সবচেয়ে কম সময় পৃথিবীর সবক’টা দেশ ঘুরে যাঁর নাম ইতিমধ্যেই উঠে গিয়েছে ‘গিনেস বুক’এ, সেই বঙ্গসন্তান কাশী সমাদ্দার এবার ভারতের পর্যটনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগী।
আর সেই উদ্দেশ্যে সম্প্রতি হিমালয় থেকে সাগর যাত্রা করলেন তিনি। সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী বর্ণালী। উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর থেকে যাত্রা করে গত ৩০ ডিসেম্বর তাঁরা এসে পৌঁছেছেন মন্দারমণিতে।
কাশী জানালেন, কম টাকায় পর্যটন, দুর্ঘটনামুক্ত রাস্তা— এই দুই উদ্দেশ্যেই তাঁর এই ১৬৩৯ কিলোমিটার সফর। তাই সফর করেছেন একটা পুরোনো গাড়ি চড়েই। কয়েক বছর হল গাড়ির উৎপাদনই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাশী জানালেন, গোটা সফরে গাড়িটা একবারও বিগড়ে যায়নি। গাড়ির দাম এখন এক লাখ টাকার বেশি নয়। এই রকম গাড়ি নিয়ে সফরের উদ্দেশ্য, কম টাকায় যে দেশ ঘোরা যায় সেটাই জানানো। কাশী বললেন, ‘‘এই পথ পেরোতে গিয়ে বুঝলাম যাত্রাপথে সব জায়গায় যথাযথ দিকচিহ্ন নেই। রাস্তা কোন দিকে বেঁকে যাচ্ছে, সঠিকভাবে তা বেশিরভাগ সময় লেখা থাকে না।’’
ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছিলেন ধানবাদের কাছ থেকে। কাশীর বয়ান, ‘‘এখানেই রোড সাইন সবচেয়ে কম দেখেছি। পাশাপাশি রাস্তার ধারে হোটেলের সংখ্যাও অনেক বাড়ানো দরকার। এই বিষয়গুলোর উন্নতি করতে পারলে ভারতেও পর্যটকের সংখ্যা অনেক বাড়বে।’’
এখনও পর্যন্ত ১৯৫টি দেশে গিয়েছেন কাশী। এর মধ্যে রয়েছে সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্র দক্ষিণ সুদান। যে দেশ রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে ২০১১ সালে। স্ত্রী বর্ণালীও কম দেশ ঘোরেননি! এখন পর্যন্ত তিনি ঘুরেছেন ১৬৩টি দেশ এবং ৭০টি অঞ্চল। বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরির সূত্রে কাশী এবং তাঁর পরিবারকে থাকতে হয়েছে আমেরিকা, দুবাই এবং চিনে। আপাতত কাশীর ঠিকানা দিল্লি। তবে পাহাড় থেকে সাগর যাত্রা করে এখন তিনি কলকাতায়।
চাকরি করেই এই দেশভ্রমণের নেশা বজায় রেখেছেন কাশী। জানালেন, যখন দেশভ্রমণে যেতেন, অফিস থেকে বিনা বেতনের ছুটি নিয়ে নিতেন। ২০০৯ সালেই কাশীর নাম সবচেয়ে কম সময়ে পৃথিবীর সবক’টা দেশ ঘোরার জন্য ‘গিনেস বুক’এ উঠেছে। তার পরেও অবশ্য থেমে থাকেননি বর্তমানে ৬০ ছুঁই-ছুঁই কাশী।
কাশী তাঁর পাহাড় থেকে সাগর যাত্রায় এটাও প্রচার করেছেন যে রাস্তায় দুর্ঘটনা হয় চালকের ভুলে, গাড়ি চালানোর নিয়ম না মানলে, ট্রাফিক সিগন্যালকে গুরুত্ব না দিলে। এর সঙ্গে জানিয়েছেন, দিকনির্দেশের অভাবও অন্যতম কারণ। বিষয়গুলি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সমাদ্দার দম্পতি গোটা যাত্রাপথে বিলি করেছেন লিফলেট।
ভারতে পর্যটক আকর্ষণের মতো বহু কিছু মজুত থাকলেও আশানুরূপ পর্যটক এখনও আসেন না। কাশীর মতে এর অন্যতম কারণ, পর্যটনের পরিকাঠামোই এখনও এই দেশে ভালভাবে তৈরি হয়নি। ভূপর্যটক কাশীর আফশোস, এত বড় দেশে এক বছরে পর্যটক আসার কারণে যে আয় হয়, তা ম্যাকাও অথবা হংকংয়ের চেয়েও কম।
কাশী জানালেন, তাঁর এই পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট আকারে তিনি জমা দেবেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী এবং পর্যটন মন্ত্রী মহেশ শর্মাকে। এর পাশাপাশি রিপোর্ট জমা দিতে চান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিবালের কাছে।
কাশীর পরবর্তী পরিকল্পনা, জাপানের টোকিও থেকে তুরস্কের ইস্তানবুল পর্যন্ত গাড়িতে সফর করা। সেই সফর হবে ‘আশিয়ান হাইওয়ে’ ধরে জাপান, উত্তর কোরিয়া, চিন, ভারত, পাকিস্তানের উপর দিয়ে।