কর্মজীবনে প্রতি মুহূর্তেই আমরা সমস্যা উদ্বেগ হতাশায় ভুগি। তাই ফলহারিণী কালীপুজোর দিন মধ্যরাতে মাকে একটু স্মরণ করলেই সব বাধা নিমেষে দূর হয়ে যায়। মা দয়াময়ী, তাই তিনি আমাদের সমস্ত সমস্যা, হতাশা, কষ্ট, দুঃখ, দৈন্য হরণ করে সুখ ও আনন্দ দেন।
মা কালী নানারূপে, নানা নামে পুজো পেয়ে আসছেন। কালী সাধকের ভাবনা অনুসারে রক্ষাকালী, শ্মশানকালী, রটন্তীকালী, ভদ্রকালী— এই রকম নানা রূপে তিনি পূজিতা হন।
মহামারী, অনাবৃষ্টি বা বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে মানুষ রক্ষাকালী পুজো করে। কার্তিক মাসে দক্ষিণাকালীর পুজোয় সকলের সার্বিক কল্যাণ হয়। আর ফলহারিণী কালীপুজো করলে আমাদের প্রত্যেকের বিদ্যা, কর্ম ও অর্থভাগ্যের উন্নতি ঘটে। প্রেম-প্রণয়ে বাধা দূর হয়। দাম্পত্য সাংসারিক জীবনেও সুখশান্তি লাভ হয়।
আমাদের ভাগ্যে ভাল মন্দ অসংখ্য কর্মফল রয়েছে। আমরা তাঁর স্বরূপ বুঝতে পারি না। কারণ, ভাল মন্দ কর্মফল আমাদের অজান্তেই ঘটে চলেছে। পাপ পূণ্যের এই খেলায় যখন যেদিকে পাল্লা ভারী হয়, তখন তার প্রকোপ ঘটে। পাপের ফলে আমরা দুঃখ ভোগ করি আবার পূণ্যের ফলে আমরা আনন্দ ভোগ করি, সুখ ভোগ করি। ফলহারিণীর স্মরণ বা পুজোর ফলে আমাদের মন্দভাব দূরীভূত হয়।
বাঙালি জীবনে ফলহারিণী কালী পুজোর তাৎপর্য লুকিয়ে রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনে। ঠাকুর এই দিনেই তার সমস্ত সাধনার ধন আপন স্ত্রীকে দেবী রূপে পুজো করেছিলেন জগৎ কল্যাণের জন্য। ১২৮০ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যার নিশিথে তিনি দক্ষিণেশ্বরে আদ্যাশক্তির সগুণরূপের পুজো করেছিলেন।
ঠাকুর ফলহারিণী কালী পুজোর দিন শ্রীমা সারদাকে ষোড়শীরূপে পুজো করেছিলেন বলে আজও রামকৃষ্ণমঠ ও আশ্রমে এই পুজো 'ষোড়শী' পুজো নামে পরিচিত। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তার মোক্ষপ্রাপ্তির জন্য এই নিয়মে পুজো করলেও আমরা অমাবস্যায় এই পুজোর দিন প্রার্থনা জানিয়ে বলব— মা আমাদের অর্থভাগ্য কর্মভাগ্য সংসার জীবনে সুখশান্তি প্রদান করুন।