ডেঙ্গি ‘আতঙ্কে’ এ যেন পড়িমড়ি করে দৌড়!
দৌড়চ্ছে স্বাস্থ্যভবন!
রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে স্বাস্থ্যভবনের আধিকারিকদের একটা বড় অংশ ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন আর শুধু শহর নয়—জেলায় জেলায় ডেঙ্গির ‘উপস্থিতি’ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যভবন। আসল তথ্য ‘চেপে’ গেলেও জেলা থেকে আসা ডেঙ্গি সংক্রান্ত তথ্য ‘রক্তচাপ’ বাড়াচ্ছে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য আধিকারিকদের অনেকেরই।
ছুটির দিন কিংবা রবিবার বলে কিছু নেই স্বাস্থ্যভবনের ‘ডেঙ্গি-ক্যালেন্ডারে’। গত ১৬ সেপ্টেম্বর, রবিবার উত্তরবঙ্গে গিয়েছিলেন আধিকারিকেরা। সেখানে শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার-সহ উত্তরের জেলাগুলিতে বৈঠক করেন। ফিরে এসে ২৩ সেপ্টেম্বর বৈঠক হয় পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। সেদিন রাতেই স্বাস্থ্যভবনের আধিকারিকেরা যান পুরুলিয়া। পরদিন পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ায় বৈঠক করেন। তারপর বীরভুম, হুগলিতে বৈঠক হয় ডেঙ্গি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা (প্রশাসন) অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘বিভিন্ন জেলায় ঘুরছি। ডেঙ্গি সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের নির্দেশিকা ঠিকভাবে মানা হচ্ছে কি না দেখছি। সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি।’’ তিনি জানান, রাজ্য জুড়ে ৩ হাজারেরও বেশি চিকিত্সককে ডেঙ্গি রুখতে, ডেঙ্গির চিকিত্সার বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন ডেঙ্গি মোকাবিলায় আক্রান্তদের চিকিত্সার বিষয়ে নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ডেঙ্গির তাড়া খেয়ে এখন জেলায় জেলায় ঘুরছে মিনি স্বাস্থ্যভবন।’’
স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে থাকছেন জেলাশাসক, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-২।
কোন জেলায় কোন অংশে জ্বরের প্রকোপ বেশি, জ্বরের কারণ কী, কোন অংশের মানুষ বেশি জ্বরে ভুগছেন, জ্বরে আক্রান্তদের বাইরের কোনও রাজ্যে যাওয়ার কোনও তথ্য আছে কি না, সে সবেরই পর্যালোচনা চলছে বৈঠকগুলিতে। কড়া নজরদারির পাশাপাশি, বার বার জেলায় ঘুরে চাপ রাখতে চাইছে স্বাস্থ্যভবন। উত্তরবঙ্গের এক স্বাস্থ্য আধিকারিক রবিবার বলেন, ‘‘ডেঙ্গির তথ্য জেলা থেকে একমুখী ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বাস্থ্যভবনে পৌঁছচ্ছে। ফলে পাশের জেলা জানতে পারছে না প্রতিবেশী জেলায় কী পরিস্থিতি। এটা অবৈজ্ঞানিক। তথ্য চেপে রাখতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে।’’
সমালোচনা যাই হোক না কেন, এখন জ্বর হলেই ডেঙ্গি পরীক্ষায় এলাইজা পদ্ধতিতে এনএসওয়ান এবং আইজিজি-আইজিএম করাতে বলা হচ্ছে। কীভাবে চিকিত্সা হবে, কী ওষুধ প্রয়োগ হবে, কোন হাসপাতালে কোন কোন পরিষেবা মিলবে— তা নিয়েও জেলায় ঘুরে নির্দেশ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। অজয় বলেন, ‘‘ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল ঠিক করে দিয়েছি। তা নিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি সকলকে। যেন সেগুলো সব মানা হয় তা সুনিশ্চিত করছি।’’ তিনি জানান, সঠিক চিকিত্সা হচ্ছে কি না, সে বিষয়েও জেলার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জেলাস্তর পর্যন্ত নজরদারি চালানো হচ্ছে। চিকিত্সকেরা প্রোটোকল মানছেন কি না তা নিয়েও চলছে ‘মনিটরিং’।
অজয়ের কথায়, ‘সরকার সতর্ক। সতর্ক রয়েছি আমরাও।’’