তাঁকে বলা হচ্ছে ইউরো কাপের বোমারু বিমান। সাইডলাইন থেকে লম্বা লম্বা থ্রো বোমার মতোই আছড়ে পড়ে প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে। বক্সের মধ্যে ওঁত পেতে থাকেন তাঁর দু’তিনজন সতীর্থ। কেউ হেড করবেন, কেউ শট নেওয়ার জন্য তৈরি।
ফুটবলে আধুনিকতার যুগে ডাইনোসর যুগের ‘থ্রো-ইন’ নকশায় বাজিমাত করে চলেছে আইসল্যান্ড। আর যিনি ইউরোর জায়ান্টকিলারদের হয়ে এই বোমাবর্ষণ করে চলেছেন, তাঁর নাম আরন গুনার্সন। সেই গ্রুপ লিগ থেকে শুরু করেছেন, ইংল্যান্ডকে বধ করার পিছনেও তাঁর থ্রো’র বড় ভূমিকা ছিল।
রয় হজসন যেমন আতঙ্কে ভুগছিলেন আইসল্যান্ড ম্যাচের আগে তাঁকে নিয়ে, এখন তেমনই উদ্বেগে দিদিয়ে দেশঁ। আজ, রবিবার কোয়ার্টার ফাইনালে গুনার্সনের থ্রো-কে অন্যতম কঠিন বাধা বলেই মনে করছেন ফরাসি কোচ। ‘‘আমরা জানি ওরা নীচু, লম্বা থ্রো-ইন খুব ব্যবহার করছে। ওটা ওদের অস্ত্র। প্রায় প্রত্যেক ম্যাচেই এই অস্ত্র ওরা সফলভাবে ব্যবহার করছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’’ কীভাবে গুনার্সনদের বোমাবর্ষণ থামাবেন? দেশঁ বলছেন, ‘‘গোলের ৩০-৪০ গজের মধ্যে থ্রো-ইন কিন্তু সেট পিসের সমান। বিপজ্জনক হতেই পারে। আমরা এটা নিয়ে কথা বলেছি এবং কীভাবে ওদের এই অস্ত্র ভোঁতা করা যায় সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’’
ম্যাচের আগে সঙ্গত কারণেই দেশঁ ভাঙতে চাননি, তাঁদের পাল্টা চাল কী হতে যাচ্ছে আইসল্যান্ডের থ্রো-ইন (কেউ কেউ মজা করে বলছেন, থ্রো-ইন নয় আসলে থ্রো-আউট। কারণ, থ্রো অস্ত্রেই একের পর এক টিমকে ইউরো থেকে ‘আউট’ করে দিচ্ছে আইসল্যান্ড) অস্ত্রকে ভোঁতা করার জন্য। কিন্তু ফরাসি দলের অন্দরে যে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সত্যিই হয়েছে, তা কোচের কথাতেই পরিষ্কার। তিনি বলেছেন, ‘‘ওরা জানে খুব বেশি কর্নার আদায় করতে পারবে না। তাই সেট-পিস হিসাবে থ্রো-ইন’কেই কাজে লাগাচ্ছে।’’ দেশঁ আরও জানিয়েছেন যে, তাঁদের পুরো দল আইসল্যান্ডের ম্যাচের ভিডিও দেখে সতর্ক থাকার চেষ্টা করছে।
ইংল্যান্ডের রয় হজসন থেকে ফ্রান্সের দিদিয়ে দেশঁ— যে অস্ত্র নিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছেন, তার উৎপত্তি আদৌ ফুটবল থেকে নয়। গুনার্সন নিজেই জানিয়েছেন, ছোটবেলায় তিনি হ্যান্ডবল খেলতেন। সেখান থেকেই লম্বা লম্বা থ্রো করা শিখেছিলেন। আইসল্যান্ডের হয়ে লম্বা লম্বা থ্রো করার কী কারণ জিজ্ঞেস করায় গুনার্সনের জবাব, ‘‘আমাদের দলে এমন কয়েকজন ফুটবলার আছে, যারা ভাল হেড করতে পারে। লম্বা থ্রো তাদের জন্য খুব কাজের।’’ অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে গুনার্সনের লম্বা থ্রো থেকে গোল করেই ক্রোয়েশিয়াকে টপকে আইসল্যান্ড প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। সেই গোল এখন আইসল্যান্ডের রূপকথায় ঢুকে পড়েছে। রাতারাতি জাতীয় নায়ক করে তুলেছে গুনার্সন-কেও।
আইসল্যান্ড অধিনায়কের থ্রো-থ্রিলারে একজন চাণক্যও আছেন। কে তিনি? না, চলতি ইউরোয় সেমিফাইনালে ওঠা গ্যারেথ বেল’দের কোচ ক্রিস কোলম্যান। আট বছর আগে কভেন্ট্রিতে ম্যানেজার ছিলেন এখন ওয়েলসের কোচ কোলম্যান। সেই সময় গুনার্সনের এজেন্ট তাঁকে জানিয়েছিলেন, এই ছেলেটিকে নিতে পারেন। লম্বা লম্বা থ্রো করতে পারে। সেটা শুনেই গুনার্সনকে সই করান কোলম্যান। প্রিমিয়ার লিগে কার্ডিফের হয়েও নিয়মিতভাবে থ্রো’র বোমাবর্ষণ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। ‘‘আমি ফুটবল খেলার সিদ্ধান্ত নিই পনেরো বছর বয়সে। খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল কারণ, আমার বাবাও হ্যান্ডবলার ছিলেন।’’ তাঁর ভাই জার্মানিতে পেশাদার হ্যান্ডবলার। পুরো পরিবারই হ্যান্ডবলের। একমাত্র তিনিই স্রোতের অন্যদিকে সাঁতার কাটতে চেয়ে হয়ে গেলেন ফুটবলার। কে জানত, ফুটবল মাঠেও হ্যান্ডবলই থেকে যাবে আরন গুনার্সনের ব্রহ্মাস্ত্র হিসাবে!