যুগের অমোঘ নিয়মে হারিয়েছে জমিদার ও জমিদারি। ধসে পড়েছে বাড়ির দেওয়াল, ছাদ। কিন্তু টিকে রয়েছে জমিদার বাড়ির প্রাচীন দুর্গা পুজো। বয়স প্রায় ২৩০ বছর!
অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের ক্ষমতা ক্রমশ কমতে শুরু করে। ব্রিটিশ শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া অতিরিক্ত করের বোঝা টানতে না পেরে মল্ল রাজত্বের একের পরে এক তালুকের নিলাম শুরু হয়। সেই সময়েই জমিদারির শুরু ময়নাপুরের মুখোপাধ্যায় পরিবারের।
বিষ্ণুপুরের শেষ মল্ল রাজা চৈতন্য সিংহের দেওয়ান ছিলেন ময়নাপুরের বাসিন্দা চণ্ডীচরণ মুখোপাধ্যায়। তাঁর আমলেই ময়নাপুর তালুকের জমিদারি স্বত্ব লাভ করে এই পরিবার। এর পর থেকেই ফুলে ফেঁপে ওঠে জমিদার বাড়ির কোষাগার। আড়ে-দৈর্ঘ্যে বাড়তে থাকে ভদ্রাসনও। এমন সময়েই স্বপ্নাদেশে, মাত্র একদিনের আয়ে দুর্গা দালান প্রতিষ্ঠা করে শুরু হয় মুখোপাধ্যায় বাড়ির পারিবারিক দুর্গা পুজো।
এক সময়ে বিশাল জমিদার বাড়ির সদস্য ও তালুকের প্রজায় পুজার চারদিন গমগম করত জমিদার বাড়ির দুর্গা দালান। ঝাড়বাতির আলো, যাত্রাপালা, রামায়ণ গান— এ সবের পাশাপাশি চারদিন ধরে চলত ভোজ। এখন সে সব ইতিহাস। তবে পূর্বপুরুষের সৃষ্টি করা পুজোকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চলেছে ময়নাপুর জমিদার বাড়ির প্রাচীন দুর্গোৎসব।
নানা স্মৃতি জড়িয়ে ময়নাপুরের জমিদারদের প্রাসাদ এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে ধ্বংসস্তূপ হয়ে। সেই প্রাচীন প্রাসাদের মাঝেই জমিদার বাড়ির পুজো টিকে রয়েছে সদস্যদের হাত ধরে। জীবন-জীবিকার তাগিদে দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন জমিদারবাড়ির সদস্যরা। কিন্তু পুজো এলেই তাঁরা ফিরে আসেন নিজেদের ভিটেয়।
জমিদারি না থাকায় পুজোর বহর কমেছে। তা সত্ত্বেও পুজোর দিনগুলোতে যেন ফিরে পাওয়া যায় সেই প্রাচীন জমিদার বাড়ির ঐতিহ্যকে।