‘বিএফ’ টার্মটার সঙ্গে আপনি কি পরিচিত? সেই ১৯৮০-র দশক। বাংলা বাজার প্রথম পরিচিত হচ্ছে ভিডিও নামের এক অজানা বস্তুর সঙ্গে। ভিসিপি আর ভিসিআর নিয়ে তালদুমাদুম কাণ্ড সেই আভাতিবেলায়। প্রাথমিক পর্বে চোরাপথে দেশে ঢোকা আকাই বা ফুনাই কোম্পানির সেই সব যন্তর কেনার সামর্থ্য ছাপোষা বাঙালির ছিল না। এহেন কমি-কে পূরণ করতে বাজারে নামেন বেশ কিছু উপকারী প্রাণী। ‘এখানে ভিডিও ভাড়া দেওয়া হয়’— এমন সাইনবোর্ড তখন শহর ও শহরতলি-মফসসলের পাড়ায় পাড়ায়। একশো টাকা দিলেই পাওয়া যেত একটা ঢাউস টিভি, একটা ভিসিপি বা ভিসিআর এবং তিনখানি ভিডিও ক্যাসেট। কড়ার ঘণ্টা সাতেকের।
এই সাত ঘণ্টায় গেরস্তপোষা বাঙালি একটা হিন্দি ছবি রাখত ‘ইয়ংস্টার’-দের জন্য, মা-পিসিদের জন্য ‘বাবা কেন চাকর’ অথবা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ আর অবশ্যই একটা ভূত বা ডাইনোসর কচিদের জন্য। কিন্তু এই ছবিটাই বদলে যেত মেসে-হস্টেলে-ফাঁকা বাড়িতে। তিন তিনখানা অপশন। অনেকটা ভূতের রাজার তিন বরের মতো। তার মধ্যেই গুছিয়ে ফেলতে হবে আখের। একটা ইংরেজি অ্যাকশন, একটা হিন্দি সাম্প্রতিক আর একটা...। এই শূন্যস্থান পূরণ করতে ব্যবহৃত হতো ‘বিএফ’ অ্যাব্রিভিয়েশনটি। ভাঙ্গলে বের হল ‘ব্লু ফিলম’। ‘পানু’ শব্দটা তখনও বাংলায় গড়গড়ে ছিল না। বিএফ দিয়েই কাজ চালাতে হতো।
সভ্য, সুশীল বঙ্গ সমাজে বিএফ ছিল সাক্ষাৎ অন্তর্ঘাত। ভিডিও-সংস্কৃতি বাংলা বাজারে কায়েম হয়ে বসলে এই শব্দটি হ্যাড্ডাব্যাড্ডা হয়ে পড়তে থাকে। একদা শালীনতা বজায় রেখে ভিডিও ক্যাসেটের লাইব্রেরিতে গিয়ে গলা নামিয়ে গেরস্তরা বলতেন— ‘ভক্ত প্রহ্লাদ’ আছে বা ‘বিশ্বকাপ ফুটবল’ আছে? এই সবই ছিল সেই সব নিষিদ্ধ ছবির গূহ্যনাম। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে এই সংস্কৃতি লুপ্ত হয়। ১৯৯০-র দশকের প্রাক-বিশ্বায়ন হাওয়ায় উড়ে যায় ঢাকঢাক গুড়গুড়। খোলা বাজারে পর্ন বা বাঙালির একান্ত আদরের ডাক ‘পানু’ জায়গা দখল করে।
কিন্তু, কাদম্বরী যেমন মরিয়া প্রমাণ করে সে মরে নাই, ঠিক তেমনই এই ‘বিএফ’ নামক অভিধাটিও মরেও মরল না। বিশ্বব্যাপী অন্তর্জালতন্তু বিস্তৃত হওয়ার পরেও সে থেকে গেল। একেই বোধ হয় সংস্কৃতিবিদ্যার লায়েকরা ‘পিছুটান’ বলে চিহ্নিত করেন। যা স্মৃতির চাইতেও খতরনাক। এ অনেকটা ভুলো ভূতের মতো। পিছন পিছন যায় আর বলে, ‘এঁকটা মাঁছ দে না রে’। এহেন ভূতকে পেতে বাঙালি কোথায় না খাপ পাতে! ইউটরেন্ট, মিউটরেন্ট, পানুসাইট, নন পানু সাইট বাঙালি B আর F টাইপ করে দেখতে চায় কোন খটমল বেরিয়ে আসে ভুবনজোড়া খাটিয়া থেকে।
‘বিএফ’ নং ১
ইউটইবকেও কি বাঙালি ছাড়ে বলে ভেবেছেন? সেখানেও ‘বিএফ’ অপ্রতিরোধ্য ভাবে প্রেজেন্ট। ‘বেঙ্গলি বিএফ’ টাইপ করলেই বেশ কিছু মাল বেরিয়ে আসে। কিন্তু ইউটিউবের মতো এক খুলে আম মিডিয়ায় নীলনবঘন ছায়াছবি দেখা যে যায় না, যেতে পারে না, সে হুঁশ ক’জনের রয়েছে? আর এটাই বা ক’জন মনে রাখেন, ‘বিএফ’ নামক বিষয়টি অন্তর্জালে আর ‘ব্লু ফিলম’ নেই। তা কালের খোঁচায় ‘বয়ফ্রেন্ড’-এ পর্যবসিত। শুধু তাই নয়, আর এক কাটি সরেস হয়ে তার আর এক অবতারও দেখা দিয়েছে— ‘বিএফএফ’। না সেটা কোনও জবরদস্ত পর্নোগ্রাফি নয়, সেটা নেহাতই ‘বেস্ট ফ্রেন্ড ফরএভার’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
বিএফ নং ২
কিন্তু বুঝভুম্বুল থেকে বের হওয়া কি অতই সহজ? ইউটিউবে ‘বেঙ্গলি বিএফ’ নাম দিয়ে আপলোড করা রয়েছে বেশ কিছু ভিডিও। তার মধ্যে থেকে দু’টি চয়ন করে রাখলাম আপনার জন্য। একবার চোখ বুলোন এই দু’টিতে, করে আমাদের জানান, প্লিজ জানান, কারা আপলোড করে এই সব ভিডিও? কেন নাম দেয় ‘বেঙ্গলি বিএফ’? কোন ধান্ধায়?