জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা বলে কথা। একটু আধটু টেনশন তো থাকেই। সন্তানের মাধ্যমিক পরীক্ষা মানে অনেক বাবা-মায়েরই খাওয়া-ঘুম উড়ে যায়। কিন্তু বাংলাতেই রয়েছে এমন এক গ্রাম, যেখানে মাধ্যমিক পরীক্ষাটাই যেন একধরনের ‘শুভ অনুষ্ঠান’।
মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলার চরবাবুপুর গ্রাম। মুর্শিদাবাদ জেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত চরবাবুপুর গ্রামে মাত্র বারোশো মানুষের বসবাস। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগ দিয়ে এই গ্রামে এক অভিনব রেওয়াজ পালন করা হয়। ধ্যমিক পরীক্ষার্থীর পরিবার ব্যবস্থা করেন গোটা গ্রামকে খাওয়ানোর।
গ্রামের উচ্চবিত্ত পরিবারগুলির মধ্যে বহুদিন ধরে এই রেওয়াজ ছিল। কিন্তু এবার নতুন নজির তৈরি করলেন পেশায় রাজমিস্ত্রি মহম্মদ রজব আলির পরিবারও। নিম্নবিত্ত পরিবারের একমাত্র ছেলে শামিম শেখ, তাদের বংশের এই প্রথম মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। তাই গ্রামের সাতশো মানুষকে রীতিমতো কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ালেন বাবা রজব আলি।
পদ্মা নদীর তীরের এই গ্রাম, ভাঙন ও বন্যা কবলিত। স্কুলে যেতে গেলে আট কিলোমিটার দূরে যেতে হয় সাইকেল চালিয়ে। সরকারি উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে এই গ্রাম। কিন্তু গ্রামের ছেলেমেয়েরা যাতে পড়াশোনায় পিছিয়ে না থাকে, তার জন্যই মাধ্যমিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এই আয়োজন করা হয়। তবে সব গ্রামবাসীর সেই সামর্থ্য নেই। যাদের সামর্থ্যে কুলোয়, তাঁরাই এই অনুষ্ঠান করতেন।
রাজমিস্ত্রির কাজ করার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে একটি ছোট মুদিখানার দোকানও চালান শামিমের বাবা রজব আলি। আর্থিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ছেলের ভাল ফলের আশায় গ্রামবাসীর ভুরিভোজের বন্দোবস্ত করেন তিনি।
শুধু খাওয়ানো নয়, গ্রামের আর একটি রেওয়াজ হল পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় গ্রামবাসীরা রাস্তায় বেরিয়ে এসে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে আশীর্বাদ করেন। একইভাবে আশীর্বাদ পাচ্ছে শামিমও।
আগামী দিনে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে আছে শামিম শেখের। গ্রামবাসীদের ভুরিভোজ দেওয়ার পরে ছেলের পরীক্ষার ফল যে ভাল হবেই, সে বিষয়ে নিশ্চিত রজব আলি।