শুনে বোঝার উপায় নেই, এটি বিদায়ী সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেট। বোঝাই গেল না, নির্বাচনের পরে নতুন সরকার গঠন পর্যন্ত খরচ চালানোর ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ। মনে হল, যেন গোটা বছরের জন্যই বাজেট পেশ করলেন পীযূষ গয়াল। কথায় কথায় টেবিল চাপড়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অনেক আগে থেকেই ভাবা ছিল, ভোটের আগের বাজেটে কৃষকদের খুশি করবেন মোদী। অন্যথা হল না। তিন রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই জল্পনা ছিল— কৃষি ঋণ মকুব করতে পারে কেন্দ্র। কিন্তু কংগ্রেসের দেখানো পথে না হেঁটে অন্য রাস্তা নিল মোদী সরকার।
গরিব কৃষকদের অর্থনৈতিক সহায়তার প্রয়োজন মেটাতে প্রকল্প ‘পি এম কিষান’। ২ হেক্টর পর্যন্ত জমিতে চাষ করেন এমন ছোট এবং মাঝারি কৃষকরা বছর সরাসরি ৬ হাজার টাকা করে পাবেন। সেটাও আবার তিন দফায় ২ হাজার টাকা করে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে। আবার সেই টাকা যাতে ভোটের আগেই কৃষকের অ্যাকাউন্টে ঢোকে তার জন্যও ব্যবস্থা রইল গয়ালের বাজেট প্রস্তাবে। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর হচ্ছে ওই প্রকল্প। ফলে ভোটের ঠিক মুখে মুখে দেশের ১২ কোটি কৃষকের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে ২ হাজার টাকা।
এর পরেই মোদীর টার্গেট ছিল শ্রমিকদের খুশি করা। তাতেও কার্পণ্য দেখাননি গয়াল। নতুন প্রধানমন্ত্রী শ্রমিক বন্ধন প্রকল্পে মাসিক ১৫ হাজার টাকা আয় করেন, এমন অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের অবসরের পরে মাসে তিন হাজার টাকা করে নিশ্চিত পেনশন পাবেন। এর জন্য মাসে মাসে দিতে হবে মাত্র ৫৫ টাকা করে। শ্রমিকদের মৃত্যু হলে দ্বিগুণ পিএফ পাওয়া যাবে। গ্র্যাচুইটির সীমা দশ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে করা হলো তিরিশ লক্ষ টাকা।
তবে মধ্যবিত্তকে মহা খুশি করলেন নরেন্দ্র মোদী। আয়কর ছাড়ে এল বড় পরিবর্তন। উর্দ্ধসীমা সাড়ে তিন লাখ থেকে এক লাফে ৫ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে অন্যান্য সুবিধা মিলে সাড়ে ছ’লাখ টাকা পর্যন্ত রোজগারে আয়কর দিতেই হবে না। প্রবীণ নাগরিকরা এবার থেকে আয়করের আওতার বাইরে থাকছেন।
বাজেটের আগেই উচ্চবর্ণের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করে মধ্যবিত্তের বড় অংশের মন জেতার চেষ্টা সেরে রেখেছে মোদী সরকার। এমনকী, স্কুল স্তরেও আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা উচ্চবর্ণের জন্য ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মধ্যবিত্তকে আরও একটি সুখের লোভ দেখানো রইল বাজেট বক্তৃতায়। বাড়ি, ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে যাতে জিএসটি কমে তার জন্য সরকারের পক্ষে জিএসটি কাউন্সিলকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানালেন পীযূষ গয়াল।
‘উরি’ সিনেমা নিয়ে ভোটের মুখে জাতীয়তাবাদ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে বলে অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন। এবার গয়ালের বাজেটেও ‘জয় জওয়ান’ স্লোগান শোনা গেল। এ পর্যন্ত দেশে প্রতিরক্ষা খাতে এত বরাদ্দ আগে কখনও হয়নি। অন্তর্বর্তী বাজেটে তিন লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করল মোদী সরকার।
বাদ যায়নি গোবলয়কে খুশি করার চেষ্টাও। উত্তরপ্রদেশে ইতিমধ্যেই জোটবদ্ধ সপা, বসপা। রাজনৈতিক চাপে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়ে ক্ষমতা হারাতে হয়েছে বিজেপিকে। এই পরিস্থিতিতে ‘গোমাতা’-কে খুশি করাও লক্ষ্য রইল বিজেপির বাজেটে। বাজেটে ঘোষণা করা হল ‘রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন’। যেখানে আগামী এক বছরের জন্য ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে, মোদীর ভোট-বাজেট আসলে খুশির বাজেট। ক্ষমতায় ফিরতে যে এই বাজেটই মোদী সরকারের বড় হাতিয়ার হবে সেটা না বলেই বুঝিয়ে দিল এনডিএ সরকার।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এমন বাজেটের পরে সমালোচনার মুখই রইল না বিরোধীদের। সকল শ্রেণিকে খুশি করার কথা বলে রাখায় দেশের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে বিরোধীরা। এটাও বলতে পারে যে, ভোটারদের খুশি করতেই মিথ্যা চমক বিজেপির। কিন্তু সরাসরি বিরোধিতা করলে সেটা ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে।