোডাকশন টিমের সদস্য দেবাশিস দেব।
এই ধারাবাহিকের সেটে মায়ের পুজো একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা। সারদা মায়ের সাজে অর্পিতা যখন ঠাকুরকে সাজান ফুল দিয়ে, মিষ্টি নিবেদন করেন, ফ্লোরের গর্ভগৃহে অধিষ্ঠিত মন্দিরে বেজে ওঠে ঘণ্টাধ্বনি, অভিনেতারা প্রাণ খুলে ‘মা’-কে ডাকেন— সবকিছু যেন সুররিয়াল মনে হয়। একটু সংবেদনশীল মানুষ মাত্রেই টের পাবেন এই অনুভূতি। যে অভিনেতারা, যে শিল্পীরা এখানে কাজ করেন, তাঁদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয় একটা অদ্ভুত পজিটিভ এনার্জি।
অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বার বার বললেন, এই পরিবেশটা একদম আলাদা। সত্যিই আলাদা। বাণিজ্যিক সাফল্য নয়, গ্ল্যামার নয়, ফেম নয়, এখানে সবাই একটা গভীর নিষ্ঠাবোধ থেকে কাজ করেন। যদি ভক্তি বা দর্শনের জায়গাটা বাদও দেওয়া যায়, পড়ে থাকে ‘অভিনয়’। নিখাদ অভিনয়। এই ধারাবাহিক যাঁরা দেখেন, তাঁরা জানেন, প্রত্যেকটি চরিত্র কতটা প্রাণবন্ত এবং কী অসাধারণ অভিনয়।
পুজো শেষ হওয়ার পরেই শুরু হয়ে গেল শ্যুটিং। মোটামুটি সাড়ে এগারোটার মধ্যে ফ্লোরে আসেন পরিচালক সুশান্ত বসু। বাংলা টেলিভিশনে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা একটু ভয়ই পান ওঁকে। তার কারণ ওঁর কাজের ধরন ভীষণ অর্গানাইজড এবং অত্যন্ত নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলেন। হয়তো সেই কারণেই গোটা ইউনিটে, প্রযোজনায় ভীষণ শৃঙ্খলা রয়েছে। যাঁদের শ্যুটিং সম্পর্কে সামান্য হলেও অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁরা এই ধারাবাহিকের সেটে এলে বুঝবেন কী দারুণ সিনক্রোনাইজড এই ইউনিট।
আজ ৩০ মে সন্ধ্যায় টেলিকাস্ট হতে চলেছে ধারাবাহিকের ৪০০তম এপিসোড। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় টেলিকাস্ট। ‘মা সারদা’র পাশাপাশি শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামীজির জীবনের ঘটনাও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবৃত হচ্ছে এই ধারাবাহিকে। যাঁরা বস্তাপচা ধারাবাহিকে চোখ রাখতে রাখতে টেলিভিশনকে গালমন্দ করে সুখ পান, তাঁরা হয়তো খোঁজ রাখেন না যে সোম থেকে শনি, সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় ‘আকাশ ৮’-এ সম্প্রচারিত হয় এই অসাধারণ বায়োপিকটি। ধারাবাহিকটি পুনঃপ্রচারও হয়— পরের দিন ভোর ছ’টা ও বেলা সাড়ে দশটায়। এছাড়া প্রতি রবিবার থাকে সবক’টি এপিসোড নিয় মহাএপিসোড।
ধারাবাহিকের সেটে ঠিক কীভাবে হয় মায়ের পুজো? চরিত্র নিয়ে, শ্যুটিং নিয়েই বা কী বললেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এবং পরিচালক? দেখুন এবেলা ওয়েবসাইটের ভিডিও উপস্থাপনা নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে—
ভি়ডিও এডিটিং: অভিষেক কর্মকার
ভিডিও প্রযোজনা: সম্বিত পাল