সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করায় সোমবারও পুলিশকে ভর্ৎসনা করল হাইকোর্ট। নেপালের দু’টি সংস্থাকে ভোজ্য তেল সরবরাহে বাধা দেওয়া নিয়ে দায়ের হওয়া এক মামলায় এদিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীকে ভর্ত্সনা করেছে প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এবং বিচারপতি অরিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। ক্ষুব্ধ বিচারপতি এদিন মন্তব্য করেছেন, ‘‘পুলিশ কেন ভীত হয়ে পড়েছে? পেশীশক্তি কখনওই রাজ্য চালাতে পারে না।’’
প্রসঙ্গত, বজবজের ডিপো থেকে মাঝেরহাট পর্যন্ত ট্যাঙ্কারে করে ভোজ্য তেল নিয়ে যায় নেপালের ওই দুই সংস্থা। কিন্তু সিন্ডিকেট এবং তোলাবাজির দাপটে সেই কাজ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে তারা। বজবজ পুরসভার তিন তৃণমূল কাউন্সিলর দীপক ঘোষ, প্রতিমা ধাড়া এবং ছোটেলাল সাউয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে কোনও কাজ হয়নি বলেও তাদের দাবি। এর প্রেক্ষিতেই ক্ষুব্ধ ডিভিশন বেঞ্চ পুলিশ সুপারকে তলব করে। সশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে।
পুলিশ সুপার এদিন আদালতে জানান, পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ করছে। তা শুনে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘সংস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? অভিযুক্তেরা এখনও গ্রেফতার হয়নি কেন?’’ আদালতের ভর্ত্সনা এবং প্রশ্নের মুখে কার্যত চুপ করে ছিলেন পুলিশ সুপার। প্রধান বিচারপতি তখন ফের বলেন, ‘‘সংস্থা দু’টি হুমকির মুখে রয়েছে। আর পুলিশ বলছে তারা কিছু জানে না! এইভাবে চলতে পারে না।’’ ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি জানান, এভাবে চলতে থাকলে আদালত স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করবে।
প্রধান বিচারপতির প্রশ্নবাণের সামনে এদিন কার্যত মুখই খুলতে পারেননি পুলিশ সুপার। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র তখন বলেন, ‘‘কোনও অভিযুক্তকেই ছাড়া হবে না। পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। তিন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের হয়েছে।’’ এই বক্তব্য শুনে প্রধান বিচারপতি ফের বলেন, ‘‘সবই যদি ঠিক থাকে, তাহলে সংস্থা দু’টি আদালতে এসেছে কেন? এই ধরনের অভিযোগের উপর কেন আমায় ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে?’’ প্রধান বিচারপতির বক্তব্য, ‘‘প্রশাসন ব্যর্থ হলে মানুয কোথায় যাবে? পুলিশ যদি নিরাপত্তা দিতে না-পারে তবে সমাজের কাছে ভুল বার্তা যাবে। তখন ব্যবসা চালাতে সংস্থাগুলিকে বারবার আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।’’