মোহনবাগান ২ কাস্টমস ০
(হেনরি ২)
স্পনসর নেই। ফুটবলারদের বেতন দিতে সমস্যায় পড়ছেন কর্তারা। এক মাসের টাকা দেওয়া হলেও পরের মাসের টাকা কী ভাবে জোগাড় হবে, তা জানেন না কর্তারা। নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। টাকার অভাবে বিদেশি কোটাও পূরণ করা যায়নি। ‘নেই নেই’-এর স্বর্গরাজ্য যেন মোহনবাগান। কিন্তু মাঠে তো এ এক অন্য সবুজ-মেরুন। নিজেদের সেরাটা দেওয়ার কী আকুলতা ফুটবলারদের মধ্যে!
পাশের ক্লাব ইস্টবেঙ্গলে নেই কোনও স্ট্রাইকার। স্ট্রাইকারের অভাবে কলকাতা লিগ হাতছাড়া লাল-হলুদে। মোহনবাগানে রয়েছেন দু’ জন দুরন্ত স্ট্রাইকার। দিপান্দা দিকা ও হেনরি কিসসেকা। দু’ জনের মধ্যে কী সুন্দর বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। কোনও রকম স্বার্থপরতা নেই। চলছে সুস্থ প্রতিযোগিতা। কাস্টমসের বিরুদ্ধে বুধবার যেমন উগান্ডার স্ট্রাইকার হেনরি জোড়া গোল করলেন। ডিকা একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করেও কাস্টমসের জালে বল জড়াতে পারলেন না। তাতেও তাঁর মধ্যে নেই কোনও গ্লানি। আজ তো সব কিছুর জবাব দেওয়ার সন্ধ্যা। ইদানীং নিন্দুকরা কিছু হলেই বাঙালিদের ছেড়ে কথা বলেন না। বাঙালিদের দিয়ে নাকি ফুটবল আর হবে না। বুধসন্ধ্যার পর কি নিন্দুকরা আর এ কথা বলতে পারেন!
ইস্টবেঙ্গলে বাঙালি মুখ কমতে কমতে নেই বললেই চলে। অথচ মোহনবাগানে কত বাঙালি মুখ! কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী দিনকয়েক আগেই বলছিলেন, ‘‘বাচ্চা বাচ্চা সব ছেলে খেলছে। কারা যেন বলছিলেন বাঙালিরা ফুটবল খেলতে পারে না। আমি সুযোগ দিচ্ছি। ওরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে।’’
কলকাতা লিগ একচেটিয়া হয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের। আট বছর আগে মোহনবাগান শেষ বার কলকাতা লিগ জিতেছিল। তখন সবুজ-মেরুনে ছিল ‘ব্যারেটো যুগ’। ‘সবুজ তোতা’ এখন অতীত বাগানে। ব্যারেটো-যুগের পরে বাগানে এল ওডাফা-যুগ। তখনও কলকাতা লিগ আসেনি গঙ্গাপাড়ের ক্লাবে। আইলিগও নয়। ওডাফা-যুগের পরে বাগানে প্রতিষ্ঠা পেল সনি-যুগ।
হাইতিয়ান জাদুকরের সময়েই ১৩ বছর বাদে ‘ভারতসেরা’ হয় মোহনবাগান। এখন সনিও নেই। ব্যারেটো-ওডাফা-সনির মতো সুপারস্টার নেই মোহনবাগানে। সেই অর্থে তারকাহীন একটা দলকে নিজের মতো করে গড়ে মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন করালেন শঙ্করলাল চক্রবর্তী। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠাও পেয়ে গেলেন তিনি। কলকাতা লিগ তো প্রতিষ্ঠা দেওয়ারও। হাজার হোক, এতদিনের অপ্রাপ্তির পরে নতুন ইতিহাস লেখা হল।