শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সব স্তরের প্রতিনিধিদেরই ডেকেছিলেন। সেই বৈঠক থেকেই একটি বড় রাজনৈতিক সমীকরণ বদলের ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। আবার কংগ্রেসের কাছাকাছি আসার কথাই স্পষ্ট হয়ে উঠল মমতার কথায়।
বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের সূত্র বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে জানিয়ে দিয়েছেন, মোদী বিরোধী জোট গড়ার যে চেষ্টা চলছে, তা ইতিবাচক দিকেই এগোচ্ছে। দলের নেতাদের এখনই কংগ্রেসকে বেশি আক্রমণ না করারই পরামর্শ তিনি দিয়েছেন বলেই খবর। কারণ মোদী বিরোধী জোট কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করেই শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন তিনি। নেতাদের কথায়, কংগ্রেসের বিষয়টা তিনি নিজেই দেখে নেবেন বলে জানিয়েছেন মমতা।
মমতার আশঙ্কা লোকসভা ভোট ২০১৮ সালের শেষে এগিয়ে এনে, একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ভোট করতে চাইছেন মোদী। সব কিছুর জন্য দলের নেতাদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে যে মোদী-বিরোধী জোট গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাতে মমতাও সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে উদ্যোগী হতে চান। এই জোটকেই লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত জিইয়ে রাখতে চান তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বেশি আক্রমণাত্মক হতে চাইছেন না মমতা। এমনটাই ধারণা নেতাদের।
এই সপ্তাহেই সনিয়ার সঙ্গে মমতা বৈঠক করে এসেছেন। আবার ২৫ মে দিল্লি যাবেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করতে।
কোর কমিটির বৈঠক থেকেই মমতা বলেছেন, বাম-বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসা করছে। কালক্ষেপ না করে যখনই এমন পোস্ট দেখলেই, তখনই সেই কুৎসার জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাম-বিজেপিকে মমতা অনেকদিন ধরেই এক পংক্তিতে বসাচ্ছেন। এ দিনও তার থেকে ভিন্ন কথা বলেননি তিনি। তবে কংগ্রেস সম্পর্কে মমতার নরম মনোভাব জল্পনার সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন:—
‘শুভ’ দিনে সুদীপের জামিন। খুশি হয়ে কী বললেন মমতা
জামিন পেলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার কী হবে, উঠে এল ৫টি প্রশ্ন
তৃণমূল সূত্রের খবর, এখনই রাজ্যসভা প্রার্থীদের নাম ঘোষণা না করে মমতা নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ গড়তে চাইছেন। রাজ্যসভার ষষ্ঠ আসনটিতে কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থনের কথাও উঠে আসছে আলোচনায়।
সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের মমতা-বিরোধিতা ও বাম-ঘনিষ্ঠতা বড় ধাক্কা খাবে। ইতিমধ্যে মমতা-সনিয়া বৈঠকের বিরোধিতা করে জাতীয় নেতৃত্বকে লম্বা চিঠি দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
যেভাবে পুর নির্বাচনে অধীরের খাসতালুক মুর্শিদাবাদের ডোমকল পুরসভায় তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে, তাতে অধীরের চিরাচরিত মমতা-বিরোধিতা আরও বহুগুণ বেড়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু সেখানে জাতীয় স্তরে এমন সমঝোতা হয়ে গেলে, স্থানীয় নেতৃত্ব ব্রাত্য হয়ে যেতে বাধ্য। অধীর ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন তিনি বিজেপি-তে যেতে পারেন। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও দরজা খুলে রেখেছেন।
অন্যদিকে কংগ্রেস-তৃণমূল একজোট হলে বাম কংগ্রেস-সখ্যও আর থাকার প্রশ্নই নেই। এই অবস্থায় রাজ্য রাজনীতির সমীকরণে আমূল বদল আসবে।
তাই তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে মমতার বার্তা নতুন ইঙ্গিত বয়ে নিয়ে এল।