গতবার ভরাতসেরা মিনার্ভা পঞ্জাব। সোমবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইস্টবেঙ্গল-আইজল ম্যাচ ড্রয়ের কোলে ঢলে পড়তেই দেওয়াললিখন স্পষ্ট।
এবার আইলিগ যাচ্ছে চেন্নাইয়ে।
আগের বার দেশের উত্তরপ্রান্তে গেল আইলিগ ট্রফি। এবার দেশের দক্ষিণপ্রান্তে। ‘ফুটবলের মক্কা’র হাত শূন্য। এটাই যেন এখন দস্তুর হয়ে গিয়েছে।
যুবভারতীতে যখন ইস্টবেঙ্গল ও আইজলের মরিয়া লড়াই হচ্ছে, তখন চেন্নাই সিটি এফসি-র কোচ আকবর নওয়াসের চোখ আটকে ছিল টেলিভিশনের পর্দায়। আপনি কি চেয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল আজ পয়েন্ট হারাক?
পেশাদার কোচ ‘চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ার গন্ধ পেতে শুরু করে দিয়েছেন। তবুও বিনয়ের সুর গলায় জড়িয়ে এবেলা.ইন-কে বলছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল-এর ম্যাচটা দেখছিলাম। ম্যাচের ফলাফল নিয়ে আমি কোনও ভাবনাচিন্তাই করিনি।’’
করবেনই বা কেন? আইলিগ টেবলের যা অবস্থা তাতে ইস্টবেঙ্গল ও চেন্নাই-এর মধ্যে এখনই সাত পয়েন্টের ব্যবধান। এই সাগর পরিমাণ পার্থক্য ঘুঁচিয়ে আলেয়ান্দ্রো মেনেনদেজের ছেলেদের পক্ষে আইলিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভবই নয়।
চা পান করার সময়ে চায়ের পেয়ালা ও ঠোঁটের মধ্যে যে সামান্য ফাঁক থাকে , আই লিগ ট্রফি হাতে নেওয়ার মধ্যে আকবর নওয়াজের দলেরও সেইটুকুই পার্থক্য। তবুও আত্মতৃপ্ত নন নেস্টরদের ‘হেডস্যর’। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের কাজ তো এখনও শেষ হয়নি। ছেলেদের পা মাটিতেই রয়েছে। পরের ম্যাচেই আমরা জেতার জন্য ঝাঁপাব। অন্য ম্যাচের ফলাফল যাই হোক না কেন, আমরা পরের ম্যাচ নিয়েই ভাবছি।’’
পরের ম্যাচেই চেন্নাই-এর সামনে যে চার্চিল ব্রাদার্স! এক ম্যাচ আগেও চার্চিল বনাম চেন্নাই ম্যাচের দিকে তাকিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। সোমবারের পরে বদলে গিয়েছে ছবিটাই। এখন আশা হয়তো ছেড়ে দিয়েছে লাল-হলুদ বিশ্ব।
চেন্নাই-কোচ এখনই মানতে চান না তাঁরা আইলিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েই গিয়েছেন। বাস্তববাদী কোচ বলছেন, ‘‘প্রতিটি ম্যাচ জেতার চেষ্টা করেছি আমরা। এটাই হওয়া উচিত। কোনও ম্যাচে আটকে গেলে বা হেরে গেলে নতুন করে আবার শুরু করতে হতো। পুরনো খেলার ভিডিও দেখে নিজেদের দোষ ত্রুটিগুলো শুধরে নিতাম।’’
গতবার ফিলিপিন্সে কোচিং করিয়েছেন আকবর। সেখানে সেরা কোচের সম্মানও পান নওয়াস। এহেন মানুষটা অন্য দলের উপরে নিজেদের ভাগ্য সঁপে দেননি। পার্থক্য এখানেই । ইস্টবেঙ্গল কোচকে বারংবার বলতে শোনা গিয়েছে , চেন্নাই পয়েন্ট হারাবে। সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে। এখন আইলিগের রাশ চলে গিয়েছে দেশের দক্ষিণ প্রান্তের ক্লাবের হাতে।
আপনার কাজ কতটা কঠিন ছিল? আকবর বলছেন, ‘‘দারুণ চ্যালেঞ্জিং একটা অভিজ্ঞতা।’’ তার পরেই সতর্ক হয়ে বলেন, ‘‘এখনও কিন্তু সব কিছু শেষ হয়নি। মরসুম এখনও বাকি রয়েছে।’’
স্প্যানিশ ফুটবলারদের পরশে চেন্নাই হয়ে উঠেছিল স্প্যানিশ আর্মাডা। দুরন্ত গতিতে ছুটেছে তাদের জয়রথ ।
আকবর কিন্তু টিম গেমের উপরে জোর দিয়ে বলছেন, ‘‘ফুটবল তো দলগত খেলা। স্প্যানিশ ফুটবলাররা খুবই ভাল খেলেছে। ওদেরও কৃতিত্ব রয়েছে। তবে দলের সাফল্যের পিছনে রয়েছে সবারই ভূমিকা। বিশেষ করে স্থানীয় ছেলেদের কথা বলবো। ওরা দারুণ উন্নতি করেছে।’’
প্রাইম লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ, এস লিগ রানার্স আপ, সিঙ্গাপুর কাপ রানার্স আপ, এএফসি কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট, এএফসি জোন সেমিফাইনালিস্ট— এতদিন আকবর নওয়াসের জীবনপঞ্জীতে এগুলোই ছিল মনিমাণিক্য। এবার যে তিনি পরতে চলেছেন রাজমুকুট।