লেন স্কুলের ভলিবল দলের অধিনায়ক। স্কুল ছাড়ার পর অবশ্য প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর জীবন একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে। কর্নাটকের ২২ বছরের তরুণের শয়নে-স্বপনে এখন শুধুই ক্রিকেট। কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সি গায়ে চমক দিতে শুরু করেছেন ডানহাতি পেসার। ৫ ম্যাচে ৯ উইকেট তুলে নিয়ে তিনি এখন অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকের অন্যতম সেরা ভরসা।
কীভাবে তৈরি হল ক্রিকেটের প্রতি এই অমোঘ আকর্ষণ? যা কি না বদলে দিয়েছে পেশাদারি কেরিয়ারের মোড়? ইডেনে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে এলিমিনেটর ম্যাচ খেলতে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে বাইপাসের ধারে টিমহোটেলে বসে প্রসিদ্ধ বললেন, ‘‘আমার মা ভলিবল খেলতেন। সর্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টে খেলেছেন। আমি যে স্কুলে পড়তাম, সেখানে ভলিবলকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হতো। আমি স্কুলের ভলিবল দলের অধিনায়ক ছিলাম। তবে স্কুল ছাড়ার পর ভলিবল খেলার আর সেভাবে সুযোগ হতো না। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট খুব ভালবাসতাম। টিভিতে ম্যাচ দেখতাম। একটা সময় দু’টো খেলার মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হতোই। ক্রিকেটকে বাছলাম।’’
আর বাইশ গজের দুনিয়ার প্রবেশের মাহেন্দ্রক্ষণে কর্নাটকের তরুণ পেয়ে গিয়েছেন দুই কিংবদন্তির সান্নিধ্য! জেফ থমসন ও গ্লেন ম্যাকগ্রা। থমসনের তত্ত্বাবধানে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে প্র্যাক্টিস করেছেন। আর ম্যাকগ্রাকে গুরু হিসাবে পেয়েছেন চেন্নাইয়ে এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে।
‘‘থমসন স্যার টেকনিক্যাল ব্যাপার নিয়ে খুব বেশি কচকচানি পছন্দ করেন না। মানসিক ব্যাপার নিয়েই বেশি কথা বলতেন। অস্ট্রেলিয়ায় উঠতি ক্রিকেটারেরা কীভাবে প্র্যাক্টিস করে সেটা আমাকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন। কঠিন পরিস্থিতিতে কীভাবে শান্ত থেকে লড়াই করতে হয়, সেটা শিখিয়েছেন থমসন স্যারই,’’ বলছিলেন প্রসিদ্ধ। গুরু ম্যাকগ্রার মন্ত্র কী? প্রসিদ্ধ বলছেন, ‘‘ম্যাকগ্রা স্যারের কাছে ক্লাস করেছিলাম গত বছর গ্রীষ্মে। প্রাক মরসুম শিবির ছিল বলে তখন স্যারের তত্ত্বাবধানে নানারকম ট্রেনিং করেছি। ভারতীয় পরিবেশ কীভাবে বল করা উচিত এবং উপমহাদেশের বাইরে কীভাবে বল করা উচিত, সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন উনি।’’ যোগ করছেন, ‘‘এখনও সমস্যায় পড়লেই দুই কিংবদন্তির সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরামর্শ নিই।’’
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ৪ উইকেট নেওয়ার পর প্রসিদ্ধর মোবাইল ফোন উপচে পড়েছে শুভেচ্ছাবার্তায়। কমলেশ নাগরকোটি চোট পেয়ে ছিটকে না গেলে যাঁর আইপিএল খেলার কথাই ছিল না। টুর্নামেন্টের মাঝপথে দলে যোগ দিয়ে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি? প্রসিদ্ধ বলছেন, ‘‘যতটা কঠিন হবে ভেবেছিলাম, আদপে তা হয়নি। এর একটা বড় কারণ, প্র্যাক্টিসের জন্য আমি কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরের সঙ্গেই ছিলাম। তাই ড্রেসিংরুমের আবহটা কীরকম, জানতাম। তা ছাড়া শিবম মাভি, শুবমান গিলরা প্রায় আমার সমবয়সী বলে তাড়াতাড়ি বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে।’’
ডেথ ওভারে তাঁর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের ফাঁদে আটকে গিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসম, ইউসুফ পাঠানরা। স্লগে বল হাতে সাফল্যের চাবিকাঠি কী? প্রসিদ্ধ বলছেন, পুরোটাই পরিকল্পনার কামাল। ‘‘ম্যাচে বল করার আগে কোচ এবং অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা করাই থাকে কীভাবে কোন ব্যাটসম্যানকে বল করব। কোন ব্যাটসম্যানকে কীরকম ফিল্ডিং সাজিয়ে বল করা হবে, সেটাও আগে থেকে নির্ধারিত থাকে। ম্যাচে সমস্যা হয় না।’’
রাজস্থানকে চলতি আইপিএলে দু’বার হারিয়েছে কেকেআর। প্রসিদ্ধ মানছেন, তাতে মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে সুবিধা হবে। পাশাপাশি বলছেন, ‘‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নির্দিষ্ট দিনে কোন দল কীরকম খেলছে তার ওপর ফলাফল নির্ভর করে। আমাদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে হবে। ঘরের মাঠে খেলব, সেটা একটা বাড়তি সুবিধা। রাজস্থান রয়্যালস বিপজ্জনক দল। হাল্কাভাবে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’’ যোগ করছেন, ‘‘জশ বাটলার ও বেন স্টোকসকে ছাড়াই দুই ম্যাচ জিতে ওরা প্লে-অফে উঠেছে। ওরা না থাকায় কিছুটা সুবিধা হবে। তবে লড়াইয়ের তীব্রতা কমবে না।’’
ইডেনের উইকেটে বাউন্স আর গতির ইন্ধন থাকছে। প্রসিদ্ধও ফের জ্বলে উঠতে এবারও থাকছেন প্রস্তুত।