পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের বড়সড় ধাক্কা খেল নির্বাচন কমিশন। ই-মেলের মাধ্যমে সিপিএম প্রার্থীদের মনোনয়ন গ্রহণ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়ে যুগান্তকারী রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ২৩ এপ্রিল ২০১৮ বেলা ৩টে পর্যন্ত সিপিএম প্রার্থীদের যত ই-নমিনেশন জমা পড়েছে, তা গ্রহণ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এ দিন ই-মেলের মাধ্যমে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আবেদন জানিয়ে দায়ের করা মামলায় এই সিদ্ধান্ত জানাল বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার এবং অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
রায় দিতে গিয়ে আদালত বলে, ই-নমিনেশনের মাধ্যমে প্রার্থীপদ জমা পড়লে ভোটারদের সামনেও প্রার্থী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলি বিকল্প থাকবে। এর ফলে নির্বাচনী সংঘর্ষে মৃত্যুর হারও অনেক কমবে বলে নিজেদের পর্যবেক্ষণে রায় দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, কোনও দলের মনোনয়ন গ্রহণ করা হবে কি হবে না, তা অন্য কোনও রাজনৈতিক দল ঠিক করতে পারে না। এবিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দেওয়ার এক্তিয়ারও কোনও দলের নেই।
ই-মেলে মনোনয়ন জমা দেওয়ার দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলা দায়ের করেছিল সিপিএম। তাদের অভিযোগ ছিল— গত ২৩ এপ্রিল আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত দিন ঘোষণা করা হলেও বহু প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি।
এ দিন রায় দিতে গিয়েও বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চ নিজেদের পর্যবেক্ষণে বলে, ই-মেলে সিপিএমের পাঠানো মনোনয়নপত্র দেখার ক্ষেত্রে অনীহা দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে ভাঙরের কয়েকজন প্রার্থীর ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপে জমা দেওয়া মনোনয়ন গ্রহণ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।
এই মামলায় সোমবারই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন দুই বিচারপতি। আদালতের নির্দেশমতো সঠিক নথি পেশ না করায় কমিশনকে ভর্ৎসনা করেছিল ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতিরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘কমিশনের ঘুম কি এখনও ভাঙেনি?’’
সোমবারের শুনানি চলাকালীন বিচারপতি সমাদ্দার কমিশনকে প্রশ্ন করেন, ২৩ এপ্রিল বিকেল ৩ টের মধ্যে ইমেলের মাধ্যমে কমিশনে ক’টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল? উত্তরে কমিশনের আইনজীবী নয়ন বিহানী জানিয়েছিলেন, ‘‘আমরা ওইদিন বিকেল ৩টের মধ্যে মোট ৩৪০টি অভিযোগ পাই। বিকেল ৩ টের মধ্যে ৬২টি মনোনয়ন ই-মেলে এসেছিল। যার মধ্যে ২৫টি মনোনয়নে সমস্ত ডকুমেন্ট ছিল।’’
তখন ডিভিশন বেঞ্চ কমিশনের আইনজীবীর কাছে জানতে চায়, ‘‘ইমেল মারফত আসা অভিযোগগুলি নিয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন?’’
জবাবে নয়ন বিহানী জানান, অভিযোগগুলি যে জেলার, সেখানকার জেলাশাসকদের বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
কমিশনের পক্ষে আদালতে তাদের আইনজীবী অবশ্য বার বারই দাবি করেছেন, পঞ্চায়েত আইনের ৪৬ নম্বর ধারায় ই-মেলের মাধ্যমে মনোনয়ন জমা নেওয়ার কোনও সংস্থান নেই।
সিপিএমের তরফে তাদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের দাবি ছিল, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ই-মেলের মাধ্যমে মনোনয়ন গ্রহণ করা যাবে। আর কমিশন ই-মেলে মনোনয়ন নিয়ে যে সংখ্যাটা আদালতে দিচ্ছে, তা পুরোপুরি ভুল। আসলে সিপিএমের মোট ৮৪৫ জন প্রার্থী ই-মেলে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন।