রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় নরেন্দ্র মোদীদের হাতছাড়া হওয়ায় অনেকেই একে ‘গণতন্ত্রের জয়’ বলে ভাবছেন। তাঁরা ভাবছেন, এই রায়ে গরিব, কৃষক, সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ক্ষোভই প্রতিফলিত হয়েছে।
অনেকের মতে, এবার উচিত শিক্ষা হয়েছে বিজেপি ও সংঘ পরিবারের। হিন্দুত্ববাদীরা এই বার মুখ লুকিয়ে পালাবেন। তাঁরা আসলে ভুল ভাবছেন। আর তাঁদের ভুল বোঝাচ্ছেন বিরোধী রাজনীতিকরা।
পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হলেও এতে আসলে হিন্দুত্ববাদীদের হাতই শক্ত হল। আগামী দিনে তাই সাম্প্রদায়িক লাইনে ভোট চাওয়া-পাওয়ার খেলা তীব্রতর হবে।
একটা ব্যাপার অনেকেই লক্ষ্য করেছেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ থেকে সাধু-সন্তদের সংগঠন, এমনকী শিবসেনার মতো রাজনৈতিক দলও উঠে পড়ে লেগেছে রামমন্দির তৈরি করতে।
আদালতকে এড়িয়ে কীভাবে বিজেপি অর্ডিন্যান্স আনতে পারে এবং তার মাধ্যমে রামমন্দির তৈরি করতে পারে, সেই আলোচনাও জোরদার হয়েছে গত এক মাসে।
এই ফলের পরে সঙ্ঘ পরিবারে মোদীর তেজ একটু হলেও কমবে। তাঁর উপরে নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে চাইবে গেরুয়া সংগঠনগুলি। মোদীও বাঁচার রাস্তা খুঁজতে আঁকড়ে ধরতে চাইবেন হিন্দুত্বের জিগির।
কালো টাকা, উন্নয়ন, দুর্নীতি, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে তো অনেক প্রচার হল। তাতে পাঁচ রাজ্যে কতটা আর সুবিধা করতে পারল বিজেপি! সুতরাং হিন্দুত্বের রাস্তাই সহজ রাস্তা হতে পারে বিজেপির পক্ষেও। কারণ, হাতে মাত্র মাস চারেক। সামনেই ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন।
অন্যদিকে, ভারতের রাজনীতির আখ্যানই তো বদলে দিয়েছে বিজেপি-সংঘের হিন্দুত্ব ব্রিগেড। বিজেপির আগ্রাসী হিন্দুত্বের মোকাবিলা করতে আর সেকুলার অস্ত্র কাজ করে না। যেটি কাজ করে তা হল ‘নরম হিন্দুত্ব’।
তাই তো তৃণমূল নেত্রী ছোটেন কপিলমুনির আশ্রমে। দিঘার কাছে জগন্নাথ মন্দিরের পরিকল্পনা করা হয়। লোকনাথ বাবার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। ব্রিগেডের প্রস্তুতি সভার অজুহাতে বাতিল হয় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদে বার্ষিক সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সভা।
অন্যদিকে, ভোটের প্রচারের সময়ে মন্দিরে মন্দিরে ছুটতে হয় কংগ্রেস সভাপতিকে। রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে মোদী সরকারের দুর্নীতির অভিযোগকে সারা ভারতে ছড়িয়ে দিতে পারেন না তিনি। শুধুই কৃষক বিক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে ভোটে জেতার স্বপ্ন দেখতে পারেন না রাহুল।
আর যে বামেরা সেকুলার রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন তারা তো এখন ভারতের নির্বাচনী রাজনৈতিক পরিসরে প্রান্তিক শ্রেণি হয়ে গেছেন।
সুতরাং, এই ‘নরম হিন্দুত্বের’ ফাঁদে মমতা-রাহুলদের ফেলে দিয়ে নিজেদের জয়ই দেখছে গেরুয়া শিবির। রামমন্দিরের আন্দোলন জোরালো হলে মোদী-বিরোধীরা কী অবস্থান নেবেন, ভেবে দেখুন।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে লড়াই তাই আগ্রাসী হিন্দুত্ব বনাম নরম হিন্দুত্বেরই হবে। সেই লড়াই শুধুই গণতন্ত্র বাঁচানো, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, গরিব মানুষের কর্মহীনতা, কৃষক, দলিত, সংখ্যালঘুদের ক্ষোভের লড়াইয়ে পরিণত করতে পারবেন তো বিরোধীরা?