রোদে পোড়ে না, জলে ভেজে না, আগুনেও মারাত্মক দূষণের ভয়— এ হেন ‘লয়ক্ষয়হীন’ প্লাস্টিককে তপ্ত বিটুমিনের সঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশবান্ধব গ্রামীণ রাস্তা তৈরিতে নামছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর।
ইতিমধ্যে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নোয়ন মন্ত্রকের মাধ্যমে মধ্যপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা কথাবার্তা হয়েছে পঞ্চায়েত ভবনের। পুজোর পরে পঞ্চায়েত কর্তাদের একটি দল মধ্যপ্রদেশ ছাড়াও মহারাষ্ট্র ও তেলঙ্গানার মতো যে রাজ্যগুলি এই পদ্ধতিতে রাস্তা তৈরি করছে সেখানে যাবে। পঞ্চায়েত ভবনের আশা, চলতি বছরেই বেশ কিছু গ্রামীণ রাস্তা তৈরিতে ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসাবে ওই নয়া পদ্ধতি প্রয়োগ করা যাবে। এক পঞ্চায়েত কর্তা বলেন, ‘‘প্লাস্টিক কুচো কুচো করে কেটে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গরম বিটুমিনের সঙ্গে মিশিয়ে সেই মিশ্রণ রাস্তায় ঢাললে বর্ষায় জল চুঁইয়ে ভিতরে ঢোকার প্রবণতা অনেকটাই কমে। পাশাপাশি রাস্তার ভিতরের অংশে বিটুমিনে ফাটল ধরার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমবে।’’ মধ্যপ্রদেশ সরকার এ ভাবে রাস্তা বানিয়ে হাতেনাতে ফল পেয়েছে। এতে এক দিকে যেমন রাস্তার আয়ু বাড়বে, তেমনই কমবে সারাই-খরচও।
প্রাথমিক ভাবে কলকাতা লাগোয়া দুই ২৪ পরগনা ও মালদহে ওই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। এক পঞ্চায়েতকর্তা বলেন, ‘‘মালদহের সুজাপুরের একটি বড় অংশের মানুষ প্লাস্টিক কুড়িয়ে দিন গুজরান করেন। সেই কারণেই সুজাপুরকে পাইলট প্রজেক্টের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।’’ উল্টো দিকে ধাপায় জড়ো হওয়া প্লাস্টিক কলকাতা পুরসভার মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই পাহাড়প্রমাণ প্লাস্টিক যাতে রাস্তা তৈরিতে কাজে লাগানো যায় সেই আর্জি জানিয়ে কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিচ্ছে পঞ্চায়েত দফতর।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসাবে, সারা দেশে প্রতি দিন তৈরি হয় ১৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য। তার মাত্র ২০ শতাংশ নষ্ট করে ফেলা হয়। ওই ‘অক্ষয়’ প্লাস্টিককে রাস্তা তৈরিতে কাজে লাগাতে ২০১৬ থেকে সমস্ত রাজ্যকে অনুরোধ জানাচ্ছে কেন্দ্র। সেই আর্জি মেনে দিল্লির সড়ক গবেষণা কেন্দ্রের নজরদারিতে পরের বছর পাঁচ হাজার টন প্লাস্টিক ব্যবহার করে এক হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করেছে মহারাষ্ট্র। ধীরে ধীরে কেরল, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ ওই পথে হাঁটা শুরু করে।
এ রাজ্যেও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, বিস্কুট ও চিপসের মোড়কে শহরের অধিকাংশ নর্দমা ভরে গিয়েছে। তার জেরে অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হচ্ছে বহু এলাকা। দিনের পর দিন প্লাস্টিক খেয়ে মৃত্যু হয়েছে গবাদি পশুর, এমন ঘটনাও ঘটেছে। বারবার সচেতন করেও কমানো যায়নি প্লাস্টিকের ব্যবহার। কিছু পুরসভা নিজেদের এলাকায় ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করলেও প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন রোধে রাশ টানা যায়নি। পরিবেশ দূষণ কমাতে এ বার সেই প্লাস্টিকই কাজে লাগাতে চাইছে রাজ্য।