এঁদের চিনতে পারেন?
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পাশে শশী কপূর। ক্যারিজমায় যে-কোনও বয়সের, যে-কোনও প্রজন্মের তরুণী অনুরাগিণীর মন জিতে নিতে পারেন।
শশী কপূরের প্রয়াণের পর এই ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল। কিন্তু জানেন কি, এই ছবি আদতে এক বিরল ছবির অঙ্গ মাত্র। আসল ছবিটি দেখলে বুঝবেন ঐতিহাসিক ভাবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আসলে এই ছবির ফোটোগ্রাফার আর কেউ নন, স্বয়ং সত্যজিৎ রায়।
ফেসবুকে ভাইরাল এই ছবি দেখে অত্যন্ত দুঃখিত শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের নাতি সন্দীপ চক্রবর্তী। কর্মসূত্রে তিনি দোহা শহরের বাসিন্দা। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তিনি আসল ছবির স্ক্যানড কপি পাঠালেন এবেলা.ইনের প্রতিনিধিকে। ‘‘আমার জানতে ইচ্ছে করে, এমন এক দুর্লভ মুহূর্ত থেকে আমার দাদুকে ক্রপ করে বাদ দেওয়া হল কেন?’’
সত্যজিৎ রায়ের অত্যন্ত প্রিয় এই অভিনেতাই ছিলেন ‘সোনার কেল্লা’ (১৯৬৪) ছবির ‘আসল’ ডক্টর হাজরা! এখনও বার বার সেই ছবি দেখে কিশোর থেকে বৃদ্ধ। সারা জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাংলা ছবিতে অভিনয়ও করেছেন তিনি।
সত্যজিৎ রায়ের তোলা এই ফোটোয় বাঁদিক থেকে ডানদিকে, জেনিফার কপূর, ফেলিসিটি কেন্ডাল, শশী কপূর, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শৈলেন মুখোপাধ্যায়। ছবি সৌজন্য: সন্দীপ চক্রবর্তী
এ ছবি বিকৃত করার সাহস কে করল? জানতে ইচ্ছে করছে আরও বিশদে? তা হলে পিছিয়ে যেতে হবে আরও ৫২ বছর আগে। সালটা ১৯৬৫। স্থান, বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাস। সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘চারুলতা’ সেখানে আমন্ত্রিত। এসেছেন চারুলতার ‘ভূপতি’ শৈলেন মুখোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে সেই একই ফিল্মোৎসবে নিমন্ত্রিত শশী কপূরের ছবিও। সঙ্গে এসেছেন শশীর স্ত্রী ব্রিটিশ অভিনেত্রী জেনিফার ও তাঁর বোন ফেলিসিটি কেন্ডাল।
শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের নাতি সন্দীপ চক্রবর্তী ও প্রপৌত্র ঈশান। ফোটো: সন্দীপ চক্রবর্তী
বার্লিনেই ঘটে গেল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ক্যামেরাবন্দি করলেন সত্যজিৎ স্বয়ং। বাঁদিকে দুই বোন জেনিফার ও ফেলিসিটি। একেবারে ডানদিকে শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
সে বছর বার্লিনে শশী কপূর অভিনীত জেমস আইভরি প্রোডাকশনের ছবি ‘শেক্সপিয়রওয়ালা’ নির্বাচিত হয়েছিল। সেই সূত্রেই ছবির কলাকুশলীরা এসেছিলেন সেখানে।সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মনে এখনও উজ্জ্বল সেই স্মৃতি। এই বার্লিন উৎসবপ্রাঙ্গণেই প্রখ্যাত অভিনেত্রী জিনা লোলোব্রিজিদার সঙ্গে দেখা হয়েছিল শশী ও সৌমিত্রর। সেই অভিনেত্রী নাকি অনুরাগের বশে ফুলের তোড়াও উপহার দিয়েছিলেন তাঁকে।
এই ডিজিটাল যুগে সেই মহার্ঘ্য ছবির অমর্যাদা যেন না হয়। আসল ছবি প্রকাশের পরে এটুকুই আশা করতে পারে এবেলা.ইন।