এক সময় শিকারই ছিল আদিবাসীদের জীবন ও জীবিকা। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কালক্রমে আদিবাসীদের সেই আর্থ সামাজিক জীবনে বদল ঘটেছে। বদলেছে জীবিকার ধারাও। সেই বদলে যাওয়া ধারাতেও প্রাচীন ঐতিহ্য রয়ে গিয়েছে উৎসবের আকারে। আর সেই প্রবহমান ধারায় আজও বাঁকুড়ার বাসুদেবপুর-সহ বেশ কিছু জঙ্গলে হয়ে চলেছে আদিবাসীদের শিকার উৎসব।
আরও ছবি দেখতে এখানে CLICK করুন
বাঁকুড়ার আদিবাসীদের ‘শিকার উৎসব’-এর নানা মুহূর্ত
আর্যরা এ দেশে আসার বহু আগে থেকেই বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন অংশে বসবাস ছিল আদিবাসী সাঁওতাল জনজাতির। পরবর্তীতে আর্যরা ক্রমশ ছোট ছোট গ্রামের আকারে জেলার উর্বর অংশে বসতি গড়ে তোলায়, সাঁওতালরা ক্রমশ সরে যেতে শুরু করে জেলার দক্ষিণে, অপেক্ষাকৃত অনুর্বর পাহাড়ি অঞ্চলে। বেশির ভাগ সাঁওতাল দক্ষিণে সরে গেলেও, উত্তর ও পূর্ব বাঁকুড়ার কিছু কিছু এলাকায় সাঁওতাল জনজাতির মানুষ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়।
কয়েক শতক আগে পর্যন্ত এই জনজাতির কাছে অন্যতম জীবিকা ছিল পশু শিকার। পরবর্তীকালে দ্রুত আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের জাঁতাকলে পড়ে সেই পেশা থেকে সরে আসে সাঁওতালরা। কিন্তু শিকারের নেশা তাঁদের রক্তে। সেই নেশার টানেই, প্রতি বছর নিয়ম করে এক-দু’দিন শিকারে বের হন সাঁওতালরা।
পোশাকি ভাবে এই দুটি দিনকে বলা হয় ‘শিকার উৎসব’। নিজের নিজের পেশা ছেড়ে এই দু’দিন সাঁওতালরা হয়ে ওঠেন পুরো দস্তুর শিকারী। মহুয়া ও হাঁড়িয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে দিনভর দল বেঁধে হাজার হাজার মানুষ শিকারের খোঁজে তোলপাড় করেন জঙ্গলের পর জঙ্গল। শিকার উৎসবে যোগ দিতে এ সময় দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ ছুটে যান নির্দিষ্ট জঙ্গলগুলিতে। উৎসবের মেজাজে শিকার করা হয় বুনো শুকর, বুনো মুরগী-সহ সাধারণ পশুপাখি। শিকার করা পশু পাখির মাংস আর মহুয়ায় জমে ওঠে শিকার উৎসবের মৌতাত।
দেখুন ভিডিও—