গ্যালারি শো, দেখনদারি আর উদ্ধত ভাবভঙ্গি— বিশ্বকাপে চরম ব্যর্থ হওয়ার পরে নেমারের সঙ্গে উঠে আসছে এমনই সমস্ত বিশেষণ। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে মেসি, রোনাল্ডোদের মতো সেরা ফুটবলারদের সঙ্গে একাসনে বসানো হচ্ছিল নেমার জুনিয়রকে। তাঁর প্রতি আশাও বেড়ে গিয়েছিল ব্রাজিল সমর্থকদের। বলা হচ্ছিল, মেসি-রোনাল্ডো জমানা শেষ হওয়ার পরে ফুটবল রাজত্বের পরবর্তী ‘রাজা’ নাকি নেমারই। তবে কোথায় কী! বিশ্বকাপ-ই দেখিয়ে দিল নেমার বহু আলোক বর্ষ দূরে পিছিয়ে আছেন দু’মহাতারকার থেকে।
হারের পরের অন্তর্তদন্তেই উঠে আসছে একের পর এক কারণ। জানা যাচ্ছে, বিশ্বকাপে নেমার দু’জন হেয়ারড্রেসার নিয়ে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। ধারাভাষ্যকাররা নেমারের পাঁচটি আলাদা আলাদা চুলের কেতা লক্ষ্য করেছেন। গোটা টুর্নামেন্টে নিজের পারফরম্যান্স নয়, বার বারই শিরোনামে উঠে এসেছেন অহেতুক পড়ে যাওয়া নিয়ে। প্লে অ্যাক্টিংয়ের কারণে হলুদ কার্ডও দেখেছেন। সবমিলিয়ে পাঁচ ম্যাচে নেমারের অবদান দু’টো গোল এবং গোলের পাস বাড়ানো।
নেমারের এমন হতশ্রী দশা দেখার পরেই স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক ‘ডায়ারিয়ো এএস’-এ একটি সমীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল। ‘রোনাল্ডোর পরিবর্তে কি রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকরা বার্নাব্যুতে নেমারকে দেখতে চান’— এই শিরোনামের অনলাইন ভোটিংয়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার সমর্থক অংশ নিয়েছিল। সেখানে ৮৯ শতাংশ সমর্থক নেমারের বিপক্ষে ভোট দিয়ে বলেছেন কিলিয়ান এমবাপেকে নিয়ে আসা হোক।
অবশ্য শুধু বিদেশি মিডিয়া নয়, প্রাক্তন কিংবদন্তি ব্রাজিলিয়ান টোস্টাও ধুয়ে দিয়েছেন দেশের তারকা ফুটবলারকে। ‘ফোলহা দ্য সাও পাওলো’-তে উনি বলেছেন, নিজে পারফরম্যান্স উন্নত করার জন্য নেমার বহু সুযোগ পেয়েছে। তবে ও বার বারই ভুল দিকে অগ্রসর হয়েছে।
ব্রাজিলকে শেষ বার বিশ্বকাপ এনে দেওয়া কোচ লুই ফিলিপ স্কোলারিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, নেমার কি সত্যিই মেসি কিংবা রোনাল্ডোর মতো সম-মানের? স্কোলারি বলে দেন, ‘‘বার্সেলোনায় নিজের খেলা অসম্ভব উন্নত করেছিল। তবে এখনও ওকে সামনের এক-দু’বছর অসম্ভব ভাল খেলতে হবে ওই পর্যায়ে পৌঁছতে হলে। ওঁর সময় প্রাপ্য।’’
বর্তমানে নেমারের বয়স ২৬। পরের কাতার বিশ্বকাপে নেমারের বয়স হবে ৩০। যে পেলের সঙ্গে নেমারের প্রায়ই তুলনা টানা হয়, সেই পেলে ২২ বছরেই দু’-দু’টো বিশ্বকাপ জিতে ফেলেছিল। স্কোলারি নিদ্ধির্ধায় বলে দেন, ‘‘ব্রাজিলে সবাই জানে কে পেলে, কে পেলে এবং কে রোনাল্ডো। পেলে একজনই হয়।’’
মোদ্দা কথা পরিষ্কার, দেখনদারিতা বাদ দিয়ে নেমারকে ফুটবলেই নিজের কার্যকারিতা বোঝাতে হবে। নাহলে, রোবিনহোর মতো দশা হতে কিন্তু বিলম্ব লাগবে না।