বিদ্যার দেবীর আরাধনায় মেতেছে রাজ্য। শিশুদের হাতেখড়িও দেওয়া হয় এই সময়ে। তবে এ বার অন্য এক উদ্যোগ দেখা গেল মালদাতে। শিশু নয়, রবিবার হাতেখড়ি দেওয়া হল বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের।
কারও বয়স ৬০ বছর। কারও বয়স ৭০। কেউ আরও বেশি প্রায় ৮০ ছুঁইছুঁই। শিশু বয়সে এঁরা কেউই প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ পাননি। জীবন সায়াহ্নে এসে স্কুলে দেবী সরস্বতীর সামনে হাতেখড়ি হল তাঁদের। স্লেটে পেনসিল দিয়ে লিখলেন অ, আ, ক, খ। তাঁদের ‘হাতেখড়ি’ দেওয়ালেন খোদ মালদহের জেলাশাসক আর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ চেয়ারম্যান। অভিনব এই বয়স্ক শিক্ষার আয়োজক মালদার ২ নম্বর গর্ভমেন্ট কলোনি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।
২২ জন বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে নিয়ে সরস্বতী পুজোর প্রাক্কালে অভিনব বয়স্ক শিক্ষার আসর বসল মালদা। কথায় আছে শিক্ষার কোনও বয়স হয় না। দেবী সরস্বতীর সামনে সাক্ষরতার শপথ নিয়ে এমনই বার্তা দিলেন মালদার ২ নং গর্ভমেন্ট কলোনির নিরক্ষর এই বয়স্করা।
এ বছর স্কুলের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ। স্কুলের বর্ষপূর্তিতে আড়ম্বর না করে এই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন স্কুলের দশজন শিক্ষক ও শিক্ষিকা। এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে খুঁজে একত্রিত করা হয়েছে এমন ২২ জনকে যাদের কেউই কখনই স্কুলের মুখও দেখাননি। তাঁদেরই লেখাপড়ার পাঠ দিয়ে সাক্ষর করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এ বছর।
দেখুন ভিডিও
শুধু হাতেখড়ি দেওয়াই নয়, রবিবার বিকেলে চালু করা হল বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রও। ঠিক হয়েছে, স্কুলের ছুটির দিনে প্রতি রবিবার প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা নিয়ম করে পড়াবেন বয়স্কদের। শুধু তাই নয় পড়াশুনার উপকরণ, অন্যান্য খরচও যোগাবেন তাঁরাই। হাতের কাছে এমন সুযোগ পেয়ে আত্মহারা বয়স্করাও। শেষ বয়সে এসেও শিক্ষার পাঠ নিতে যাঁদের আগ্রহেরও শেষ নেই।
প্রথমদিন হাতেখড়ির ভিড়ে নজর কাড়ল আরও এক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। যেখানে পাশাপাশি বসে স্লেট, পেনসিল নিয়ে হাতেখড়ি নিলেন ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মা আর ৬২ বছরের ছেলে। দারিদ্রের কারণে মা-ছেলে কারও শিক্ষার সুযোগ হয়নি। শেষ বয়সে ছেলের হাতে স্লেট-পেনসিল দেখে আবেগতাড়িত মা রুনু ধর। আর মা’কে শিক্ষাকেন্দ্রে আনতে পেরে খুশির অন্ত নেই ছেলে সমীর ধরেরও।