তাঁর হাত ধরেই মোহনবাগানে প্রথম বার জাতীয় লিগ এসেছিল। তখনও আইলিগ কী, কেউ জানতেন না! ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার তখনও ধুলিসাৎ হয়নি। আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিও মেসি তখনও নেহাত শিশু। এরকমই এক সময়ে টিকে চাতুনির হাত ধরেই মোহনবাগান জিতেছিল জাতীয় লিগ। জাতীয় লিগ নাম বদলে হয়ে গিয়েছে আইলিগ। এবারের আইলিগে মোহনবাগান ক্রমশ পিছোচ্ছে। আর তা দেখে স্থির থাকতে পারছেন না চাতুনি। মনে উঠছে ঝড়। বুকে যেন পাথর জমে রয়েছে তাঁর।
মোহনবাগান ছেড়ে দীর্ঘদিন চলে গেলেও কেরলের কোচের মনে প্রাণে এখনও সবুজ-মেরুন। তাই চার্চিল ব্রাদার্স বনাম ইন্ডিয়ান অ্যারোজ ম্যাচ দেখেই বর্তমান কোচ খালিদ জামিলের সঙ্গে দূরভাষে যোগাযোগ করেন আইএম বিজয়নের গুরু।
বাগান-কোচকে সতর্ক করে দিয়ে চাতুনি জানান, ‘‘প্লাজাকে খেলতে দিও না।’’ চার্চিল ব্রাদার্স বনাম মোহনবাগান ম্যাচ অতীত। এগিয়ে গিয়েও সনি নর্দেরা সেই ম্যাচ জিততে পারেননি। চার্চিল ব্রাদার্স-অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করে মোহনবাগান এখন শহর কলকাতায়। গঙ্গাপারের ক্লাবের প্রাক্তন কোচও দিন দু’য়েক হল শহরে। সোমবার সকালে পুরনো ক্লাবে যান। সেখানেই খালিদ জামিলের সঙ্গে হাল্কা কথাবার্তাও হয় তাঁর। ভাইয়ের পথ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সোমবার সন্ধেতেই রওনা হন কেরলে।
ডেনসন দেবদাসের সঙ্গে চাতুনি।
ভারতীয় ফুটবল তাঁর নখদর্পণে। এক সময়ে কলকাতার দুই প্রধানকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। এবারের আইলিগে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে সবুজ-মেরুন, তা দেখে আর স্থির থাকতে পারছেন না চাতুনি। কোন পথে হাঁটলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব, তার উপায় জানাচ্ছেন প্রবীণ কোচ, ‘‘সাফল্য পেতে হলে, সমর্থকদের আরও বেশি করে মাঠমুখো করতে হলে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের মতো ঐতিহ্যশালী ক্লাবগুলোতে বেশি সংখ্যায় স্থানীয় ফুটবলারদের নিতে হবে। স্থানীয় ফুটবলাররা ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের আবেগটা বুঝতে পারবে। তাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্যই মাঠে ভিড় জমাবেন সমর্থকরা।’’
মাঠে দর্শক টানার এবং সাফল্যের সহজ রাস্তা বাতলে দিচ্ছেন কেরলের এই অভিজ্ঞ কোচ। নিজের সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলছেন, ‘‘ আমার সময়ে মোহনবাগানে স্থানীয় ফুটবলারের সংখ্যা বেশি ছিল। ওদের দেখার জন্যই মাঠে ভিড় করতেন সমর্থকরা। এখন তো মাঠ ভর্তিই হয় না। ডার্বি ম্যাচ অবশ্য ব্যতিক্রম। আমি যখন গোয়ার ক্লাবে কোচিং করিয়েছি, তখনও গোয়ার স্থানীয় ছেলেদের অগ্রাধিকার দিয়েছি। কেরলেও একই কাজ করেছি।’’ অভিজ্ঞ কোচের পরামর্শ কি শুনবেন দু’ প্রধানের কর্তারা? সময় এর জবাব দেবে। খালিদ জামিলের হাতে এখন মোহনবাগানের রিমোট কন্ট্রোল। আইজলকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করানো কোচ বুঝতে পারছেন মোহনবাগানে তাঁর কাজ কতটা কঠিন। খালিদের উদ্দেশে চাতুনির পরামর্শ, ‘‘কোচের কাজটা খুব কঠিন। খালিদের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। সঠিক সময়ে সঠিক প্লেয়ার নির্বাচন করে তাকে খেলাতে হবে। দক্ষতার মাপকাঠিতে বিচার করে তবেই একজন ফুটবলারকে সুযোগ দেওয়া উচিত। ফুটবলারদের সঙ্গে আমি খুব ভাল করে মিশতাম। ওদের সঙ্গে রসিকতাও করতাম। কিন্তু মাঠের ভিতরে আমি অত্যন্ত কড়া ছিলাম। যোগ্যতার নিরিখে আমি দল গড়তাম।’’
চলতি বছরের ১৯ অগস্ট তাঁর জীবনী প্রকাশিত হতে চলেছে। সেদিনই যে আবার চাতুনির বিবাহবার্ষিকী। সেই বইয়ে তাঁর কোচিং জীবনের অনেক অজানা কথা লেখা থাকবে। ভারতীয় ফুটবল জানবে অন্য এক টিকে চাতুনিকে।