আসন সংখ্যার হিসাব বলছে, গত ২২ বছরে গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচনে এটাই বিজেপি’র সবচেয়ে খারাপ ফল। ইতিহাস বলছে, এর আগে কখনওই গুজরাত জয়ের পরে এতটা ‘সরব’ হতে দেখা যায়নি বিজেপি’র
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে!
পরিবর্তনের ধারাপাতে কংগ্রেসের থেকে হিমাচলপ্রদেশ ছিনিয়ে নিলেও বিজেপি’র ঘোষিত মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী প্রেমকুমার ধুমল এবং দলের রাজ্য সভাপতি সতপাল সিংহ সাট্টি ভোটে হেরেছেন। বিজেপি নেতৃত্বের কাছে যা অস্বস্তির বলেই মনে করা হচ্ছে। দুই রাজ্যে ভোটের ফল প্রকাশের পরে সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ‘চড়া প্রতিক্রিয়া’ সেই ‘অস্বস্তি’ ঢাকার প্রয়াস বলেই দাবি রাজনীতির কারবারিদের একাংশের। বস্তুত, ভোটগণনা চলাকালীনই যেভাবে মোদী এদিন আঙুল তুলে ‘ভি’ দেখিয়েছেন, কখনও কোনও প্রধানমন্ত্রী দেশের একটি অঙ্গরাজ্যের বিধানসভা ভোটে এমন ‘কাণ্ড’ ঘটিয়েছেন কি না, মনে করতে পারছেন না তাঁরা। এই প্রসঙ্গে আলোচনায় এসেছে মোদীর ছেলেবেলার সেই ‘চা বিক্রি’র জনপদ বড়নগরে (উনঝা কেন্দ্র) বিজেপি প্রার্থীর বিপুল ভোটে পরাজয়ের কথা!
‘তাৎপর্যপূর্ণভাবে’ দিল্লির অশোক রোডে, বিজেপি’র সদর দফতরে এদিন অমিতের সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীনই মোদীর নামে জয়ধ্বনি শুরু করেন দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ! তাঁদের উদ্দেশে অমিতকে বলতে হয়, ‘‘মোদীজি একটু পরেই বলবেন। তার আগে আমাকে একটু বলতে দিন!’’
উচ্ছ্বাস: সোমবার দিল্লিতে সদর দফতরে অমিত শাহ।
পিটিআই
গুজরাত ভোটের প্রচারপর্বে মোদী, অমিত-সহ বিজেপি’র নেতা-নেত্রীরা মেরুকরণের প্রসঙ্গ উস্কে দিয়েছেন। অথচ, জয়ের পরে এদিন সকলের মুখে ছিল ‘উন্নয়নে’র কথা। প্রসঙ্গত, গুজরাতে মোদী ৩৮টি সভা করেছেন। ভোটের আগে কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেলকে মুখ্যমন্ত্রী করতে ‘পাকিস্তানের সক্রিয়তা’র কথা বলে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন তিনি। এদিন সদর দফতরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জাতপাতের রাজনীতি এবং চক্রান্তের অভিযোগ তুলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই জয় সামান্য
নয়, অসামান্য।’’
অমিত এদিন বলেন, ‘‘গুজরাতে জয় হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীজির উন্নয়নের রাজনীতির। পরিবারতন্ত্র, জাতপাত আর তোষণের রাজনীতি পরাজিত হয়েছে।’’ ভোটের প্রচারে রাহুল গাঁধীর ‘ধর্মীয় পরিচয়’ নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুললেও এদিন বিজেপি সভাপতি বা তাঁর দলের কোনও নেতা সে প্রসঙ্গ টানেননি। এরইমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর টুইট, ‘মানুষের এই রায় মাথা পেতে গ্রহণ করছি। মানুষ বিজেপি’কে ভোট দিয়েছে। সুশাসনের প্রতি ফের
আস্থাজ্ঞাপন করেছে।’’
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের ফলের হিসাবে গুজরাতের ১৮২টি আসনের মধ্যে ১৬৫টি’তে এগিয়েছিল বিজেপি। ‘ব্র্যান্ড মোদী’ আর ‘গুজরাত মডেল’ নিয়ে ধারাবাহিক প্রচারের পরেও কোনওক্রমে সরকার ধরে রাখার বিষয়টি আগামী দিনে বিজেপি নেতৃত্বকে চাপে রাখতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনীতির
কারবারিদের একাংশ।