আমাদের রাজ্যের মেয়েরা অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার ইতু ঠাকুরের পুজো করে থাকেন। ইতু পুজোর নিয়ম প্রসঙ্গে বলা হয়েছে কার্ত্তিক মাসের সংক্রান্তি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তি পর্যন্ত পুজোর নিয়ম। অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবারে পুজো করে সংক্রান্তির দিন পুজো সম্পাদন করতে হয়। অর্থাৎ ইতুকে বিসর্জন দিতে হয়।
ইতু আসলে কে? ইতুর এক নাম মিত্র। অগ্রহায়ণ মাসে সূর্য মিত্র নামেই পরিচিত। প্রধানতঃ রবিবার পুজো করা হয় বলে সূর্যের পুজো বলা হয়। অবশ্য ইতু পুজোকে সূর্য উপাসনা বলা হলেও এই পুজোর রীতিও উপাচার বিশ্লেষণ করে ইতুকে মাতৃকাদেবী রূপেই গণ্য করে অনেকে। আসলে ইতুর ঘটের গায়ে পুতুলি আঁকা এবং ভেতরে শস্যদানা ও তৃণগুচ্ছ রাখা আর প্রতীকী শষ্যক্ষেত্র মাতৃপ্রতীক বলেই মনে হয়।
কার্ত্তিক সংক্রান্তির আগে থেকেই ইতুর পাত্র ও ঘটের পসরা কেনার জন্য মেয়ে বৌরা কুমোরের দোকানে ভীড় করেন। খড়ের বিঁড়ের উপরেই ইতুর সরাকে বসানো হয়। সরাতে দেওয়া হয় মাটি। মাটি পূর্ণ সরা বা গামলার মাঝে একটি ঘট স্থাপন করতে হয়। বাকী অংশে কলমী, সরসে, শুষনীর মূলসহ শাক, ধানের বীজ, মানকচুর মূল লাগানো হয়। আর ছোলা মটর মুগ তিল যব সহ আট রকমের 'শস্যও ছড়ানো' হয়। ইতুর গাছগুলোকে বাঁচানোর জন্য সরা বা গামলার মধ্যবর্তীস্থানে রাখা ঘটটিতে জল দেওয়া হয়। প্রতি রবিবার পুজোর সময় এই জল দিয়ে থাকে মেয়েরা।
মেয়েরা নিজেই এই পুজো করে থাকেন। প্রার্থনা জানান, যে জ্যোতির দ্বারা তুমি অন্ধকার নষ্ট কর এবং যে কিরণের দ্বারা সমস্ত বিশ্ব জগৎ প্রকাশ কর, তার দ্বারা আমাদের সর্বপ্রকার দরিদ্রতা নষ্ট কর, আমাদের পাপ, রোগ ও দুঃস্বপ্ন দূর কর। ইতুকে সাধভক্ষণের প্রথাও রয়েছে কোথাও কোথাও। সেদিন নতুন গুড় ও চাল দুধ দিয়ে পরমান্ন তৈরি করে নিবেদন করা হয়।
ইতুপুজো প্রসঙ্গে ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য তাঁর বাংলার লোকনৃত্য গ্রন্থে বলেছেন, সূর্যব্রত ভারতের সকল নারী সমাজের একটি প্রধান ব্রত। সূর্য উর্বরা শক্তির আধার, সূর্যের আশীর্বাদে নারী সন্তান লাভ করে থাকে এবং সূর্যের অভিশাপেই নারী বন্ধ্যাত্বপাপ্ত হয়। সুতরাং সূর্যকে প্রসন্ন করতে না পারলে নারী কদাচ সন্তানের জননী হতে পারে না। সেজন্য সূর্যকে প্রসন্ন করার চেষ্টা।