একের পর এক শিকার তুলে নিয়ে উচ্ছ্বাসে তিনি শূন্যে লাফিয়ে উঠছেন। প্রত্যেকটি ডেলিভারি যেন আগুনে গোলার মতো আছড়ে পড়ছে ওড়িশা ব্যাটসম্যানদের সামনে। শান্ত, চুপচাপ কল্যাণী অ্যাকাডেমি স্টেডিয়ামে উপস্থিত শ’পাঁচেক ভক্ত একনাগাড়ে চিৎকার করে উঠছেন, ‘ডিন্ডা, ডিন্ডা...’! বাধ্য হয়ে তিনি নিজেই একটা সময় হাত তুলে জনতাকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানালেন! এমন অপূর্ব মুহূর্তের কল্পনা কে-ই বা করতে পেরেছিলেন?
ম্যাচ শেষ। গোটা বাংলা দল হাঁটা লাগিয়েছে ড্রেসিংরুমের দিকে। হঠাৎই দেখা গেল, জয়ের স্মারক স্টাম্প মাটিতে রেখে তাঁর নামে জয়ধ্বনি দিতে থাকা দর্শকদের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন ডিন্ডা। মিশে গেলেন জনতার ভিড়ে। কেউ খাতা এগিয়ে দিচ্ছেন অটোগ্রাফের জন্য। কেউ বা আবার সেলফি তোলার অনুরোধ করছেন। হাসিমুখে আব্দার মিটিয়ে ম্যাচের নায়ক ফিরে গেলেন ড্রেসিংরুমে। ‘‘ওরাই তো অনুপ্রেরণা। মুখগুলো শুধু পাল্টে যায়, কিন্তু ওদের সমর্থনের মনোভাবটা বদলায় না। আমার এই সাফল্যের সমান অংশীদার তো ওরাও,’’ বলছেন ডিন্ডা।
১০-০-১৯-৭! কল্যাণীর দুর্বোধ্য উইকেটে স্পিনারদের দাপটকে ম্লান করে দিয়ে অশোক ডিন্ডার খুনে মেজাজটাই পাল্টে দিয়েছে বাংলা শিবিরের রিংটোন।
অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারির মন্তব্য, ‘‘ওর অভিজ্ঞতা প্রচুর। এই উইকেটে কীভাবে বল করতে হয়, তা ডিন্ডার চেয়ে ভাল কেউ জানে না। ও সেটাই করেছে। আমি দারুণ আনন্দ পেয়েছি।’’ প্রজ্ঞান ওঝা বলে ফেলছেন, ‘‘অবিশ্বাস্য বোলিং। আমি মিড-অফে দাঁড়িয়ে ওর বলগুলো দেখে আতঙ্কে চোখ বন্ধ করে ফেলছিলাম। ওই ডেলিভারিগুলো খেলা যায় নাকি!’’ কোচ সাইরাজ বাহুতুলের দাবি, ‘‘ডিন্ডা বরাবরই এই টিমের সম্পদ। ম্যাচে বা প্র্যাক্টিসে ওর মতো পরিশ্রম খুব কম ক্রিকেটারই করতে পারে। আমার তো মনে হচ্ছে, ও-ই অসমের বিরুদ্ধে ছ’পয়েন্ট প্রাপ্তির স্বপ্ন নতুনভাবে উস্কে দিল।’’
ম্যাচের পঞ্চম ওভারের মাথায় বসন্ত মোহান্তির বল সুদীপের থুতনিতে লাগতেই আঁতকে উঠেছিলেন সকলে। হেলমেট থাকার জন্য বড়সড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেলেন তিনি। কিন্তু সেখানেই কেটে গেল বাংলার দ্বিতীয় ইনিংসের তাল। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে অভিমন্যু ফিরলেন। উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন শ্রীবৎস গোস্বামী (০) এবং সুদীপ চট্টোপাধ্যায় (৩৭)। কিছুটা লড়াই করলেন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি (৭২ বলে ৩৫)।
বাংলার জয়ের নায়ক ডিন্ডা (মাঝে) মাঠ ছাড়ছেন স্মারক বল, উইকেট হাতে।-নিজস্ব চিত্র
কল্যাণীর ভয়ঙ্কর উইকেটে (যেখানে দু’দিনেই পড়ে গেল ৪০ উইকেট) ১৭১ রান তাড়া করে জেতা যে অসাধ্য কাজ, সেটা জানা ছিল ওড়িশা শিবিরেরও। কিন্তু যা জানা ছিল না, তা হল অশোক ডিন্ডার রুদ্ররোষ। নিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম ডেলিভারিটা লাফিয়ে উঠে এল রঞ্জিৎ সিংহের বুকের বাঁদিকের পাঁজরের উচ্চতায়। নিজেকে বাঁচাতে পারলেন না ওড়িশার ওপেনার। ব্যাটে বল লেগে চলে গেল ফরওয়ার্ড শর্ট লেগে দাঁড়ানো প্রমোদ চাণ্ডিলার হাতে। শুরু হয়ে গেল ডিন্ডার সংহার। কখনও বিদ্যুতের গতিতে বল ভিতরে ঢুকে আসছে। কখনও আবার ভয়ঙ্কর বাউন্স এবং গতিতে দিশাহারা নটরাজ বেহরা-রা। ম্যাচের ১৪ তম ওভারে পরপর দু’টি বলে সূর্যকান্ত বেহরা এবং বসন্ত মোহান্তিকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক করার সুযোগও তৈরি হয়ে গেল। কোনওক্রমে ডিন্ডার ডেলিভারি সামলালেন ধীরাজ সিংহ! যা নিয়ে স্বয়ং ডিন্ডার ব্যাখ্যা, ‘‘আমি কিন্তু উইকেটের চরিত্র নিয়ে মাথা ঘামাই না। মনে হয়েছিল, এই পিচেও সাফল্য পেতে পারি। সেটাই করে দেখালাম!’’ যোগ করলেন, ‘‘শুধু আফশোস হচ্ছে হ্যাটট্রিকটা পেলাম না!’’
৭ ম্যাচ থেকে বাংলার এখন ২৫ পয়েন্ট। তারাই ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষে। ডিন্ডাদের শেষ ম্যাচ অসমের বিরুদ্ধে অসমে। তারাও নক-আউটের দৌড়ে রয়েছে। সহজ অঙ্ক বলছে, যারা অন্তত তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করতে পারবে, তাদেরই নক-আউটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।