লোকসভা নির্বাচনের দামামা বাজা শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা শুরু করবেন ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে। তার আগেই রাজ্যে এসে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১৬ তারিখ মেদিনীপুর শহর থেকেই লোকসভার বাঁশি বাজিয়ে দেবেন তিনি।
কিন্তু মোদী যে মূল থিম ঠিক করেছেন তাঁর সভার, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি অনুযায়ী তা ঠিক কতটা কাজের তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ‘কৃষি কল্যাণ সমাবেশ’ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
কৃষকদের জন্য তাঁর সরকার কী কী করেছে তারই ফিরিস্তি দিয়ে ভোটের হাওয়া তোলার কথা মোদীর।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতিতে কৃষকদের প্রকল্পের ফিরিস্তি দিয়ে কতটা লাভ হবে তা নিয়ে সংশয়ে বিজেপির নেতা-কর্মীরাই। তৃণমূলের লোকজন তো তারিয়ে তারিয়ে এটা উপভোগ করবেনই।
ধানের মতো খাদ্যশস্যের দাম বাড়িয়ে, কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ও গরিব-মধ্যবিত্তের জন্য স্বাস্থ্যবিমা চালু করে মোদী আসছেন লোকসভা ভোটের হাওয়া তুলতে।
কিন্তু বাংলার চাষিদের মনে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে এখনও সেরকম ভয়ঙ্কর কোনও ক্ষোভ জমেছে বলে মনে হয় না। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মতো জমি আন্দোলন যাঁকে ক্ষমতার কুর্সিতে বসিয়েছে, তাঁর উপর এখনও তেমন অবিশ্বাস তৈরি হয়নি বাংলার কৃষককুলের।
ইতিমধ্যেই খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই চিঠি লিখে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা ২০২২ পর্যন্ত অপেক্ষা না করে ইতিমধ্যেই চাষীদের আয় ২.৬ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ৯১ হাজার টাকা থেকে তা বেড়ে হয়েছে ২.৩৯ লক্ষ টাকা।
শুরুতে দালালদের বা চালকল মালিকদের খপ্পরে পড়ে ধান বিক্রিতে বেশ চাপে পড়েছিলেন বাংলার চাষীরা। কিন্তু সে সব নিজগুণে সামলে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে বিজেপি শাসিত ছত্তিশগড় বা মহারাষ্ট্রে কিন্তু কৃষকদের নিয়ে সরকারের রেকর্ড খুব একটা ভাল নয়। শস্যের দাম হোক বা কৃষক আত্মহত্যা— বার বার শিরোনামে এসেছে বিজেপির রাজ্য সরকারগুলি।
ফলে কৃষক কল্যাণে মোদীর পদক্ষেপের যতটা মূল্য সেই সব রাজ্যে রয়েছে, তা কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ততটা নেই।
তার চেয়ে বরং মোদীর কাছে বিজেপির নেতা-কর্মীরা শুনতে চাইবেন অন্য কথা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কী ভাবে শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠল, কী ভাবে রাজ্যে বিরোধীদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে, কী ভাবে দিকে দিকে তোলাবাজি বাড়ছে— এসব বিষয়ে কথা বললে রক্ত গরম হতে পারে বিজেপির সাধারণ কর্মীদের।
নরেন্দ্র মোদী কি জোর গলায় মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়ে বলবেন, ‘‘মমতাজি, আপনার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সারদা বা নারদের তদন্ত সিবিআই নিজের মতো করে করবে। সরকারের কোনও হস্তক্ষেপ থাকবে না। তদন্তের গতি কমানো বা বাড়ানোর মতো কোনও অভিযোগের আঙুল কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তুলতে পারবে না’’ ?
দুর্ভাগ্যের বিষয় তখন মোদীর মঞ্চ আলো করে হয়তো বসে থাকবেন স্বয়ং মুকুল রায়। নারদ ও সারদা দুই তদন্তেই যাঁর নাম উঠে এসেছিল। তৃণমূল ছেড়ে তিনি তো এখন মোদীর ছত্রছায়ায়!
প্রধানমন্ত্রী কি জোর গলায় বলতে পারবেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের ৩১ শতাংশ সংখ্যালঘুদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। বিজেপি সরকার ধর্মের ভিত্তিতে কোনও বিভাজন করবে না। সবাইকে সমান চোখে দেখবে। আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যে বিজেপি কর্মী বা নেতা আদিবাসী বা দলিতদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করবেন, তাঁকে দল কড়া শাস্তি দেবে’’?
না তো সংখ্যালঘু, না দলিত, না আদিবাসী— কোনও সম্প্রদায়ের ব্যাপারেই প্রধানমন্ত্রীর দলের সর্বভারতীয় রেকর্ড খুব একটা ভাল নয়। এদিকে যে অঞ্চলে সভা করতে যাচ্ছেন মোদী, সেখানে আদিবাসীদের মন জয়ই বিজেপির লক্ষ্য।
দেখা যাক, প্রধানমন্ত্রী তাঁর আস্তিন থেকে কোন তাস বের করেন। কী ভাবে বিজেপি কর্মীদের উদ্ধুদ্ধ করেন। কী ভাবে আদিবাসীদের মন জয় করেন। পাঁচ দিনের মধ্যেই অবশ্য মেদিনীপুরের জবাব ধর্মতলা থেকে আসবে। বিশ্বকাপের পরে বাঙালির আড্ডার প্লেটে ইস্যুর কোনও অভাব হবে না।