বাংলা পড়ানোর জন্য শিক্ষক চাই। কিন্তু বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়া হলে চাকরি মিলবে না!
সম্প্রতি রাজপুর-সোনারপুর এলাকার প্রতাপগড়ের একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুল কর্তৃপক্ষ বাংলা ভাষা ও সাহিত্য-সহ বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদনপত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। আগ্রহী চাকরিপ্রার্থীদের ই-মেল করে আবেদন করতে বলা হয়েছে। ওই বিজ্ঞাপনেই লেখা রয়েছে, বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন, এমন চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন করার প্রয়োজন নেই!
বাংলা পড়াতে হবে, অথচ বাংলা মাধ্যমের প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন না— এমন দাবিতে কার্যত হতবাক শিক্ষামহলের একাংশ। ওই স্কুলের অধ্যক্ষ বিজয়া চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি বলেন, ‘‘আসলে অভিভাবকেরা বাংলা মাধ্যমে পড়েছেন, এমন শিক্ষকের কাছে ছেলেমেয়েদের পড়াতে চান না। তাঁরা বলেন, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে যে কারণে ভর্তি করেছেন, বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করা শিক্ষকের কাছে পড়লে সেই ফল মিলবে না। এই চাহিদার দিকটি আমাদের মাথায় রাখতে হয়।’’
এরপর অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘অবশ্য বাংলা বিষয়টি পড়ানোর জন্য বাংলা মাধ্যমে পড়া শিক্ষক শিক্ষিকারা কোনও অংশেই অযোগ্য নন। আমরা ভুলবশত অন্য বিষয়গুলির সঙ্গে বাংলার উল্লেখ করেছি। আমরা ওই ভুল শুধরে নেব।’’
প্রসঙ্গত, ওই বিজ্ঞাপনে বাংলা ছাড়াও সমাজতত্ত্ব, রসায়ন, ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিদ্যা, সমাজবিজ্ঞান, হিন্দি এবং কম্পিউটার পড়ানোর জন্য আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছে। বাংলা মাধ্যম ব্রাত্য হলেও কেন হিন্দি মাধ্যম সম্পর্কে এমন কোনও নির্দেশ নেই, সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মেলেনি।
ওই বেসরকারি স্কুলের এহেন বিজ্ঞাপনে ‘সংকীর্ণ’ মানসিকতা এবং ‘ঔপনিবেশিক প্রভাব’ দেখছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি সমাজে মাতৃভাষা সম্পর্কে অশ্রদ্ধা কোন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ এই বিজ্ঞাপনটি। স্কুল কর্তৃপক্ষের সংকীর্ণ মানসিকতা প্রমাণ করল, আমাদের চেতনায় এখনও ঔপনিবেশিক প্রভাব রয়েছে। এ থেকে মুক্ত হতে না পারলে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব সংকট উপস্থিত হবে।’’