মদ্যপান করে এসে দিনের পর দিন মায়ের উপরে চলত অত্যাচার। অভিযোগ, বার্ধক্য ভাতার টাকাও কেড়ে নিয়েছিল গুণধর ছেলে। এর পরেও টাকার চাহিদা বেড়েই চলেছিল। অবশেষে বাড়িতে এসে মা’কে খুন করল ছেলে। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাতে ঝাড়গ্রাম জেলার লোধাশুলি এলাকার বালিয়া গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বৃদ্ধার নাম সুরুবালি মাহাতো (৭০)।
এই ঘটনার পর পুলিশ তাঁর ছেলে সন্তোষ মাহাতোকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত সন্তোষ মাহাতোর একাধিক বিবাহ রয়েছে। বর্তমান স্ত্রী এবং তাঁর ছেলেদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে সন্তোষ। এমনকী, তার দিদি ছবি মাহাতোকেও অত্যাচার করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে সে।
পুলিশ জানিয়েছে সন্তোষ মাহাতো অত্যন্ত পরিমাণে মদ্যপ। রোজই সে মদ্যপান করে বাড়িতে ফিরে মাকে টাকার জন্য বেধড়ক মারধর করত। প্রতিবেশীরা জানায়, মদ্যপ সন্তোষের অত্যাচারে গ্রামবাসীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।
শনিবার রাতে সন্তোষ মাহাতো তার মা সুরুবালিকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। ব্যাপক মারের ফলে ওই বৃদ্ধা মারা যান। রবিবার ভোরে মায়ের মৃতদেহ ঘরের বাইরে বারান্দায় রেখে গ্রামবাসীদের সে জানায় তার মা শীতে মারা গিয়েছেন। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, রাতে মা’কে খুন করেছে ছেলে। তার পর নিজের ‘কীর্তি’ চাপা দেওয়ার জন্য শীতে মারা যাওয়ার মিথ্যে খবর ছড়াচ্ছে সে। খবর কারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় অভিযুক্ত সন্তোষ গা-ঢাকা দেয়।
গ্রামবাসীরা স্থানীয় সিভিক ভলান্টিয়ারদের পুরো বিষয়টি জানায়। পুলিশে খবর গেলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে। বালিয়া গ্রামের বাসিন্দা নমিতা মাহাতো, জয়ন্তী মাহাতোরা বলেন, ‘‘সন্তোষ অত্যাচার করে তার বৌ এবং ছেলেদের ঘরছাড়া করেছে। ওর আগেও কয়েকটা বিয়ে আছে। একটা দিদি আছে। তাকেও মদের নেশায় মারধর করে ঘর ছাড়া করেছে। প্রত্যেক দিন বৃদ্ধা মাকে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে মারধর করত। ভাতার টাকা নেওয়ার জন্য কালকেও জোর করছিল ওর মাকে। প্রতিদিন মাকে মারত। শনিবার রাতে লাঠি দিয়ে মাকে মেরে খুন করেছে। ওর অত্যাচারে গ্রামবাসীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।”
পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত সন্তোষকে রবিবার ডালকাটি গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এই বিষয়ে ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন “মাকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যে লাঠিটি ব্যবহার করা হয়েছিল সেটি উদ্ধার হয়েছে। রবিবার ভোরে মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।”