রুবেন্স নাভারোর এখনও বেশ মনে আছে শহর কলকাতাকে। মাদার হাউজ, ১৯৯০ সালের নেহরু কাপ, কলকাতার ফুটবল।
তখনও রাশিয়া ভাঙেনি। বার্লিন প্রাচীর সটান দাঁড়িয়ে। ওসামা বিন লাদেন বেঁচে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। লিও মেসির তখন তিন বছর বয়স। বিশ্বফুটবল তখনও দিয়েগো মারাদোনায় মজে। ভারতীয় ফুটবলে দাপট দেখাচ্ছে কলকাতার তিন প্রধান।
সেই ১৯৯০ সালে কলকাতার মন জিতে নিয়েছিলেন রুবেন্স নাভারো। ২৮ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও উরুগুয়ের ফুটবলারের স্মৃতিতে জেগে রয়েছে কলকাতা। এবেলা.ইন-এর কাছে স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করে নাভারো বলছিলেন, ‘‘১৯৯০ সালে নেহরু কাপ খেলতে ভারতে গিয়েছিলাম। কলকাতার মানুষের আবেগ আমাদের ছুঁয়ে গিয়েছিল। খুব ভাল ব্যবহার করেছিলেন আপনারা।’’ মাদার হাউজে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন নাভারো। কলকাতার অনেক ফোটো তাঁর সম্ভারে। সেগুলো দেখেন আর স্মৃতিতে ডুব দেন উরুগুয়ের প্রাক্তন ফুটবলার।
সেদিনের এমেকা এখন। সঙ্গে ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়।
সেবারের নেহরু কাপে রানার্স হয়েছিল নাভারোর জিমনাসিয়া। ফাইনালে পেরুর অলিম্পিয়ার কাছে ১-০ হার মেনেছিল আর্জেন্টিনার ক্লাব। হেরে গেলেও নাভারো জিতে নিয়েছিলেন সবার মন। সেবারের নেহরু কাপে ছাপ রেখে গিয়েছিলেন তিনি। গোল করেছিলেন মোক্ষম সময়ে। নাভারোর জোড়া গোল মাটি ধরিয়েছিল ডেনমার্কের লিংবিকে।
ভারত থেকে প্রাপ্ত পদক। সেবার নেহরু কাপে রানার্স হয়েছিল রুবেন্স নাভারোর ক্লাব।
স্মৃতির পাতা উল্টে নাভারো বলছিলেন, ‘‘সেবার আমরা ফাইনালে হেরে গিয়েছিলাম অলিম্পিয়ার কাছে। তবে তার আগে আমরা লিংবি ক্লাবকে হারিয়েছিলাম। কলকাতার একটা ক্লাবকেও আমরা হারিয়েছিলাম।’’
এতদিন বাদে কলকাতার সেই ক্লাবের নাম মনে করতে পারেননি নাভারো। তিনি ভুলে যেতেই পারেন। কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা ভোলেননি মহমেডান স্পোর্টিংয়ের সেবারের বীরগাথা। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ব্যর্থ হয়েছিল। সাদা-কালো শিবির কলকাতা ফুটবলকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য উচ্চতায়। নাইজেরিয়ান তারকা এমেকা এজুগো মাঠে শাখাপ্রশাখা মেলে দিয়েছিলেন। গোল কিক নিচ্ছেন তিনি, লম্বা থ্রো করছেন নাইজেরিয়ান তারকা, গোটা মাঠ জুড়ে শুধু এমেকা আর এমেকা।
তখন নাভারো। ছবিতে ডান দিকে।
এমেকাই সেবার টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলার হয়েছিলেন। অথচ তিনিই এখন ভুলে গিয়েছেন সব কথা। আশ্চর্য লাগারই কথা। নাইজেরিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা এমেকা এবেলা.ইন-কে বললেন, ‘‘রুবেন্স নাভারোর কথা মনে পড়ছে না। ১৯৯৪ সালে নাইজেরিয়ায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয়েছিল। অনেক স্মৃতি হারিয়ে গিয়েছে। নেহরু কাপের কথা আমার স্মৃতি থেকে ঝাপসা হয়ে গিয়েছে।’’ সত্যি সত্যি এমেকার মন থেকে নেহরু কাপের স্মৃতি মুছে গিয়েছে কিনা বলা সম্ভব নয়। এমেকার সতীর্থ তনুময় বসু অবশ্য বললেন, ‘‘আমি আর এমেকা টুর্নামেন্টের সেরার দৌড়ে ছিলাম। শেষ পর্যন্ত এমেকাকেই পুরষ্কারটা দেওয়া হয়েছিল।’’ আর নাভারো? তনুময় বলছিলেন, ‘‘ওর গোলেই তো আমরা হেরে গিয়েছিলাম।’’
উরুগুয়ের নাভারো সাত-সাতটা বছর লিও মেসির দেশের ক্লাবে খেলেছেন। মেক্সিকো, কলম্বিয়া, উরুগুয়ের ক্লাবের হয়েও দাপিয়ে খেলা নাভারো এবারের বিশ্বকাপে লুইস সুয়ারেজের দেশের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপে ফেভারিট উরুগুয়ে এমন কথা বলছি না। তবে সুয়ারেজরা হৃদয় দিয়ে ফুটবলটা খেলে। মাঠে নিজেদের নিংড়ে দেয়। বিশ্বকাপ জিততে হলে লাক ফ্যাক্টরও একটা ব্যাপার।’’
২৮ বছর বড় কম সময় নয়। মহমেডান স্পোর্টিং তখনও বুক চিতিয়ে লড়েছিল বিদেশি দলের বিরুদ্ধে। সেই সাদা-কালো শিবির এখন মহেঞ্জোদাড়োয় পর্যবসিত হয়েছে। সুদিন হারিয়েছে মহমেডান। এগনোর বদলে পিছিয়েই গিয়েছে রেড রোডের ধারের ক্লাব।