১৯৮৬ বিশ্বকাপের মহানায়ক একজনই। তিনি দিয়েগো মারাদোনা। মেক্সিকোয় মারাদোনার সেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের গোল সামলানোর দায়িত্ব ছিল নেরি পুম্পিদোর উপরে। চার বছর বাদেই উলটপুরাণ ঘটে তাঁর জীবনে। ইতালি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পুম্পিদোর দোষেই আর্জেন্টিনা হার মানে ক্যামেরুনের কাছে। দ্বিতীয় ম্যাচেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে পা ভাঙে পুম্পিদোর। সে এক চরম খারাপ সময় পুম্পিদোর ফুটবল কেরিয়ারে। তার পরে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। ১৯৮৬ সালের পরে বিশ্বকাপ আর যায়নি বুয়েনোস এয়ারসে। এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপেও লিওনেল মেসিরা ব্যর্থ। কেন ব্যর্থ হল আর্জেন্টিনা? মারাদোনা আর মেসির মধ্যে সেরা কে? সব প্রশ্নের জবাব এবেলা.ইন-এর প্রতিনিধি কৃশানু মজুমদারকে দিলেন মারাদোনার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের গোলকিপার নেরি পুম্পিদো।
প্রশ্ন— বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে আর্জেন্টিনা। গোটা দেশ শোকে মুহ্যমান। আপনার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। সমস্যাটা কোথায় হল? কেন দ্রুত ছিটকে যেতে হল আর্জেন্টিনাকে?
পুম্পিদো— বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া সব সময়েই দুঃখের ব্যাপার। গোটা দেশের স্বপ্নভঙ্গ। কিন্তু হারের কারণটা খুঁজে বের করা দরকার বলেই আমার মনে হয়। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়েছে, বিশ্বকাপের জন্য সেভাবে পরিকল্পনা করা হয়নি। প্রস্তুতিটাও দারুণ কিছু হয়েছে বলে মনে হয়নি খেলা দেখে। বিশ্বকাপের আসরে ভাল ফলাফল করতে হলে নিজেদের দারুণ ভাবে তৈরি করতে হয়। না হলে ব্যর্থ হতেই হবে। কিছু করার নেই।
প্রশ্ন— ফ্রান্স তো আর্জেন্টিনা ডিফেন্সের জরাজীর্ণ অবস্থা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। লিওনেল মেসিদের হারের জন্য তো ডিফেন্সকেই দায়ী করা যায়। সেই সঙ্গে বাঁধিয়ে রাখার মতো গোলকিপিং।
পুম্পিদো— শুধুমাত্র ডিফেন্স বা গোলকিপারকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করালে চলবে না। গোটা দলের ব্যর্থতার জন্যই আর্জেন্টিনাকে এত দ্রুত বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যেতে হল।
প্রশ্ন— সবাই তো লিও মেসিকে দোষী সাব্যস্ত করছেন। নিন্দুকরা বলছেন, বার্সেলোনার হয়ে দুরন্ত মেসি। কিন্তু দেশের হয়ে একেবারেই খেলতে পারেন না তিনি। আপনার মতামত কী?
পুম্পিদো— মেসি খুবই ভাল ফুটবলার। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহই থাকতে পারে না। সেই সঙ্গে স্বীকার করে নিতেই হবে, রাশিয়া বিশ্বকাপে মেসি নিজের সেরা ফর্মের ধারেকাছেও ছিল না। বিশ্বকাপে মোটেও ভাল খেলেনি মেসি।
১৯৮৬ সালের পুম্পিদো।
প্রশ্ন— ১৯৮৬ সালের পর দেশে আর বিশ্বকাপই তো এল না। এতগুলো বছর পেরিয়েও একটা দল হয়ে উঠতে পারল না আর্জেন্টিনা?
পুম্পিদো— একটা দল হয়ে উঠতে হলে বোঝাপড়া ভাল হতে হয়। বোঝাপড়া তো আর এমনি এমনি তৈরি হয় না। এর জন্য একসঙ্গে দীর্ঘ অনুশীলন দরকার। ক্রমাগত ট্রেনিং করতে হয় একটা দলকে। তবেই তো মাঠে নেমে ভাল ফলাফল করা সম্ভব। আমার মনে হয় আবারও নতুন করে শুরু করতে হবে। সাফল্যের রাস্তা ওদেরই খুঁজতে হবে।
প্রশ্ন— আপনি ডিফেন্ডার বা গোলকিপারকে দোষ দিলেন না! কাবায়েরো হতশ্রী কিপিং করেছেন। তাঁর পরিবর্ত আরমানিও মোটেও ছাপ রাখার মতো খেলেননি। আপনার আর সের্জিও গয়কোচিয়ার পর আর্জেন্টিনায় তো ভাল মানের গোলকিপারই উঠে এল না।
পুম্পিদো— এবারের বিশ্বকাপে দল হিসেবে আর্জেন্টিনা একদমই ভাল খেলেনি। শুধু গোলকিপারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। রোমেরো খুবই ভাল গোলকিপার ছিল। আরমানি, কাবায়েরোও খারাপ নয়। বিশ্বকাপের একটা-দুটো ম্যাচের পারফরম্যান্সের নিরিখে ওদের দোষারোপ করাটা ঠিক হবে না। আর্জেন্টিনা বেশ ভাল মানের গোলকিপার তৈরি করেছে।
পুম্পিদো এখন। মস্কোয় গিয়েছিলেন দেশের খেলা দেখতে। দেশে ফিরে এসেছেন এখন।
প্রশ্ন — আপনি তো দিয়েগো মারাদোনার সঙ্গে খেলেছেন। এখন মেসিকেও দেখছেন। কাকে সেরা বলে মনে হয়। দিয়েগো নাকি লিও? আদৌ কি এই তুলনা সমর্থনযোগ্য?
পুম্পিদো— আমার মতে মারাদোনা দ্য বেস্ট। বর্তমান সময়ের দিকে তাকালে মেসিই সেরা প্লেয়ার।
প্রশ্ন— ১৯৮৬ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন গোলকিপার আপনি। চার বছর বাদের বিশ্বকাপে কিন্তু আপনি ফ্লপ।
পুম্পিদো— ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে আমি চোট পেয়েছিলাম। দুটো ম্যাচে নেমেছিলাম। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে আমার পা ভেঙে যায়। আমি কিন্তু রিকভারও করে ফেলেছিলাম। গোটা টুর্নামেন্টে আমি আর নামতে পারিনি। চোট আঘাত আমার ফুটবল কেরিয়ারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। একবার প্র্যাকটিস করার সময়ে আমার রিং ফিঙ্গার গোলপোস্টের হুকের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটেছিল। আঙুল প্রায় বাদ দিতে হয় শরীর থেকে। চোট আঘাত তো খেলারই অঙ্গ।
বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় পুম্পিদো।
প্রশ্ন— মেক্সিকো বিশ্বকাপের আগে কলকাতায় খেলে গিয়েছেন আপনি। মনে আছে সেবারের কথা?
পুম্পিদো— অনেক কথা মনে আছে কলকাতার। ১৯৮৪ সালের নেহরু গোল্ড কাপের জন্য ভারতে গিয়েছিলাম খেলতে। ভেরি নাইস এক্সপেরিয়েন্স। আমি আবারও ভারতে যেতে চাই। আপনাদের দেশ থেকে আমন্ত্রণ পেলে নিশ্চয়ই যাব।