এটিএম-এর সামনে লম্বা লাইন। নগদ অর্থের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পায়ে ব্যথা। তবু কুছ পরোয়া নেই। যদি, নগদ ২ হাজার বা ২৫০০ টাকা পাওয়া যায়। এটিএম-এর দরজার যখন পৌঁছলেন, তখন দেখা যাচ্ছে মেশিনে ‘আউট অফ ক্যাশ’ লেখা ফুটে উঠেছে। ব্যর্থমনোরথে কারোকে গালমন্দ করতে করতে বাড়ির রাস্তা ধরা ছাড়া গতন্তর নেই।
আরবিআই-এর দাবি, তারা ব্যাঙ্কগুলোকে পর্যাপ্ত নোট পাঠাচ্ছেন যাতে এটিএম-গুলোকে টাকায় ভর্তি করে রাখা যায়। কিন্তু, এখনও দেশের অন্তত ৬০ শতাংশ এটিএম কাজ করছে না। ক্যাশহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অভিযোগ উঠছে, ব্যাঙ্কগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্যাশ ধরে রাখছে। তাঁদের সমস্ত এটিএম-এ ঠিক করে টাকা ভর্তি করছে না। এমনকী, এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের নাম না জানানো এক্সিকিউটিভও স্বীকার করেছেন, ব্যাঙ্কে নগদ বেশি করে মজুত রাখা হচ্ছে নিজেদের গ্রাহককে বেশি করে পরিষেবা দেওয়ার জন্য। আর এই কারণে এটিএম-এ টাকা ভর্তি করা হচ্ছে না। এটিএম-এ টাকা ভর্তি করা মানে অন্য ব্যাঙ্কের গ্রাহকও সেখান থেকে ক্যাশ নিয়ে চলে যাবে।
আরও পড়ুন...
আরবিআই-এর নয়া নিষেধাজ্ঞা, কিছু অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা যাবে না টাকা
বিপুল ক্ষতির মুখে পেটিএম, গ্রাহকরা আতঙ্কে পড়তেই পারেন
২০০০ টাকার নোটে সত্যি ট্র্যাকার ? ট্র্যাকিং এড়ানোর কৌশলও ‘আবিষ্কার’ হয়ে গিয়েছে
ব্যাঙ্ক ভর্তি টাকা, এটিএমে গাদা গাদা ক্যাশ, তবুও খাঁ-খাঁ করছে পটনার এই ব্যাঙ্ক
মোদীর ডিজিটাল টিমকে চিনে নিন, নোটবাতিলের মতো আরও বড় পরিকল্পনা আছে এঁদের
১৫ দিনে উদ্ধার হওয়া ২২৭ কোটি কালো টাকা কত লক্ষ মানুষের দুর্ভোগ বাড়াল?
টিএম-এ ক্যাশ ভর্তি করা সংস্থার দাবি, ১০ শতাংশ কম করে টাকা দিচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি। নোটবাতিলের আগে এক একটি এটিএম-এ দিনে ৫০ লক্ষ টাকা ভর্তি করা হতো। এখন সেখানে দিনে এটিএম প্রতি ৪,৫০,০০০ থেকে ৫,৫০,০০০ টাকার বেশি ভর্তি করা হচ্ছে না। ফলে অধিকাংশ গ্রহককেই এটিএম থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে।
দেশজুড়ে এখনও অধিকাংশ এটিএম কাজ করছে না, এই অভিযোগ মানতে রাজি নন অর্থনীতি বিষয়ক কেন্দ্রীয় সচিব শক্তিকান্ত দাস। তাঁর দাবি, সমস্ত এটিএম-ই পুরো শক্তিতে কাজ করছে।
নোটবাতিলের পর থেকেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টাকার সরবরাহে অনেকটা রাশ টেনেছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করা হচ্ছে যাতে মানুষ ডিজিটাল পেমেন্টের দিকে ঝোঁকে। শীর্ষ ব্যাঙ্কের এই অবস্থানেরই সুযোগ নাকি নিচ্ছে ব্যাঙ্কগুলো। আর এই সুযোগে ব্যাঙ্কগুলো প্রভাবশালী গ্রাহকদের বেশি করে নগদ সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ। বাণিজ্যমহলের একটি সূত্র এমনও দাবি করছে, ৯০ শতাংশ নগদ ব্যাঙ্কগুলো নিজেদের কাছে ধরে রাখছে। এমনও নাকি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অর্থবান ও প্রভাবশালী এবং ব্যাঙ্কের সঙ্গে সবসময় লেনদেন করেন, এমন গ্রাহকদেরই বেশি করে নগদ সরবরাহ করতে। কিছু গ্রাহক এইচডিএফসি, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের কাছে কত টাকা দেওয়া হচ্ছে— এমন একটা প্রশ্নাবলি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু, তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
আরবিআই সূত্র বলছে, নোটবাতিলের পর থেকে এখনও পর্যন্ত সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকা ব্যাঙ্কগুলোকে দেওয়া হয়েছে। আগে দেশের সমস্ত এটিএমে ক্যাশ ভরতে ১৫ হাজার কোটি টাকা লাগত। ব্যাঙ্কগুলো এই অঙ্ক ২০ হাজার কোটি টাকাতে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, এর পরেও গ্রাহকরা টাকা পাচ্ছেন না।