ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে খেলার সময়ে এই মাঠই তাঁর কাছে ছিল যৌবনের তপোবন, বার্ধক্যের বারাণসী।
প্রায় ষোলো বছর বাদে আবার ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে পা রাখলেন মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। শুক্রবার বিকেলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর তাঁবুতে তিনি পা রাখলেন বিপক্ষ দলের কোচ হিসেবে। আগে তিনি ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়। সময়ের স্রোতে বদলে গিয়েছে শঙ্করলালের ভূমিকা। এখন তিনি মোহনবাগানের কোচ। মাথায় পাহাড় প্রমাণ চাপ। আইলিগ-এর পয়েন্ট তালিকায় ছ’ নম্বরে মোহনবাগান। চাপ বাড়ছে ক্রমশ। এই চাপই যে তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ। রবিবাসরীয় ডার্বির দিন দুয়েক আগে লাল-হলুদ তাঁবুতে সাংবাদিক বৈঠকের জন্য এসে ইস্টবেঙ্গলের আতিথেয়তা ভদ্রতা করে ফিরিয়ে দিলেন। চা-জল মুখেও তুললেন না। ক্লাব তাঁবু ছাড়ার আগে বলে গেলেন, ‘‘অন্য কোনওদিন এসে খেয়ে যাব।’’
প্রতিপক্ষ কোচ খালিদ জামিলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবিও তুললেন না। একসঙ্গে দুই কোচের ছবি পাওয়ার হাজারো উপরোধ-অনুরোধ স্মিত হাসিতে প্রত্যাখ্যান করে হাঁটতে শুরু করে দিলেন। মাঠের বৈরিতার আগে বিপক্ষ কোচকে কিন্তু দিয়ে গেলেন বড় সার্টিফিকেট। যা শোনার পরে লাল-হলুদ সমর্থকরা নিশ্চিন্তের ঘুম ঘুমোতে পারেন রাতে।
কী বললেন শঙ্করলাল? প্রথম ডার্বিতে শেষ হাসি হেসেছিল মোহনবাগান। তখন অবশ্য সঞ্জয় সেনের হাতেই ছিল সবুজ-মেরুনের রিমোট কন্ট্রোল। তার পরে গঙ্গা দিয়ে কত জলই না গড়িয়ে গিয়েছে। সঞ্জয় সেন ছেড়ে এসেছেন তাঁর সিংহাসন। মোহনবাগান এখন তাঁর কাছে অতীত। সেখানে এখন রাজদণ্ড হাতে শঙ্করলাল। কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পরে দুটো ম্যাচে টাচলাইনের ধারে দাঁড়িয়েছিলেন। একটিতে জিতেছেন। একটিতে হেরেছেন। ডার্বির আগে এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁর হাতের তাস সনি নর্দি আদৌ খেলতে পারবেন কি না। মোহন-কোচ বলছিলেন, ‘‘ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সনি প্র্যাকটিসও করছে। এখনই বলতে পারব না ডার্বিতে নামতে পারবে কি না।’’
প্রথম ডার্বিতে কিংসলের গোলে জিতেছিল মোহনবাগান। তার পর থেকে ইস্টবেঙ্গলের গ্রাফ কিন্তু ঊর্ধ্বমুখী। ম্যাচ ড্র করেছে ইস্টবেঙ্গল। জিতেছে। কিন্তু হার— নৈব নৈব চ।
উল্টো দিকে মোহনবাগান ড্র করেছে, হেরেছে। পিছোতে পিছোতে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান এখন ছয়। শঙ্করলাল বলছেন, ‘‘ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল অবশ্যই আমাদের থেকে এগিয়ে।’’ কিন্তু কেন?
রক্তের গতি বাড়িয়ে দেওয়া ম্যাচের আগে ইস্টবেঙ্গলকে চাপে ফেলার কৌশল নয় তো! শঙ্করলাল মানতে চান না। মোহন-কোচ ব্যাখ্যা দিয়ে বলছেন, ‘‘পয়েন্ট টেবলে ইস্টবেঙ্গল আমাদের থেকে এই মুহূর্তে অনেকটাই এগিয়ে। আমাদের সঙ্গে হেরে যাওয়ার পরে ইস্টবেঙ্গল জিতেছে, ড্র করেছে। কিন্তু হারেনি। তার অর্থ ইস্টবেঙ্গল ক্রমশ উন্নতি করেছে। সেই জায়গায় আমরা হেরে গিয়েছি।’’ এর পরে শঙ্করলাল আরও ব্যাখ্যা করে বলছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের কোচ খালিদ জামিল আমার থেকে অনেকটাই এগিয়ে। অনেকদিন ধরে কোচিং করাচ্ছে। আইজল, ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করানোর আগে খালিদ প্রায় বছর দশেক মুম্বই এফসি-র কোচ ছিল। ফলে সব মিলিয়ে মিশিয়ে ইস্টবেঙ্গলই এগিয়ে।’’
শঙ্করলাল ঢালাও সার্টিফিকেট দিয়ে গেলেন ইস্টবেঙ্গলকে। বাঙালির চিরআবেগের ম্যাচের ফলাফল তো হয় মাঠেই। আগে থাকতে এই ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণী যে করা যায় না।