দু’বছর আগে কলকাতার রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ড নড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবার হাওড়ার শিবপুরে। মায়ের মৃত্যু তিনদিন আগে হয়েছিল। তবে সে কথা সম্পূর্ণ গোপন রেখে সেই মৃতদেহ খাটের উপর কম্বল ও বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছিল ছেলে। শনিবার প্রতিবেশিরা দুর্গন্ধ পেয়ে শিবপুর থানায় খবর দেয়। বলাই মিস্ত্রি লেনের এক বহুতলের নিচের ফ্ল্যাট থেকে দুপুরে উদ্ধার হয়েছে বৃদ্ধা সন্ধ্যারানী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেহ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জোর করে দরজা খুলিয়ে দেহটি উদ্ধার করতে হয়েছে। সন্ধ্যাদেবীর ছেলে অপূর্ব মানসিক ভারসাম্যহীন। সে এভাবেই তিনদিন ধরে মরা মায়ের দেহ আগলে বিছানায় কম্বল চাপা দিয়ে রেখে দিয়েছিল। পুলিশ ওই পচাগলা দেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম সন্ধ্যারানী বন্দ্যোপাধ্যায়(৮০)। শিবপুর থানার ব্যাতাইতলা এলাকার বলাই মিস্ত্রী লেনের বহুতলের বাসিন্দা ছিলেন তিনি।
দেখুন ভিডিও...
গত কয়েকদিন ধরেই বৃদ্ধার ঘর থেকে পচা গন্ধ বেরোচ্ছিল। এতেই সন্দেহ জাগে প্রতিবেশীদের। তাঁরা সেই বৃদ্ধার ছেলে অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেকথা বলেন। অপূর্ববাবু ঘর খুললে সকলে বৃদ্ধার পচাগলা মৃতদেহ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন। মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। ঘটনার তদন্তে নেমেছে শিবপুর থানার পুলিশ।
ছেলে অপূর্ব জানান, ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। অপূর্ববাবুর মা গত কয়েক মাস ধরেই অসুস্থ ছিলেন। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো মাকে হাসপাতালে ভর্ত্তির চেষ্টা তিনি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মা তাতে রাজি হননি।
প্রতিবেশীরা কী বলছেন...
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অপূর্ববাবুর আদি বাড়ি ভবানীপুরে। বছর দশেক আগে হাওড়ার শিবপুরের বলাই মিস্ত্রি লেনে থাকার জন্য ফ্ল্যাট কিনে কলকাতার ভবানীপুর থেকে চলে এসেছিলেন তাঁরা। রানীগঞ্জের কয়লা খনিতে অপূর্ববাবুর বাবার শেয়ার ছিল। অপূর্ববাবুর বাবা মারা যান ১৯৯৫ সালে। তিনি ব্যাঙ্ককর্মী ছিলেন। সেই পেনশনের টাকাতেই এদের সংসার চলত। অপূর্ব কিছু কাজ করতেন না। মায়ের মৃত্যুর মতোই অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদার মৃত্যু সন্দেহজনক। বাবার মৃত্যুর কয়েক বছর পর দাদার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তারপর থেকে মায়ের সঙ্গেই থাকতেন অপূর্ব।
মৃতদেহের দুর্গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রতিবেশীদের। — নিজস্ব চিত্র
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অপূর্ববাবু প্রকৃতস্থ নন। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি মায়ের দেহ চাদর ঢাকা দিয়ে আগলে রেখেছিলেন তিনদিন ধরে। কোনও আত্মীয় বা প্রতিবেশীদেরও মায়ের মৃত্যুর খবর দেননি। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রতিবেশীরাই পুলিশে খবর দেন। তারপর মৃতার ছেলে অপূর্বকে তাঁর আত্মীয়েরা কলকাতায় হরিদেবপুরের বাড়িতে নিয়ে যান।