ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজ। মখমলের মতো রোদ্দুর গায়ে মাখামাখি। নীল আকাশের কোল থেকে মাঝে মাঝে বেরিয়ে আসা পেঁজা পেঁজা তুলোর চলাচল। এমন যখন প্রকৃতি, তখন তো মন চাইতেই পারে ঘর ছেড়ে একটু বেরিয়ে পড়তে। কিন্তু কর্মজীবনের শত ব্যস্ততা। ছুটির আকাল। তবে যদি চান এমন এক স্থান, যেখানে স্বচ্ছ নীলাকাশ আর উজ্জ্বল রোদ্রের ছটায় খেলা করবে জলের কলকাকলি, সকালে থাকবে হালকা কুয়াশার ঘেরাটোপ, তা হলে বেরিয়ে পড়তে পারেন মাইথন আর পাঞ্চেতের পথে।
উইকএন্ডের ছুটিতেই ঘুরে আসতে পারেন বাংলা-ঝাড়খণ্ডের সীমানায় অবস্থিত এই এলাকা থেকে। কলকাতা থেকে দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। সড়কপথে কলকাতা থেকে মাইথন ২৩৪ কিলোমিটার। সময় লাগবে ৫ ঘণ্টা। এছাড়াও রয়েছে ট্রেন। নিজস্ব গাড়ি না থাকলে ট্রেন হতে পারে যাতায়াতের সেরা মাধ্যম। ট্রেনে গেলে নেমে পড়ুন বরাকর বা কুমারডুবি স্টেশনে। সেখান থেকে অটো বা গাড়ি ভাড়া পাবেন মাইথনে যাওয়ার জন্য। কুমারডুবি থেকে মাইথনের দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। বরাকর থেকে মাইথনের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন
• নতুন বং-ক্রাউডের নাম ‘পলাশ উৎসব’
• ঘুরে আসুন রূপনারায়ণের ধারের দেউলটি
• পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সুবর্ণরেখা। বিভূতিভূষণের বাড়ি
• প্রখর গ্রীষ্মে শান্তি চান? কলকাতাতেই রয়েছে ডেস্টিনেশন
মাইথনে কোথায় উঠবেন? মাইথনে একাধিক থাকার জায়গা রয়েছে। তবে থাকার সেরা ঠিকানা ডিভিসি-র মজুমদার নিবাস। এক্কেবারে নামমাত্র খরচে সেখানে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। মজুমদার নিবাসে ঘর বুক করতে হলে কলকাতায় উল্টোডাঙায় ডিভিসি-র অফিস থেকে বুকিং করতে হবে। যে তারিখে মাইথন যাবেন, তার ঠিক এক মাস আগে ওই তারিখে গিয়ে বুকিং করতে হবে। কিন্তু এক মাস আগের বুকিং-এর তারিখ যদি শনিবার বা রবিবার পড়ে, তা হলে শুক্রবার বুকিং করে ডিভিসি। মজুমদার নিবাস মাইথন ড্যামের মধ্যে একটি ছোট্ট দ্বীপের উপরে। স্থল থেকে একটা লম্বা ব্রিজ দিয়ে মজুমদার নিবাসে পৌঁছতে হয়। অবসর সময়ে মজুমদার নিবাস থেকে নদী দেখতে দেখতে সময় কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
মাইথনে ঘোরার জায়গা বলতে প্রধানত মাইথন ড্যাম। শীতে মাইথন ড্যামকে সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। মজুমদার নিবাসের সামনেই রয়েছে বরাকর নদীর বুকে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা। মাইথন ড্যামের পাশেই রয়েছে ডিয়ার পার্ক। এছাড়াও রয়েছে মিলেনিয়াম পার্ক। শীতকালে এই জায়গায় মেলা বসে। পুষ্পমেলার আয়োজন করে ডিভিসি। মাইথন ড্যাম পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের সীমানায় ঢুকলে মিলবে বোটিং-এর আরও ব্যবস্থা। ড্যামের পাড়ে রয়েছে ফুড-পার্ক। একটু এগিয়ে ড্যামের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে মিলবে বরাকর নদীর বিস্তীর্ণ পাড়, যেখানে গিয়ে বসলে বরাকরের চঞ্চল ঢেউ মন ভরিয়ে দেবে। বরাকর নদীর বুকেই রয়েছে চামচ দ্বীপ, সবুজ দ্বীপ। ডিভিসি সবুজ দ্বীপে পার্কও তৈরি করেছে। এই দুই দ্বীপেই পৌঁছতে হয় বোটিং করে।
মাইথনে রয়েছে আদি কল্যাণেশ্বরী মন্দির। ডিভিসি-র হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রজেক্ট। এই পাওয়ার স্টেশনে ঢুকতে গেলে কলকাতায় ডিভিসি অফিস থেকে অথবা মাইথনে ডিভিসি অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। সমতলভূমিতে এটাই ছিল দেশের প্রথম হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রোজেক্ট। ইচ্ছে করলে দেখে আসতে পারেন খোলামুখের কয়লা খনিও।
পাঞ্চেত
মাইথন ছাড়ার দিন সকালে মজুমদার নিবাস ছেড়ে দিন। ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ুন পাঞ্চেতের উদ্দেশে। গাড়ি ভাড়া করে নিন। মাইথন থেকে পাঞ্চেত ২১ কিলোমিটার রাস্তা। পাঞ্চেত ঘুরে রেলস্টেশনে যাতে গাড়ি ছেড়ে দেয় সেভাবে চুক্তি করে নিন। সকাল ৯টা নাগাদ বেরিয়ে পড়ুন পাঞ্চেতের উদ্দেশে। ১০টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন। পাঞ্চেত ড্যাম দেখে নিন। পাঞ্চেত ড্যামে ঢোকার মুখেই রয়েছে বড় পার্ক। পার্কে নেমে পড়ুন। তার পাশেই ড্যামের একদম কাছে চলে যাওয়ার রাস্তা আছে। ড্যাম এবং পার্ক দেখা হলে স্নেক পার্ক দেখে আসতে পারেন। এর পর গাড়ি নিয়ে ড্যামের অন্য প্রান্তে চলে যান। সামনে দেখবেন, হাতির মতো দেখতে একটি পাহাড়। ওই পাহাড়ের নাম গড়পঞ্চকোট। ড্যামের অন্য প্রান্তে একটি রাস্তা পাঞ্চেত হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রোজেক্টের দিকে নেমে গিয়েছে। ইচ্ছে থাকলে ঘুরে আসতে পারেন। তবে হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রোজেক্ট দেখার জন্য অনুমতি লাগবে। সমতলভূমির উপর এই হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রোজেক্ট বিস্ময়ের উদ্রেক করবে। পাঞ্চেতের আশপাশে আরও কিছু ঘোরার জায়গা রয়েছে। তবে দুপুরে ট্রেনের টিকিট কাটা থাকলে আপনাকে ফেরার রাস্তা ধরতে হবে। পাঞ্চেত থেকে চলে আসুন কুমারডুবি স্টেশন। চেপে পড়ুন কলকাতার ট্রেনে। সন্ধ্যার মধ্যেই বাড়ি। সোমবার থেকে ফিরে যান কর্মজীবনে।