‘‘তোর পড়ার যে জিনিসগুলো বুঝতে অসুবিধা, আমার বাড়িতে চলে আয় বুঝিয়ে দেব।’’ জেঠতুতো দাদার এহেন প্রস্তাব সরল মনে বিশ্বাস করেছিল বোন। দাদার বাড়িতে বই নিয়ে চলে গিয়েছিল। ভাবতেও পারেনি, তার জীবনের উপরে নেমে আসতে চলেছে কালো পর্দা। খুড়তুতো বোনকে পড়ানোর নাম করে বাড়িতে ডেকে ধর্ষণ করে খুন করেছিল যুবক। অভিযুক্তকে আজীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল মেদিনীপুর আদালত।
২০১৫ সালের ১৮ মার্চ এই ঘটনাটি ঘটেছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি থানার অন্তর্গত ঢ্যাঙাশোল গ্রামে। শালবনি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল যুবক বাপ্পাদিত্য মাহাতোর খুড়তুতো বোন। কাকার বাড়ির উলটো দিকে ছিল বিবাহিত বাপ্পাদিত্যর মাটির বাড়ি। সেদিন ওই ছাত্রীর বাড়িতে কেউ ছিল না। মেধাবী বোনকে পড়ানোর টোপ দিয়ে বাড়িতে ডেকে এনে ওইদিন দুপুরে ধর্ষণ করে সে। তার পর প্রমাণ লোপাট করতে খুন করে। তার পর তার দেহ বস্তায় ভরে বাড়িতে খাটের তলায় লুকিয়ে রাখে।
পরে মেয়েটির পরিবারের সবাই যখন তার খোঁজ করতে থাকে, তখন সেই দলে মিশে খোঁজার অভিনয় করে যাচ্ছিল বাপ্পাদিত্য নিজেও। বিকেল পর্যন্ত না খোঁজ পাওয়ার পর সন্দেহবশত ওই যুবকের বাড়ি পরীক্ষা করতে গিয়ে বস্তায় ভরা দেহ দেখতে পেয়েছিল মেয়েটির বাবা-মা। এর পরই ফেরার হয়ে গিয়েছিল বাপ্পাদিত্য। শালবনি থানার পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে কয়েক দিন পরে তাকে গ্রেফতার করেছিল মেদিনীপুর শহর থেকে। জেল হেফাজতে ছিল সে। অবশেষে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর আদালত বাপ্পাদিত্যকে দোষী সাব্যস্ত করে।
শুক্রবার মেদিনীপুর আদালতের বিচারক বাপ্পাদিত্যকে আজীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। সেই সঙ্গে আরও কয়েকটি ধারায় ৭ বছরের জেল, অন্য একটি ধারায় এক মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করেন।
এ রায় শোনার পর মৃতার বাবা বলেন, ‘‘বাপ্পাদিত্য আমার ভাইপো, কিন্তু তা হলেও ওর ফাঁসি হলে অনেক বেশি শান্তি পেতাম। তবু আদালত যা রায় দিয়েছে তাতে খানিকটা স্বস্তি।’’