বিষয়, সেক্স ট্র্যাফিকিং। মাধ্যম ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি, সংক্ষেপে ভিআর। জয়ীশা পটেলের তৈরি ডকুমেন্টারি ‘নোটস টু মাই ফাদার’ পৃথিবীর প্রথম ভিআর ডকুমেন্টারি, যার বিষয় সেক্স ট্র্যাফিকিং। সম্প্রতি টেক্সাসের অস্টিনে সাউথ বাই সাউথওয়েস্ট ফেস্টিভ্যালে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়ে গেল এই ছবির।
ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির মাধ্যমটা দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আরও বেশি আন্তরিক, আরও বেশি কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে ছবি দেখার ‘এক্সপিরিয়েন্স’কে। হয়তো সে জন্যই অন্ধ্রপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের এক মেয়ের গল্প এই মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে। যে মেয়েটা শিকার হয়েছিল সেক্স ট্র্যাফিকিংয়ের। হয়তো সেই কারণেই তাঁর বাবার সঙ্গে মেয়েটির আবার দেখা হওয়ার গল্পটা ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি আরও জলজ্যান্ত, আরও মানবিক করে তুলতে পারছে।
এত মাধ্যম থাকতে কেন ভিআর? পরিচালক জয়ীশা বললেন, ‘‘ভিআর এমন একটা মিডিয়াম, যেটা দর্শককে উদ্বুদ্ধ করে। একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মতো মনে হয় কোনও ছবিকে। মরমে বেঁধে! খানিকটা সেরকমই বলতে পারেন ভিআর’এ ছবি দেখার এক্সপিরিয়েন্সকে।’’ ঠিকই তো! আস্ত একটা ছবি চোখের সামনে ঘটছে, আর কোনও মাধ্যম তো সেটা এখনও করে দেখাতে পারেনি।
ছবির মূল বিষয় হিউম্যান ট্র্যাফিকিং। কিন্তু আদতে এক মেয়ে আর তার বাবার গল্প বলেছেন জয়ীশা। গল্প, অথচ সত্যি। এক সারভাইভারের কাহিনি। ছবিতে রমাদেবী তাঁর বাবাকে চিঠি লিখছেন, যৌনপল্লিতে কাটানো দিন-রাত-সন্ধের কথা জানিয়ে। বাবা বলছেন, কীভাবে অজান্তেই মেয়েকে এ রকম একটা ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন তিনি। বলছেন, হয়তো মেয়েকে বাঁচাতে পারতেন। এ রকম একটা বিষয় প্রেজেন্টেশনের গুণেই মন ছুঁয়ে ফেলেছে দর্শকের। জয়ীশা তাঁর বিষয় নির্বাচন নিয়ে বলছিলেন, ‘‘আমরা দেখানোর চেষ্টা করেছি, পরিবারের সদস্যরাই কিন্তু চাইলে পাচার আটকাতে পারেন। বিষয়টা নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলাটাই আমাদের উদ্দেশ্য। টু এডুকেট অ্যান্ড ইনক্লুড পিপল।’’
পুরো ডকুমেন্টারি শ্যুট করার জন্য দু’মাসেরও বেশি সময় লেগেছে জয়ীশার টিমের। ‘‘প্রচুর খাটতে হয়েছে আমাদের। বিভিন্ন এনজিও’র সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে, যারা ভারতে সেক্স ট্র্যাফিকিং নিয়ে কাজ করছে। আমরা রমাদেবীর মতো অনেক সারভাইভারের সঙ্গে কথা বলেছি, যাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে যৌনপল্লি থেকে।’’ হঠাত্ রমাদেবী এবং তাঁর বাবাকে নিয়ে ডকুমেন্টারি বানাতে গেলেন কেন? ‘‘বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ঘেঁটে ওদের খুঁজে পেয়েছি। কয়েক বছর লেগে গিয়েছে রমাকে খুঁজে পেতে। আসলে ওর স্টোরিটা খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। খুব স্ট্রাইকিংও। যত জন ট্র্যাফিকিংয়ের শিকার হন, তার মাত্র এক শতাংশকে ফিরিয়ে আনা যায়, এমনই অবস্থা এ দেশে। রমাকে উদ্ধার করা হয়েছিল তেলঙ্গানা থেকে,’’ বললেন পরিচালক।
সাধারণত এই ধরনের কাজ করতে গেলে একটু হুমকি-টুমকি শুনতে হয়। জয়ীশার অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য রকম। বলছিলেন, ‘‘ভাগ্যিস সে রকম কিছু হয়নি। বরং উল্টোটা হয়েছে। অনেকের সাহায্য পেয়েছি। কেউ রেগে-টেগে যায়নি, এটুকু বলতে পারি। হ্যাঁ, ট্র্যাফিকিং সিন্ডিকেট থেকে একটু ঝামেলা হতে পারত। তবে সেভাবে হয়নি।’’ ভয় পাওয়াটা তো তাঁর সাজে না। একের পর এক অনালোচিত বিষয় নিয়ে কাজ করে চলেছেন তিনি। বার্লিন, নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তাঁর কাজ প্রশংসিতও হয়েছে ইতিমধ্যে। বলছিলেন, ‘‘হয়তো একসঙ্গে বেশি দর্শককে ছবিটা দেখাতে পারব না। একে একে দেখাতে হবে। কারণ, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি মিডিয়ামটাই অন্য রকম।’’
‘নোটস টু মাই ফাদার’ ১১ মিনিটের। ছবির এগজিকিউটিভ প্রোডিউসার গাবো আরোনা। রাষ্ট্রপুঞ্জের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর গাবো। হায়দরাবাদের ‘মাই চয়েসেস ফাউন্ডেশন’এর মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন হেড হ্যানা নরলিং’ও ছবিটি সহ-প্রযোজনা করেছেন। ‘‘সেক্স ট্র্যাফিকিং খুব জটিল এবং ভয়ঙ্কর জাল। এই ছবিটা দিয়ে সেগুলোই বোঝানোর চেষ্টা করেছি,’’ বললেন তিনি।
ভারতে দু’কোটি যৌনকর্মীর মধ্যে এক কোটি ৬০ লক্ষ মহিলা সেক্স ট্র্যাফিকিংয়ের শিকার। কাজেই এ ছবির বিষয়টা কিন্তু বেশ ‘অ্যালার্মিং’!