কার্তিক মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিকে 'ভূতচতুর্দশী' বলে। পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান ও মালদহ জেলার কোনও কোনও স্থানে এদিন ভূত উৎসব হয়।
এই দিনটিকে ‘ভূতচতুর্দশী’ বলা হয় এই কারণে, মহালয়ার তর্পণের সময়ে পিতৃপুরুষগণ সেই যে যমলোক ছেড়ে মর্তলোকে আসেন, এই চতুর্দশীর দিনেই তাঁদের ফেরার পালা আরম্ভ হয়। তাঁদের পথ দেখানোর জন্য আমরা এই দিনে ১৪ পুরুষের উদ্দেশ্যে ১৪টি প্রদীপ জ্বালাই।
এই ১৪ পুরুষ হচ্ছেন, পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতা, পিতামহী ও প্রপিতামহী, মাতামহ, প্রমাতামহ ও বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতামহী, প্রমাতামহী ও বৃদ্ধপ্রমাতামহী। এছাড়াও শ্বশুর ও শাশুড়ি। আমাদের রাজ্যে ভূতচতুর্দশীর সন্ধ্যায় গৃহে ১৪টি প্রদীপ এই মৃত আত্মাদের উদ্দেশ্যে জ্বালানো হয়।
পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা এবং মালদহের কোনও কোনও স্থানে ভূত উৎসব হয়। ভূত চতুর্দশীতে অশুভ আত্মার হাত থেকে বাঁচতে যে মন্ত্র পাঠ করা হয়, তা এই— "শীতলঞ্চ সমাযুক্ত সকন্টক দলান্বিত। হরপাপ সপামার্গে ভ্রাম্যমাণঃ পুনঃ পুনঃ"। এই মন্ত্র পাঠ করলে আর অশরীরী থেকে ভয় থাকে না। বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় এই চতুর্দশীর নাম "চৌর চতুর্দশী"। ওই দিন কিছু না কিছু চুরি করতেই হয়। 'চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড় ধরা'। অবশ্য এই দিন ধরা পড়লেও শাস্তি মুকুব।
এই চতুর্দশীকে ‘যম চতুর্দশী’ও বলে কারণ এই দিন ১৪ জন যমের উদ্দেশ্যে তর্পণ করতে হয়। মহালয়া অমাবস্যায় যমদের তর্পণ করতে হয় না। এই তর্পণ হয় এই চতুর্দশী তিথিতে। আজ পর্যন্ত এই ১৪ জন যমরাজ হলেন, ধর্মরাজ, মৃত্যু, অন্তক, বৈবস্বত, কাল, সর্বভূতক্ষয়, যম, উডুম্বর, দধ্ন, নীন, পরমেষ্ঠী, বৃকোদর, চিত্র ও চিত্রগুপ্ত। ‘পদ্মপুরাণ’মতে, এই তিথিতে গঙ্গাস্নান করলে আর নরকদর্শন করতে হয় না।