এমাসের শেষ দিকে বা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকেই গঙ্গার নীচে শুরু হবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ। হাওড়ার দিক থেকে থেকে দু’টি টানেল বোরিং মেশিন সুড়ঙ্গ খুঁড়তে খুঁড়তে গঙ্গার নীচ দিয়ে কলকাতার দিকে এগোবে। গঙ্গার নীচে অন্তত আড়াই মাস ধরে এই মহাযজ্ঞ চলবে। এখন তারই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। বিশ্বের অনেক দেশেই নদী বা সমুদ্রের নীচে এমন সুড়ঙ্গ থাকলেও কলকাতা তো বটেই, দেশের মধ্যে এটিই নদীর নীচে প্রথম ট্রান্সপোর্টেশন টানেল। একনজরে দেখে নিন গঙ্গার নীচে ঠিক কীভাবে এগোবে এই কাজ, কী কী সতর্কতা নেওয়া হবে—
১. গঙ্গার গভীরতা ১৩ মিটার মতো। তারও ১৩ মিটার নীচ দিয়ে যাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ।
২. ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর চিফ ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বনাথ দেওয়ানজি জানিয়েছেন, গঙ্গার নীচে থাকা সুড়ঙ্গের বাইরের পরিধি হবে ৬.১০ মিটার এবং ভিতরের পরিধি হবে ৫.৫৫ মিটার।
৩. আপ এবং ডাউন লাইন বসানোর সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য গঙ্গার নীচে দু’টি টানেল বোরিং মেশিন ঢোকানো হবে। কিন্তু গঙ্গার নীচে কাজ চলাকালীন এই যন্ত্রগুলিতে কোনও সমস্যা দেখা দিলে তা মেরামতি করা সময় এবং ব্যয়স্বাপেক্ষ। সেই জটিলতা এড়ানোর জন্য মেশিন দু’টি গঙ্গার নীচে প্রবেশ করানোর আগেই প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এবং মেরামতি করে নেওয়া হচ্ছে।
৪. নির্দিষ্ট দূরত্ব রাখার জন্য একটি মেশিন গঙ্গার নীচে প্রবেশ করার এক থেকে দেড় সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় মেশিনটি গঙ্গার নীচে প্রবেশ করবে। গঙ্গার নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গ কাটতে কাটতে কলকাতার দিকে মহাকরণের কাছে এসে টানেল বোরিং মেশিন দু’টি বাইরে বের করা হবে।
গ্রাফিক্স- বিশ্বজিৎ দাস
৫. গঙ্গার নীচে সুড়ঙ্গে যে কর্মীরা কাজ করবেন, তাঁদের শারীরিক সক্ষমতার উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট শিফটের বাইরে কেউ যাতে অতিরিক্ত কাজ না করেন, এমনকী কাজে যোগ দেওয়ার আগে তাঁরা পর্যাপ্ত ঘুমিয়েছেন কি না, সেই খুঁটিনাটি বিষয়গুলির উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।
৬. গঙ্গার নীচে কাজ করার সময়ে কোনও কর্মী অসু্স্থ হয়ে পড়লে তাঁকে যাতে দ্রুত বের করে আনা যায়, তার জন্য দু’টি ‘ম্যান কেরিয়ার’ আনা হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্প এলাকার বাইরে সবসময় চিকিৎসক, অ্যাম্বুল্যান্সও তৈরি রাখা হবে। সুড়ঙ্গের কাজ চলাকালীন যাতে সেখানে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা ২০ শতাংশর নীচে না নামে এবং তাপমাত্রা যাতে স্বাভাবিক থাকে, সেই বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
৭. এই ধরনের জটিল নির্মাণকাজ করার জন্য এখন বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মানতে হয়। সেই সমস্ত প্রোটোকল মেনেই এই কাজ করা হবে।
৮. আরো একটি বিষয়ে আশ্বস্ত করছেন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের চিফ ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বনাথ দেওয়ানজি। তিনি জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গ তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে ভবিষ্যতে কোনও ভাবেই তার মধ্যে গঙ্গার জল ঢোকার আশঙ্কা নেই। যদিও, কাজ চলাকালীন আপৎকালীন পরিস্থিতিতে জল বের করে দেওয়ার জন্য তৈরি রাখা হবে বিশেষ পাম্পিং সিস্টেম।