নির্বাচন কমিশনকে এক কথায় সুবিধা করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। অনেক বড় চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়েছে। তবু চিন্তা কমছে না। কমছে না ভোটের দিনের অশান্তি নিয়ে আশঙ্কা।
পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের ২০ হাজারের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন শাসক দল তৃণমূলের প্রার্থীরা। বিরোধীরা এই জয়কে ‘গা-জোয়ারি’ বলে যতই কটাক্ষ করুক, এর ফলে অনেকটাই সুবিধা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের। তৃণমূল ভোটের আগে যে ২০ হাজার আসনে জিতে গিয়েছে তার মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ মিলিয়ে প্রায় ১১ হাজার বুথে ভোটই হচ্ছে না। ফলে কমিশনের পক্ষে একটা বড় দুশ্চিন্তা কমে গিয়ছে।
ভোটই হবে না যে সব বুথে সেখানে ভোটকর্মী বা নিরাপত্তারক্ষী মোতায়নের প্রয়োজন নেই। তবুও চিন্তিত রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত যে নিরাপত্তা প্রস্তাব দিয়েছে তাতে আদৌ সন্তুষ্ট নয় কমিশন। জানা গিয়েছে, কমিশন এখনও চায় রাজ্যে আধা সামরিক বাহিনী আসুক।
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টও নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। শুক্রবার আদালতে জবাব দিতে হবে কমিশনকে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য, রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎকর পুরকায়স্থ এবং এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা। কিন্তু সেখানেও সরকার ও কমিশন ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি বলেই খবর।
ইতিমধ্যেই অতি স্পর্শকাতর, স্পর্শকাতর এবং সাধারণ হিসেবে রাজ্যের সব বুথকে ভাগ করেছে কমিশন। আর তাতে স্পর্শকাতর ও অতি স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা এতটাই বেশি যে চিন্তা কমছে না।
কমিশনের পরিকল্পনা অতি স্পর্শকাতর বুথে চার জন, স্পর্শকাতর বুথে দু’জন এবং সাধারণ বুথে এক জন করে সশস্ত্র পুলিশ থাকুক। অন্য দিকে, রাজ্য সরকার চাইছে বুথ হিসেবে নয়, ভোটকেন্দ্র পিছু নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হোক। একটি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে থাকা সবকটি বুথ
সামলাবে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি দল। কিন্তু সেই দলে কত জন সশস্ত্র পুলিশ এবং কত জন লাঠিধারী থাকবে তার হিসেব এখনও স্পষ্ট নয়।
প্রয়োজনে ভিন রাজ্য থেকে বাহিনী আনতে চায় সরকার। কিন্তু এখনও সেই বাহিনীর হিসেব হাতে নেই। সব মিলিয়ে ভোটের দিনের অশান্তি নিয়ে উদ্বেগ থাকছেই।
উল্লেখ্য, রাজ্যের হাতে ৪৬ হাজার সশস্ত্র রাজ্য পুলিশ রয়েছে। এছাড়া সশস্ত্র কলকাতা পুলিশ ১২ হাজারের মতো। আবগারি দফতর, কারা বিভাগ এবং বনরক্ষী মিলিয়ে আরও হাজার দু’য়েক নিরাপত্তা রক্ষী মিলবে।
শুক্রবার রাজ্যের দেওয়া এই হিসেবই আদালতে পেশ করতে পারে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু যে অঙ্ক নিজেরাই মেলাতে পারছে না তা কি আদৌ আদালতকে বোঝাতে পারবে?