চলে গেলেন সঙ্গীত শিল্পী প্রতীক চৌধুরী। বাংলা গানের জগৎকে গত তিন দশক যাঁরা মাতিয়ে রেখেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম নাম প্রতীক চৌধুরী। গত মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন এই জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী। বহু বিজ্ঞাপনের জন্য জিঙ্গল গেয়েছেন তিনি, পাশাপাশি প্লেব্যাকও করেছেন বহু বাংলা ছবিতে। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত বাংলা চলচ্চিত্র জগতের শিল্পীরা। অনেকেই তাঁদের স্মৃতির পাতা উলটে স্মরণ করলেন অকালপ্রয়াত শিল্পীকে।
অনিকেত চট্টোপাধ্যায়-
পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বহু বছরের সম্পর্ক প্রতীক চৌধুরীর। এই শিল্পীর শেষ কাজও তাঁর সঙ্গেই। মৃত্যুর দিনেও প্রতীক চৌধুরী তাঁর আগামী ছবি ‘হবু চন্দ্র রাজার গবু চন্দ্র মন্ত্রী’র ছবির গান রেকর্ড করেছেন। কবীর সুমনের সুরে মোট সাতটি ছোট গান ও একটি বড় গানের রেকর্ডিং তিনি শেষ করেছিলেন। খুবই আকস্মিক তাঁর কাছে প্রতীক চৌধুরীর এই ভাবে চলে যাওয়া। তাঁর কথায়, ‘‘আমার আগামী ছবি ‘শঙ্কর মুদি’তে শুধু গানই গাননি প্রতীক। তিনিও অভিনয় করেছেন ছবিতে। অনেক দিনের সম্পর্ক। খুব খেতে ভালবাসত। একসঙ্গে আটটা সিঙারা, এক ডজন কলা খেয়ে ফেলত। এই সেদিনই গান রেকর্ডিংয়ের সময় দেখলাম, চারটে চিকেন রোল খেয়ে ফেলল। তখনই সতর্ক করেছিলাম, একটু সামলে থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু কথাই শুনল না। আমার ‘গোড়ায় গণ্ডগোল’ ছবিতেও গান গেয়েছিল প্রতীক। বিজ্ঞাপনের বহু কাজ করেছে । খুবই আকস্মিক ওর চলে যাওয়া।’’
সুব্রত সেন-
পরিচালক সুব্রত সেনের প্রথম ছবি ‘এক যে আছে কন্যা’ ছবিতে গান গেয়েছিলেন প্রতীক চৌধরী। সুব্রত সেন প্রতীকের মৃত্যুর পরই ফেসবুক পেজে লেখেন— প্রতীক তাঁকে আর ফোন করে বলবেন না যে সুব্রত সেনের প্রথম ছবিটাই সেরা ছবি। পরের ছবিতে তাঁকে নিয়ে কাজ করেননি বলেই তাঁদের কিছু হল না। প্রসঙ্গত, ‘এক যে আছে কন্যা’ছবিতে গান গেয়েই প্রচারের আলোয় আসেন প্রতীক চৌধুরী।
শ্রাবণী সেন-
প্রতীক চৌধুরীর অকালপ্রয়াণে শোকাহত শ্রাবণী সেনও। তিনি বললেন, ‘‘আগামী একুশে ফেব্রুয়ারি কাজ করার কথা ছিল প্রতীক চৌধুরীর নির্দেশনায়। প্রতি বছরই ভাষা দিবসে প্রতীক এই অনুষ্ঠান করে থাকেন। শ্রাবণী সেনের কথা অনুযায়ী, এই দিন বিকেলে ওর আসার কথা ছিল রিহার্সালে। আমি একদম ভেঙে পড়েছি। ওর এই চলে যাওয়া গানের জগতে অবশ্যই বড় ক্ষতি।’’
দেবজ্যোতি মিশ্র-
কলকাতায় যখন কাজ করতে শুরু করেন দেবজ্যোতি মিশ্র, তখন থেকেই প্রতীক চৌধুরী তাঁর সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন। দেবজ্যোতি মিশ্রের কথায়, ‘‘আমি কলকাতায় প্রথম যখন কলকাতায় বিজ্ঞাপনের কাজ শুরু করি, তখন ওকে একটি জলসাতে শুনেছিলাম। সেই থেকেই ওকে নিয়ে কাজ করা শুরু। অসম্ভব গুণী ও ভদ্র একজন মানুষ ছিল। ১০টি ভাষায় গান গাইতে পারত। একটা সময়ে চুটিয়ে কাজ করেছি। আমার সৃষ্টি মানুষের কাছে প্রকাশ করেছে প্রতীক। ওর চলে যাওয়া আমার জীবনে ব্যক্তিগত ক্ষতি। আমরা অনেক ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম। আমার ছোট ভাইকে হারালাম।’’