রবিবারে যখন আলেয়ান্দ্রো মেনেনডেজ বনাম খালিদ জামিল সাইড লাইনে দাঁড়াবেন, গ্যালারিতে সত্তর হাজারি দর্শক গলার শিরা ফুলিয়ে চিৎকারের প্রস্তুতি নেবে, ধীরে ধীরে মাঠে প্রবেশ করবেন জবি জাস্টিন-ডিকা-হেনরিরা, তখনই ঢাকার অভিজাত এলাকার ফ্ল্যাটে রিমোট হাতে বসবেন তিনি। চ্যানেল সার্ফিং করবেন প্রতিবেশী দেশের বৃহত্তম ফুটবল যুদ্ধ দেখার জন্য। ‘বন্ধু’ মেনেনডেজ নন, দুই ছাত্রের উপরেই চোখ থাকবে অস্কার ব্রুজো ব্যারেরাসের। সনি নর্দে, টনি ডোভাল— দু’জনকেই যে হাতের তালুর মতো চেনেন বর্তমানে বসুন্ধরা কিংসের কোচ।
ডার্বিতে মিলে যায় সমস্ত আবেগ, রং, উৎসব। মিশে থাকে কত দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা-ভাললাগা। আবেগের সেই পরতেই চুবে রয়েছেন ৪১ বছরের স্প্যানিশ কোচ। নিজে ছ’ বছর আইএসএল, আইলিগ-এ কোচিং করালেও ভারতে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত নন। চলে গিয়েছেন এদেশ ছেড়ে। তবে এবারের ডার্বিতে তাঁর আক্ষেপ মেটাতে প্রস্তুত থাকবেন তাঁর দুই শিষ্য।
সনি নর্দের সঙ্গে অস্কারের আলাপ মুম্বই সিটি এফসিতে। গুইমারেসের সহকারী হিসেবে মুম্বই সিটির দায়িত্বে ছিলেন স্প্যানিশ কোচ। সেখানেই সনি নর্দে মেন্টর হিসেবে পেয়েছিলেন স্প্যানিশ মায়েস্ত্রোকে। টনির সঙ্গে মোলাকাত অবশ্য বহু আগে। স্পেনে। ভিগো শহর জানে কোচ অস্কার, আর যুব ফুটবলার টনি ডোভালের প্রথম সবকিছু। সেই সময়ে ‘সেল্টা ভিগো বি’ দলের দায়িত্বে কোচ অস্কার। তাঁরই পরিচর্যায় উত্থান ডোভালের। সেখানেই আবার আলেয়ান্দ্রোর সাহচর্যে আসেন তিনি।
ঢাকা থেকে ফোনে ডার্বির আগের দুপুরে গল্প করতে বসেন অস্কার ব্রুজো। সনিকে নিয়ে উচ্ছ্বাস তাঁর গলায়, ‘‘বাংলাদেশ থেকে মোহনবাগানে এসে প্রথম মরসুমে ও দুর্ধর্ষ খেলছিল। মুম্বইতে আমিই দায়িত্ব নিয়ে সনিকে এনেছিলাম। ও আমাদের হতাশ করেনি।’’ অস্কার যেন থামতেই চান না। হাইতিয়ান ছাত্রের প্রশংসায় কোনও কার্পণ্য নয়, ‘‘সনি নিজের সেরা ছন্দে থাকলে, বিপক্ষের পক্ষে থামানো মুশকিল। সনির সঙ্গে প্রথমে পেশাদারি সম্পর্ক ছিল। তবে এখন তা ব্যক্তিগত পর্যায়ে। প্রায় প্রতিদিনই ওঁর সঙ্গে কথাবার্তা হয় আমার।’’
সনির কোচ বদলে গিয়েছে। শঙ্করলাল জমানা অবসানের পরে সবুজ-মেরুন তাঁবুতে সনির ‘বস’ এখন খালিদ জামিল। তবে অস্কারের জন্য প্রিয় কোচের আসন বরাদ্দ ম্যাজিসিয়ানের। গত মরশুমে মালদ্বীপের নিউ র্যাডিয়েন্টের দায়িত্ব ছেড়ে বসুন্ধরা কিংসের কোচ হন তিনি। দায়িত্ব পেয়েই প্রথমে সনিকে আনতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সনি তখন চোট সারাতে ব্যস্ত ছিলেন আর্জেন্টিনার মেন্ডোজায়। শল্যচিকিৎসক মারিয়ানো চ্যাকনের সান্নিধ্যে। ব্রুজো অবশ্য সনিকে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে সফল হননি।
কার্লোস পুওলের সঙ্গে অস্কার ব্রুজো। — সংগৃহীত
কেন? ব্রুজো বলছিলেন, ‘‘সনি মোহনবাগানেই খেলতে চেয়েছিল। ও আসলে কলকাতার ক্লাবকে ভালবাসে। মোহনবাগানও চোট সারিয়ে সনিকে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছে। ফুটবলার-ক্লাবের সম্পর্ক তো এমনই হওয়া উচিত, বন্ধুর মতো। পাশে থাকবে সুখে-দুঃখে।’’
ব্রুজো আসলে ধর্মসঙ্কটে। মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল? কার জন্য রবিবারের সন্ধেয় গলা ফাটাবেন, তা নিয়ে বেশ দ্বিধায় তিনি। সনির মোহনবাগান নাকি টনির ইস্টবেঙ্গল— এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি তিনি। ফোনে ইতঃস্তত গলা তাঁর, ‘‘সনি যদি বড়মাপের বল প্লেয়ার হয়ে থাকে, টনিও কিন্তু কম যায় না। সেল্টা ভিগোয় আমার কোচিং-বেলা থেকে ওকে চিনি বলেই বলছি। ও যত দলের হয়ে খেলেছে, প্রতিটি দলেই কিন্তু ১০ নম্বর ফুটবলারের ভূমিকা দুর্ধর্ষভাবে পালন করেছে। টেকনিক্যালি ও ভীষণই নিখুঁত।’’ এত আশার মাঝেও অবশ্য আশঙ্কা বিখ্যাত স্প্যানিশ কোচ ফার্নান্দো পেনার প্রাক্তন সহকারীর, ‘‘টনিরা ডাইরেক্ট ফুটবল খেলতে স্বচ্ছন্দ। তবে ভারতের মাঠের কোয়ালিটি মোটেও ভাল নয়। এটাই ভাবাচ্ছে।’’
অস্কার ব্রুজো বাংলাদেশে সফলভাবে কোচিং করাচ্ছেন। — সংগৃহীত
টনি না সনি— তা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়ার প্রাক্তন কোচ নিজের বন্ধুর সাফল্যের বিষয়ে আশাবাদী। সামান্য থেমে অস্কারের বক্তব্য, ‘‘আলেয়ান্দ্রো অনেক বড় মাপের কোচ। বড়ম্যাচে রণকৌশল সাজাতে ওঁর জুড়ি মেলা ভার। সেল্টা ভিগোয় আমাদের আলাপ। এখন অবশ্য বহুদিন কথা হয়নি।’’ ফোন রেখে দেওয়ার আগে গুপ্তকথা ফাঁস করে দেওয়ার ভঙ্গিতে তাঁর সংযোজন, ‘‘কোচ আলেয়ান্দ্রোকে ইস্টবেঙ্গলে নয়, প্রথম দেখা যেতে পারত আইএসএল-এ। ফ্র্যাঞ্চাইজি পুরো রাজিও হয়ে গিয়েছিল। তবে সেল্টা ভিগোয় চুক্তি থাকায় ভারতে সেবার আসতে পারেনি আলেয়ান্দ্রো।’’
কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি, মুম্বই? যেখানে আপনি কোচিং করিয়েছেন? হোয়্যাটসঅ্যাপে অস্কার ব্রুজোর ইঙ্গিতপূর্ণ মেসেজ স্রেফ এক স্মাইলি!