এ যেন ‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল’!
আক্ষরিক অর্থেই রাতারাতি লেদ কারখানা হয়ে গেল স্কুল! যা দেখে চোখ কপালে উঠেছে পুরসভা থেকে প্রশাসনের।
ঘটনাস্থল উত্তর দমদমের এয়ারপোর্ট থানা এলাকার গৌরীপুরের শরৎ বসু লেন। সেখানে ‘ডি সি ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে ওই লেদ কারখানাটি বেশ পুরনো। পুরসভার তরফে এয়ারপোর্ট থানায় ওই সংস্থার বিরুদ্ধে এফআইআরও দায়ের করা হয়েছে। পুরসভার তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, এক দিনের নোটিসে কারখানার শ্রমিকদের বরখাস্ত করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে সিবিএসই অনুমোদনপ্রাপ্ত স্কুলের বোর্ড! এমনকী, সেই স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে!
প্রশ্ন উঠেছে, সিবিএসই’র অনুমোদন কি এতই সহজলভ্য?
কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরেই রুগ্ণ। শ্রমিক সংখ্যাও হাতে গোনা। উত্তর দমদম পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রায় ৩৫ কাঠা জমির উপর ওই কারখানার পাঁচিল ঘেরা অংশে রাতের অন্ধকারে বেআইনিভাবে নির্মাণ কাজ চলছে বলে পুরসভার কাছে খবর এসেছিল মাস কয়েক আগে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল (স্বাস্থ্য) মহুয়া শীল বলেন, ‘‘পুরসভার অনুমতি ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই কারখানার বোর্ড উঠিয়ে দিয়ে স্কুলের বোর্ড লাগানো হল। লুকিয়ে নির্মাণ কাজ চলতে লাগল। কেন হল, তার সদুত্তর দিতে পারেননি ওই জমির মালিকেরা। আমরা বাধা দিয়েছি। তাতেও পরোয়া করেননি তাঁরা।’’
যে জমিতে কারখানাটি ছিল তার মধ্যে স্কুল তৈরি করতে গেলে নতুন করে ভবন বানানোর প্রয়োজন। সিবিএসই সূত্রের খবর, স্কুল ভবন যদি সঠিক পরিকাঠামো নীতি মেনে না হয় তা হলে অনুমোদন দেওয়ার কোনও নিয়ম নেই। তাহলে এক্ষেত্রে কি আদৌ সেই অনুমোদন মিলেছে? কারখানাটির দু’জন মালিক সুশান্ত চন্দ এবং দেবব্রত চন্দ। সুশান্তের দাবি, ‘‘কারখানা রুগ্ণ হওয়ার কারণেই স্কুল বানানোর সিদ্ধান্ত। তবে এক্ষেত্রে আমরা জমিটি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে অন্য একটি সংস্থাকে দেবো বলে ঠিক করেছি, যাদের সিবিএসই স্কুলের অনুমোদন আছে। আপাতত ভর্তি শুরু হয়েছে।’’ সুশান্তের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘কাউন্সিলর টাকা চেয়েছিলেন। আমরা দিইনি বলে প্রতিবন্ধকতা আসছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহল ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছি।’’ কাউন্সিলরও পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, ‘‘টাকা চেয়েছি প্রমাণ করতে না পারলে মানহানির মামলা করব আমি।’’
এরই মধ্যে বন্ধ লেদ কারখানার শ্রমিকেরাও ছুটোছুটি শুরু করেছেন শ্রম দফতর থেকে শাসকদলের নেতাদের কাছে। ওই কারখানার শ্রমিক খোকন দে, উত্তম চক্রবর্তীদের বক্তব্য, ‘‘ইএসআই, পিএফ-এর বালাই ছিল না। কিন্তু বকেয়া বেতন ও বোনাসের টাকাও তো আমাদের প্রাপ্য।’’ তাঁরা বলেন, ‘‘যে রাতে কাজ শেষ হওয়ার পর আমাদের জানানো হল যে কারখানা বন্ধ হচ্ছে তখন আমরা বারবার অনুরোধ করেছি, এভাবে বন্ধ না করে আমাদের বিকল্প কাজ খোঁজার সুযোগটুকু দেওয়া হোক। দেওয়া হোক বকেয়া টাকা। এখন না খেতে পাওয়ার অবস্থা। কিন্তু শুনবে কে! ’’
বোর্ড লাগানো হয়েছে, নতুন শিক্ষাবর্ষেই স্কুল চালু হবে বলে। কারখানার গেটে ‘বিদ্যা ভারতী গ্লোবাল স্কুল’ নামে বড় বড় করে লেখা দেখে অনেকেই খোঁজ খবর করছেন। কয়েকজন অভিভাবক জানান, ভর্তির জন্য যোগাযোগের ফোন নম্বরে ফোন করলে ভর্তি ফি বাবদ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এবিটিএ’র নেতা কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ‘‘এভাবে স্কুল চালু হয় নাকি!’’ তিনি বলেন, ‘‘পরিকাঠামো ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছাড়া কোনও স্কুল কী করে চালু হবে? অভিভাবকদের খতিয়ে দেখা উচিত।’’